চাকরিজীবীদের বিদেশ ভ্রমণ ও যানবাহন ক্রয় বন্ধ
সাশ্রয়ের লক্ষ্য লাখ কোটি টাকা
বিশেষ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১০ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
নতুন অর্থবছরের (২০২৫-২৬) শুরুতেই কয়েকটি খাতের ব্যয়ের ওপর স্থগিতাদেশ দিয়ে ফের কৃচ্ছ সাধন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে অর্থ বিভাগ। এরই অংশ হিসাবে ‘থোক বরাদ্দ তহবিল’র অর্থ ব্যয়, সরকারি চাকরিজীবীদের বিদেশ ভ্রমণে নিরুৎসাহিত, মন্ত্রণালয় ও সংস্থার জন্য যানবাহন ক্রয় বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বন্ধ থাকবে নতুন স্থাপনা নির্মাণও। এছাড়া সরকারি খরচে সব ধরনের বৈদেশিক সেমিনার ও ওয়ার্কশপে অংশ নিতে বিদেশ ভ্রমণ করা যাবে না।
বুধবার এ সংক্রান্ত পরিপত্র জারি করেছে অর্থ বিভাগ। সরকারের উল্লিখিত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের মাধ্যমে প্রায় এক লাখ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে জানিয়েছে অর্থ বিভাগ।
সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান, মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন অধিদপ্তর, পরিদপ্তর, দপ্তর, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, পাবলিক সেক্টর করপোরেশন এবং রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের সংশ্লিষ্ট খাতে টাকা খরচে মিতব্যয়ী হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা মোকাবিলায় ২০২৪-২৫, ২০২৩-২৪, ২০২২-২৩ এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে সরকারি ব্যয়ে বিভিন্ন খাতে কৃচ্ছ সাধন ঘোষণা করা হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে কোনো কোনো খাতে শর্তসাপেক্ষে তা শিথিল করা হয়।
সূত্রমতে, চলতি অর্থবছরে ভূমি অধিগ্রহণ খাতে ১০ হাজার ৪৬৮ কোটি টাকার বরাদ্দ রাখা আছে। এ খাতে বরাদ্দ স্থগিত করে পরিপত্রে বলা হয়, পরিচালনা বাজেটে ভূমি অধিগ্রহণ পুরোপুরি বন্ধ থাকবে। আর উন্নয়ন খাতে ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে সব আনুষ্ঠানিকতা পালন শেষে অনুমোদন নিতে হবে অর্থ বিভাগ থেকে। এছাড়া পরিকল্পনা কমিশনের অনুকূলে ‘বিশেষ প্রয়োজনে উন্নয়ন সহায়তা’ খাতে সরকারি অংশে সংরক্ষিত টাকা অর্থ বিভাগের আগাম অনুমোদন নিয়ে ব্যয় করতে হবে।
এছাড়া পরিচালনা বাজেটের আওতায় শিক্ষা, কৃষি, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট স্থাপনা ছাড়া নতুন আবাসিক, অনাবাসিক ও অন্যান্য ভবন স্থাপনা নির্মাণ বন্ধ থাকবে। কিন্তু চলমান নির্মাণ কাজ ৫০ শতাংশের বেশি হয়ে থাকলে সে ক্ষেত্রে অর্থ বিভাগের অনুমোদন নিয়ে ব্যয় করা যাবে। ২০২৫-২৬ অর্থবছরে আবাসিক ও অনাবাসিক স্থাপনায় বরাদ্দ আছে ৬৬ হাজার ৩৯৮ কোটি টাকা। পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের আওতায় আবাসিক ও অনাবাসিক ভবন, অন্যান্য ভবন এবং স্থাপনা খাত থেকে অর্থ ব্যয় স্থগিত হওয়ায় এ অর্থ সাশ্রয় হবে।
নতুন অর্থবছরে থোক বরাদ্দ তহবিল থেকে অর্থ ব্যয় বন্ধ থাকবে। এ খাতে বরাদ্দ আছে ৬ হাজার ৯২৮ কোটি টাকা। প্রকল্পের আওতায় যানবাহন (মোটরযান, জলযান ও আকাশযান) কেনা বন্ধ থাকবে। পরিচালন বাজেটের আওতায় সরকারি অফিস-আদালতের জন্য নতুন যানবাহন কেনা বন্ধ থাকবে। তবে ১০ বছরের বেশি পুরোনো গাড়ি প্রতিস্থাপনে অর্থ বিভাগের অনুমোদন নিয়ে ব্যয় করা যাবে। সূত্রমতে, যানবাহন কেনা বাবদ চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ আছে ৬ হাজার ১৭১ কোটি। ব্যয়ের এ শর্ত মানলে পুরো অর্থ সাশ্রয় হবে।
পরিপত্রে সরকারি চাকরিজীবীদের বিদেশ ভ্রমনে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। সরকারি খরচে বিদেশে সেমিনার ও ওয়ার্কশপে অংশ নেওয়া যাবে না। এ শর্ত পালন হলে বিদেশ ভ্রমণ খাতে ২ হাজার ৫৯৯ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। চলমান বিশ্ব অর্থনীতি ও দেশের ডলার সংকটের কারণে বৈদেশিক রিজার্ভের ওপর চাপ কমানোর পরিকল্পনা করছে সরকার। এর অংশ হিসাবেই সিদ্ধান্তটি নেওয়া হয়েছে বলে নির্দেশনায় বলা হয়েছে। তবে কর্তৃপক্ষের অনুমোদন সাপেক্ষে সীমিত আকারে দুটি ক্ষেত্রে বিদেশ ভ্রমণ করা যাবে। এর একটি হচ্ছে-বৈদেশিক-সরকার, প্রতিষ্ঠান, উন্নয়ন সহযোগী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পূর্ণ অর্থায়নে পাওয়া স্কলারশিপ ও ফেলোশিপের আওতাধীন মাস্টার্স ও পিএইচডি কোর্সে অধ্যয়ন। দ্বিতীয়টি হচ্ছে-বৈদেশিক সরকার, প্রতিষ্ঠান, উন্নয়ন সহযোগীর আমন্ত্রণ ও সম্পূর্ণ অর্থায়নে আয়োজিত বিশেষায়িত পেশাগত প্রশিক্ষণ ও সেমিনারে অংশগ্রহণ।
