জুলাই আহতদের শরীরের বুলেট সরানো সম্ভব নয়
মতবিনিময় সভায় ডা. সায়েদুর রহমান
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৮ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
জুলাই অভ্যুত্থানে আহতদের শরীরে এখনো যেসব বুলেট বা পিলেট রয়ে গেছে, সেগুলো সরানো সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ও চিকিৎসাবিজ্ঞানী অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান। শনিবার রাজধানীর পান্থপথে আহতদের পুনর্বাসন ও চিকিৎসা-সংক্রান্ত এক মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা জানান।
ডা. সায়েদুর রহমান বলেন, ‘আহতদের শরীরে যেসব পিলেট বা বুলেট রয়ে গেছে, সেগুলো অপসারণ করা সম্ভব নয়। অনেকের শরীরে ১০০ থেকে ২০০ পর্যন্ত পিলেট রয়েছে। এগুলো বের করতে গেলে শরীরের টিস্যুতে যতোটা ক্ষতি হবে, তার চেয়েও বেশি ক্ষতি হবে অপারেশন করার সময়। ফলে অধিকাংশ চিকিৎসকই মনে করেন, সেগুলো শরীরে রেখে দেওয়াই নিরাপদ।’
তিনি আরও বলেন, ‘দেশের চিকিৎসাব্যবস্থার সর্বোচ্চটুকু দিয়েই আহতদের সেবা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। আমরা সবদিক থেকে বিবেচনা করে চিকিৎসা দিয়েছি। এখন মূল চ্যালেঞ্জ হলো তাদের দীর্ঘমেয়াদি পুনর্বাসন নিশ্চিত করা।’
চিকিৎসকদের চেষ্টার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘যার শরীরে এগুলো পিলেট রয়ে গেছে তার শারীরিক-মানসিক কষ্ট আমরা বুঝতে পারছি। কিন্তু এটা সমাধান অযোগ্য। চিকিৎসাবিজ্ঞানে এটার এই মুহূর্তে কোনো সমাধান নাই।’ জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) বলেন, ‘জুলাইয়ে আহতদের অনেকেরই এখন আর হাসপাতালে থাকার প্রয়োজন নেই। কিন্তু নিরাপত্তাহীনতায় ভুগে অনেকেই হাসপাতাল ছাড়তে চায় না। আমরা একটা অ্যাসেসমেন্ট করেছি, কেন তারা থাকতে চাচ্ছে না। তাদের ভেতর একটা ট্রমা কাজ করছে তারা যদি হাসপাতাল থেকে চলে যায়, তাহলে তাদের আর কেউ দেখবে না। খোঁজ নেওয়ার মতো কেউ থাকবে না। আমাদের নিশ্চিত করতে হবে আহতরা বাসায় চলে গেলেও যেন সুবিধাটা পায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করেছি সরকারি-বেসরকারি চাকরির মাধ্যমে তাদের পুনর্বাসন করানোর জন্য। কিন্তু একটা কমন সমস্যা হচ্ছে বেসরকারি চাকরি কেউ করতে চায় না। আহত বা শহীদ পরিবারের প্রত্যাশা থাকে তারা সরকারি চাকরি করবে তাও উচ্চ পর্যায়ের। আমরা অনেক বেসরকারি চাকরি ম্যানেজ করেছি, অনেককে দিয়েছি। আমরা ফরম ছেড়েছি, যোগাযোগ করেছি। কিন্তু তাদের প্রথম প্রশ্ন থাকে এটা সরকারি না বেসরকারি। বেসরকারি হলে তারা আর কোনো যোগাযোগ করেন না।’
অনুষ্ঠানে জুলাই আন্দোলনে নিহত মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধর ভাই মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ বলেন, ‘জুলাইয়ে শহীদ বা আহতদের পরিবারকে কর্মসংস্থান বা উদ্যোক্তা বা আর্থিক সহযোগিতার মাধ্যমে পুনর্বাসন করা যায়। যতই আর্থিক সহায়তা করা হোক তা দিয়ে পুনর্বাসন সম্ভব নয়।’ সভায় সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ বলেন, ‘জুলাই আহতদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের ভার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ওপর দেওয়া ভুল ছিল। এটা শুধু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একার কাজ ছিল না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয়েছে এখানে তিনটা মিনিস্ট্রি সমান্তরাল কাজ করার দরকার ছিল। স্বাস্থ্য ছাড়াও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়। কারণ সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের একটা এমআইএস ছিল দেশজুড়ে। এসব মন্ত্রণালয় মিলে কাজ করলে সমন্বয় ভালো হতো।’
