যুবলীগ নেতাকে খুঁজতে ভবন ঘেরাও ফোনে বললেন ‘আমি দেশে নেই’
রাজশাহী ব্যুরো
প্রকাশ: ০৩ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
রাজশাহী নগরীর ভদ্রার লেকসংলগ্ন পারিজাত আবাসিক এলাকার সানভিউ অ্যাপার্টমেন্ট নামের একটি বহুতল আবাসিক ভবনে একজন যুবলীগ নেতা অবস্থান করছেন এমন খবর পেয়ে ঘেরাও করেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। বুধবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত তারা ভবনটি ঘেরাও করে রাখেন। ভবনকে ঘিরে চলে দফায় দফায় বিক্ষোভ। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে ভবনটিতে ব্যাপক তল্লাশি করেন। তবে ওই যুবলীগ নেতাকে পাওয়া যায়নি। ভবন তল্লাশি শেষে বেরিয়ে আসার সময় তল্লাশির নেতৃত্ব দেওয়া বিএনপি নেতার ফোনে কল দিয়ে যুবলীগ নেতা জানিয়ে দেন তিনি ওই ভবনে নেই। এমনকি তিনি দেশের ভেতরেও নেই। শেষে রণে ভঙ্গ দিয়ে সন্ধ্যার আগে বিএনপি নেতাকর্মীরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। ভবন ঘেরাও ও তল্লাশির সময় ভবনের বাসিন্দাদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
যে যুবলীগ নেতার সানভিউ ভবনে অবস্থানের খবরকে ঘিরে দিনভর এ উত্তেজনা চলে তার নাম তৌরিদ আল মাসুদ রনি। তিনি রাজশাহী মহানগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক। রনি একজন বড় মাপের ঠিকাদার। তার প্রতিষ্ঠানের নাম রিথিন এন্টারপ্রাইজ। রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের অতি ঘনিষ্ঠ। রাজশাহী সিটি করপোরেশনসহ আওয়ামী লীগের শেষ ১০ বছরে রাজশাহীর বিভিন্ন সেক্টরে যত উন্নয়ন কাজের টেন্ডার হয়েছে তার বেশিরভাগই নিয়ন্ত্রণ করেন যুবলীগ নেতা রনি। রাজশাহীতে এমন কথা বহুল প্রচলিত যে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন কর্মসূচির বেশিরভাগ খরচ তিনিই নির্বাহ করতেন।
পুলিশ ও এলাকাবাসী জানান, বুধবার সকাল থেকেই বিএনপি নেতাকর্মীরা জড়ো হতে থাকেন ভদ্রা লেক পাড়ের পার্কসংলগ্ন পারিজাত আবাসিক এলাকার সানভিউ ভবনের সামনে। ওই ভবনের একটি ফ্ল্যাটে যুবলীগ নেতা রনি মঙ্গলবার রাতে গোপনে উঠেছেন বলে তারা খবর পেয়েছেন। এ সময় রনিকে গ্রেফতারের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেন তারা। বুধবার বিকালের দিকে বিএনপি নেতাকর্মীরা ভবনের প্রধান গেট ভেঙে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করেন। খবর পেয়ে বোয়ালিয়া থানা ও মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের দুটি দল ভবনের সামনে আসেন। তারা বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেওয়া কয়েকজন বিএনপি নেতাকে সঙ্গে নিয়ে ভবনের ভেতরে প্রবেশ করেন। কয়েক ঘণ্টাব্যাপী বিভিন্ন ফ্ল্যাটে চলে তল্লাশি। তল্লাশি শেষে নেমে আসার সময় হঠাৎ এক বিএনপি নেতার মোবাইল নম্বরে কল দেন আলোচিত যুবলীগ নেতা রনি। তিনি বিএনপির ওই নেতাকে জানান তিনি ভবনের কোথাও নেই বা ছিলেন না। তিনি দেশের বাইরে আছেন। অকারণে ভবনের বাসিন্দাদের আতঙ্কিত না করার জন্য ওই বিএনপি নেতাকে অনুরোধ করেন। সন্ধ্যার আগে পুলিশসহ বিএনপি নেতারা ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। যুবলীগ নেতা রনির বিরুদ্ধে জুলাই আন্দোলনকারীর ওপর সহিংস হামলাসহ হত্যার অভিযোগে রাজশাহীতে একডজন মামলা হয়েছে। গত বছর ৫ আগস্টের পর থেকেই রনি আত্মগোপনে রয়েছেন।
আরএমপির বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাক আহাম্মেদ জানান যুবলীগ নেতা রনি সানভিউ অ্যাপার্টমেন্টে লুকিয়ে আছেন খবর পেয়ে লোকজন ভবনটি ঘেরাও করে রেখেছিলেন। পুলিশ তল্লাশি করে তার খোঁজ পায়নি। তবে ভবনের বাসিন্দাদের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
