Logo
Logo
×

দ্বিতীয় সংস্করণ

আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানো

সাবেক এমপি সাইফুলসহ ৮জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ০৩ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পরও পুলিশ নিরীহ আন্দোলনকারীদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালাতে থাকে। ওইদিন বেলা ৩টার দিকে ঢাকার নিকটবর্তী আশুলিয়া থানার সামনে পুলিশের গুলিতে ৫ জন নিহত ও একজন গুরুতর আহত হন। একজনকে জীবিত ও পাঁচজনকে মৃত অবস্থায় প্রথমে একটি ভ্যানে তোলা হয়। সেখান থেকে পুলিশের একটি গাড়িতে তোলা হয়। সে গাড়িতেই জীবিত একজনসহ ৬ জনের নিথর দেহে পেট্রোলজাতীয় দাহ্য পদার্থ দিয়ে পুড়িয়ে দেয় পুলিশ। আলামত গায়েব করতে পুলিশ সেদিন এমন নিষ্ঠুর বর্বরতা চালায়। পুলিশ যে আন্দোলনকারীদের লাশ পুড়িয়ে ফেলে তারা হলেন-সাজ্জাদ হোসেন (সজল), আস সাবুর, তানজীল মাহমুদ সুজয়, বায়েজিদ বুসতামি ও আবুল হোসেন, একজনের পরিচয় পাওয়া যায়নি।

বুধবার ওই ঘটনায় দায়ের করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। একই সঙ্গে পলাতক আসামি সাবেক সংসদ-সদস্য সাইফুল ইসলামসহ এ মামলার ৮ আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারিরও আদেশ দেন আদালত। আদেশে তাদের গ্রেফতার করে আগামী ১৩ জুলাই ট্রাইব্যুনালে হাজির করতে বলা হয়েছে। বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ নির্দেশ দেন। ট্রাইব্যুনালের দুই সদস্য হলেন-বিচারপতি মো. মঞ্জুরুল বাছিদ ও বিচারপতি নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর। আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নেওয়ার বিষয়ে ট্রাইব্যুনালে শুনানি করেন প্রসিকিউটর মো. মিজানুল ইসলাম ও গাজী মনোয়ার হোসেন তামিম।

ঢাকা-১৯ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ সাইফুল ইসলামসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে গত ১৯ জুন চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দেয় ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। ২৪ জুন প্রতিবেদন দাখিলের তথ্য ট্রাইব্যুনালকে জানিয়ে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিলের জন্য সময় চায় প্রসিকিউশন। আদালত ৭ দিন সময় দেন। সেই ধারাবাহিকতায় বুধবার সকালে ১৭৩ পৃষ্ঠার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ ট্রাইব্যুনালে দাখিল করে প্রসিকিউশন।

এ মামলার ১৬ জন আসামির মধ্যে ট্রাইব্যুনালে ১১ জনের নাম প্রকাশ করা হয়। এই আসামিরা হলেন-সাবেক সংসদ-সদস্য মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, সাভার সার্কেলের সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শহিদুল ইসলাম, ঢাকা জেলার সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহিল কাফী, আশুলিয়া থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এএফএম সায়েদ (রনি), ঢাকা জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) উত্তরের সাবেক পরিদর্শক মো. আরাফাত হোসেন, আশুলিয়া থানার সাবেক উপপরিদর্শক আবদুল মালেক, সাবেক উপপরিদর্শক আরাফাত উদ্দীন, সাবেক উপপরিদর্শক শেখ আবজালুল হক, সাবেক উপপরিদর্শক বিশ্বজিৎ সাহা, সাবেক উপপরিদর্শক কামরুল হাসান ও সাবেক কনস্টেবল মুকুল চোকদার। এই ১১ জনের মধ্যে ৮ জনকে গ্রেফতার করে কারাগারে রাখা হয়েছে। তাদের মধ্যে ৭ জনকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।

প্রসিকিউশনের একটি সূত্র জানায়, ৫ আগস্ট সকাল ৯টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত পুলিশ, সাইফুল ইসলাম ও তার ক্যাডার বাহিনী ছাত্রলীগ-যুবলীগের গুলিতে আশুলিয়ায় নিহত হন অন্তত ৩১ জন। পরদিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরও ১৫ জন মারা যান। এছাড়া গুলিবিদ্ধ হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন দেড় হাজারের বেশি আন্দোলনকারী। যাদের অনেকেই পঙ্গু হয়ে গেছেন। সাভার ও আশুলিয়ায় ১৮ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে মারা যান অন্তত ৭৫ জন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লাশ পোড়ানোর মর্মান্তিক, হৃদয়বিদারক ও লোমহর্ষক ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়লে মানুষ পুলিশের নিষ্ঠুরতার এ ঘটনা জানতে পারে। ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি ছিল ১ মিনিট ১৪ সেকেন্ডের।

ভিডিওতে দেখা যায়, গুলিবিদ্ধ হয়ে পড়ে থাকাদের দুজন পুলিশ সদস্যের একজন হাত এবং একজন পা ধরে ভ্যানে একটি লাশ নিক্ষেপ করছেন। সর্বশেষ লাশটি তুলে একটি ব্যানার দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। শেষে পুলিশ সদস্যদের উপস্থিতি মেলে। ভিডিওর ১ মিনিট ৬ সেকেন্ডে একটি পোস্টার থেকে স্থানীয় আওয়ামী লীগের ধামসোনা ইউনিয়ন সভাপতি প্রার্থী ও ৭নং ওয়ার্ডের মেম্বার প্রার্থী আবুল হোসেনের বিষয়টি জানা যায়। সে পোস্টার দেখে তদন্ত সংস্থা নিশ্চিত হয়, ভিডিওটির ঘটনাস্থল আশুলিয়া থানার আশপাশে। ভিডিও তথ্য অনুযায়ী, পুলিশ লাশগুলো তাদের থানার সামনে নিয়ে যায়। সেখানে একটি পুলিশভ্যানে লাশগুলো রেখে তাতে পেট্রোল ঢেলে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম