Logo
Logo
×

দ্বিতীয় সংস্করণ

স্ত্রীর কিডনিতে জীবন পেয়ে জড়াল পরকীয়ায়

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন, সাভার

প্রকাশ: ০৪ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

কিডনি দিয়ে স্বামীর জীবন বাঁচিয়েছিলেন স্ত্রী। সেই স্বামী সুস্থ হয়েই পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন। শুধু তাই নয়, স্ত্রীকে মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে পরকীয়া প্রেমিকার সঙ্গে বসবাস শুরু করেন। এ ঘটনায় স্বামী মোহাম্মদ তারেকের বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনের মামলা করেছেন স্ত্রী উম্মে সাহেদীনা টুনি। ঘটনাটি ঘটেছে ঢাকার সাভার সদর ইউনিয়নের ১নং কলমা এলাকায়। তারেককে গ্রেফতার করা হলেও বর্তমানে তিনি জামিনে আছেন।

২০০৬ সালে পারিবারিকভাবে তারেক ও টুনির বিয়ে হয়। এক বছর পর তাদের একটি পুত্রসন্তান হয়, নাম আজমাইন দিব্য। ২০০৮ সালের মাঝামাঝি তারেক অসুস্থ হন। জানা যায় তার দুটি কিডনিই প্রায় অচল। চিকিৎসকরা দ্রুত ডায়ালাইসিস শুরু করার পরামর্শ দেন। উন্নত চিকিৎসার জন্য টুনি স্বামীকে ভারতে নিয়ে যান। কয়েক বছর পর চিকিৎসকরা জানান, তারেকের কিডনি প্রতিস্থাপন করতে হবে। তখন টুনি নিজের একটি কিডনি স্বামীকে দান করেন।

কিডনি প্রতিস্থাপনের পর তারেকের আচরণ বদলাতে থাকে দিন দিন। একপর্যায়ে তারেক অন্য নারীর সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন এবং স্ত্রীকে মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দেন।

তারেকের চিকিৎসার খরচ জোগাতে টুনি নিজের বাড়িতে একটি বিউটি পার্লার খোলেন এবং বুটিকসের কাজ শুরু করেন। দিনরাত পরিশ্রম করে মাসে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা উপার্জন করতেন। আয়ের বেশির ভাগ অসুস্থ স্বামীর চিকিৎসায় ব্যয় হতো। নিজের জমানো টাকা ও স্বর্ণালংকার বিক্রি করে স্বামীর চিকিৎসা চালিয়ে যান। চিকিৎসকদের পরামর্শে প্রতি বছর তিনবার তারেককে ভারতে নিয়ে যেতে হতো। এজন্য দুই থেকে তিন লাখ টাকা খরচ হতো।

এদিকে, অসুস্থ থাকাকালীন তারেক কোনো কাজ করতে পারতেন না। একসময় তার পরিবারও তার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। ২০১৯ সালের ২৬ অক্টোবর ভারতের দিল্লির অ্যাপলো হাসপাতালের চিকিৎসক কৈলাস নাথ সিংয়ের তত্ত্বাবধানে টুনি ও তারেকের কিডনি প্রতিস্থাপন সম্পন্ন হয়।

টুনি জানান, কিডনি দেওয়ার পর তার শারীরিক অবস্থা কিছুটা খারাপ অনুভব হচ্ছে। অভিযোগ করে টুনি বলেন, আইসিইউ থেকে কেবিনে আসার পরই তিনি তারেকের ভিন্ন রূপ দেখতে পান। টুনির এক খালা অপারেশনের আগে টাকা পাঠাতে দেরি করেছিলেন, এই অজুহাতে তারেক তার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন।

শ্বশুরবাড়ি থেকে টাকা নিয়ে আসতে চাপ দিনে তারেক। টুনি আরও জানান, তারেক তাহমিনা নামের এক ডিভোর্সি নারীর সঙ্গে পরকীয়ায় লিপ্ত ছিলেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তারেক নির্যাতনের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেন এবং টুনিকে ডিভোর্স দেওয়ার জন্য চাপ দেন।

নির্যাতন সইতে না পেরে টুনি চলতি বছরের ২ ফেব্রুয়ারি সাভার মডেল থানায় অভিযোগ করেন। পরে তারেক মুচলেকা দিয়ে সেই অভিযোগ তুলে নেন। এরপর নির্যাতনের মাত্রা আরও বেড়ে যাওয়ায় টুনি বাবার বাড়িতে আশ্রয় নেন এবং ২২ এপ্রিল তারেকের নামে আদালতে যৌতুক ও নারী নির্যাতনের মামলা করেন।

টুনির মা জানান, আমরা আদালতের কাছে তারেকের কঠিন শাস্তির দাবি জানাই। যাতে আর কোনো মেয়ের জীবন এভাবে ধ্বংস না হয়। জামিনে মুক্ত হওয়ার পর থেকে তারেক পলাতক রয়েছে। তাই তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তারেকের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে এ বিষয়ে কেউ কথা বলতে রাজি হননি।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম