ব্যাংকার্স সভা
রপ্তানির আড়ালে পাচার বন্ধে কড়া নির্দেশ
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৯ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
কর ফাঁকি দেওয়ার জন্য যারা রপ্তানির আড়ালে অর্থ পাচার করে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। যে কোনো মূল্যে আন্ডার ইনভয়েসিং এবং ওভার ইনভয়েসিং বন্ধের কড়া নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যদিও অর্থ পাচার রোধে অনেক আগেই পদক্ষেপ নিয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপরও ভবিষ্যতে যাতে এরকম ঘটনা আর না ঘটে, সে বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন গভর্নর।
মঙ্গলবার বিকালে বাংলাদেশ ব্যাংকে অনুষ্ঠিত ব্যাংকার্স সভায় এসব নির্দেশনা দেওয়া হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। এ সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিজি, ইডি ছাড়াও অধিকাংশ ব্যাংকের এমডিরা উপস্থিত ছিলেন। সভায় ব্যাংক খাত স্থিতিশীল এবং আগের তুলনায় শক্তিশালী করতে একাধিক নির্দেশনা দিয়েছেন গভর্নর।
বৈঠক শেষে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের (ইউসিবিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ মাহবুবুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, আমদানির দায় পরিশোধের পরও যেসব ব্যাংক গ্রাহকের নামে ফোর্স লোন তৈরি করছে না, তাদের সতর্ক করা হয়েছে। বলা হয়েছে, যাতে এলসি দায় পরিশোধের পর তাৎক্ষণিক গ্রাহকের নামে ফোর্স লোন সৃষ্টি করা হয়। তিনি বলেন, সঞ্চয়পত্রের পরিবর্তে সরকার ট্রেজারি বিল এবং বন্ডকে বেশি উৎসাহিত করছে। আমানতের মতো যাতে ট্রেজারি বিল বন্ডে সাধারণ মানুষ টাকা রাখতে পারে, সেই বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে ব্যাংকগুলোকে।
প্রসঙ্গত, ঝুঁকিমুক্ত বিনিয়োগ হিসাবে বিবেচিত সরকারের ঋণ নেওয়ার উপকরণ ট্রেজারি বিল ও বন্ড। এ উপকরণে বিনিয়োগ করে সঞ্চয়পত্র কিংবা ব্যাংকের চেয়ে বেশি সুদ মিলছে। এক বছর মেয়াদি ট্রেজারি বিলে সুদহার এখন ১১ দশমিক ৬০ শতাংশ। দীর্ঘমেয়াদি বন্ডে সুদহার উঠেছে ১২ দশমিক ১৭ শতাংশ। আবার ব্যাংক বা সঞ্চয়পত্রের মুনাফার মতো এ ক্ষেত্রে কোনো কর দিতে হয় না। বিনিয়োগের ঊর্ধ্বসীমা নেই। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, ডিজিটাল ব্যাংকিং গুরুত্ব দেওয়ার জন্য ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গ্রাহকরা অনলাইনে বা মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে ব্যাংকিং সেবা নিতে পারে। এ ব্যবস্থায় গ্রাহকদের ব্যাংকের শাখায় সশরীরে যেতে হয় না। ব্যাংকগুলোও ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে তাদের সেবার পরিধি বাড়াতে পারছে এবং গ্রাহকসেবা উন্নত করতে পারছে। একই সঙ্গে এলসি দায় পরিশোধের সঙ্গে সঙ্গেই গ্রাহক টাকা পরিশোধ না করলে ফোর্স লোন তৈরির কড়া নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কারণ, নন ব্যাংকিং অ্যাক্টিভিটিস এখন আর চলবে না। সভায় জুলাই যোদ্ধাদের জন্য ২৫ কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আন্দোলনে নিহতদের পরিবারকে অনুদান এবং আহতদের চিকিৎসার জন্য এ তহবিল থেকে ব্যয় করা হবে। বিশেষ এ তহবিলে বাংলাদেশ ব্যাংক নিজস্ব উৎস থেকে দেবে ১৪ কোটি টাকা। বাকি ১১টি ব্যাংক এক কোটি টাকা করে দেবে।
সভা শুরুর আগে বিভিন্ন সূচকে ভালো অবস্থানে থাকা ১১টি ব্যাংকের এমডিকে নিয়ে আলাদা বৈঠক করেন গভর্নর। সেখানে এসব ব্যাংককে ১ কোটি টাকা করে জোগান দেওয়ার আহ্বান জানালে ব্যাংকগুলো তাতে রাজি হয়। এখন নিজ পরিচালনা পর্ষদে আলোচনা করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে তহবিল হস্তান্তর করবে।
জানা যায়, কেন্দ্রীয় ব্যাংক পুরো অর্থ জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনে হস্তান্তর করবে। বিশেষ এ তহবিল গঠনের জন্য বেশ আগ থেকে দাবি জানিয়ে আসছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্মকর্তাদের একটি পক্ষ। বিভিন্ন প্রক্রিয়া শেষে তহবিল আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে।
