অর্থ আত্মসাতের মামলা
বিএসবির বাশার ১০ দিনের রিমান্ডে
লাথি, কিল ঘুসি, ডিম নিক্ষেপ
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৬ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
গুলশান থানায় হওয়া অর্থ পাচার মামলায় বিএসবি গ্লোবাল নেটওয়ার্কের চেয়ারম্যান খায়রুল বাশারের ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। মঙ্গলবার শুনানি শেষে ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সানাউল্লাহ রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর করেন। রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডি পুলিশের এসআই খালিদ সাইফুল্লাহ।
দুপুর ১টার দিকে খায়রুল বাশারকে আদালতে হাজির করা হয়। তাকে ঢাকার সিএমএম আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়। এর আগেই তার কাছে প্রতারিত শতাধিক শিক্ষার্থী, তাদের অভিভাবকরা আদালতে হাজির হন। বাশারের বিচার দাবিতে তারা বিভিন্ন স্লোগান দেন। বেলা ৩টা ২০ মিনিটের দিকে বাশারকে হাজতখানা থেকে এজলাসে তোলার জন্য বের করা হয়। এ সময় তার হাতে হাতকড়া, বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট, মাথায় হেলমেট ছিল। সিএমএম আদালতের গেটে পৌঁছানোমাত্র তার ওপর ডিম নিক্ষেপ করা হয়। পরে তাকে দ্রুততার সঙ্গে আদালতে নেওয়া হয়। নেওয়ার সময় সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে থাকা ভুক্তভোগীরা তাকে কিল-ঘুসি, লাথি মারেন। আদালতে ঢোকার সময়ও তার ওপর হামলা চালানো হয়। গালাগাল করা হয়। এ সময় আইনজীবী, ভুক্তভোগীদের উপস্থিতিতে আদালত কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে যায়। দেখা যায়, কিছুটা উচ্ছৃঙ্খলতাও। আদালতের হস্তক্ষেপে পরিবেশ কিছুটা নীরব হয়। পরে রিমান্ড শুনানি শুরু হয়।
বাদীপক্ষে অ্যাডভোকেট জামাল উদ্দিন খন্দকার ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুরের পক্ষে শুনানি করেন। তিনি বলেন, বাশার ক্যামব্রিয়ান স্কুল অ্যান্ড কলেজের চেয়ারম্যান। লন্ডন, আমেরিকা, কানাডাসহ ইউরোপে পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। ক্যামব্রিয়ানের অনেক শিক্ষার্থীর জীবন শেষ। বর্তমান যুগের নমরুদ সে। ৫ কোটি টাকা খরচ করে বাশার বাহিনী গঠন করেছে। যারা টাকার জন্য যেত তাদের ওপর নির্যাতন চালাত। বাশারের কারণে অনেক স্টুডেন্টের শিক্ষা জীবন শেষ হয়ে গেছে। অভিভাবকরা পথে পথে ঘুরছেন দেউলিয়া হয়ে। তার কারণে বাবা ছেলেকে হারিয়েছে, আবার ছেলে বাবাকে হারিয়েছে। এখন সময় এসেছে, তাকে ধরতে পেরেছি। ন্যায়বিচারের স্বার্থে তার ১০ দিন না, সর্বোচ্চ রিমান্ড প্রার্থনা করছি। যেন এটা নজির হয়ে থাকে।
রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ শামছুদ্দোহা সুমনও রিমান্ড মঞ্জুরের পক্ষে শুনানি করেন। এরপর বিচারক বাশারের কাছে কিছু বিষয়ে জানতে চান।
বিচারক তাকে প্রশ্ন করেন, এই কাজগুলো (শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা আত্মসাৎ) কেন করলেন? তখন তিনি নিশ্চুপ ছিলেন। ফের বিচারক বলেন, কোন কারণে তাদের বিদেশ পাঠাতে ব্যর্থ হন বা অপরাগ হন, তাহলে কেন টাকা ফেরত দেননি? তখনো তিনি কোনো কিছুর উত্তর দেননি। এরপর বিচারক বলেন, আপনার বিরুদ্ধে কতটা মামলা হয়েছে জানেন? তখন বলেন, আনুমানিক ৭০টা। তখন বিচারক বলেন, যত মামলা হয়েছে, মোকাবিলা করতে গেলে তো সারা জীবন কারাগারে কেটে যাবে। এরপর বিচারক জিজ্ঞাসা করেন, টাকাগুলো যে আত্মসাৎ করলেন আপনার মানবিক সত্তা জাগ্রত হয়নি? কয়টা বিয়ে করেছেন। উত্তরে তিনি জানান, দুইটা। তখন আরেক প্রশ্ন করেন, আপনার সন্তান কজন? তখন তিনি বলেন, ছয়জন। বিচারক বলেন, টাকা নিয়ে এসব শিক্ষার্থীদের জীবন কেন হুমকির মুখে ফেলে দিলেন। একবারও কি আপনার সন্তানদের কথা মনে পড়েনি?
পরে বাশারের আইনজীবী কাজী আনিসুর রহমান রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন শুনানি করতে চান। তখন আদালতে উপস্থিত কয়েকজন ভুক্তভোগী বলতে থাকেন, আপনার লজ্জা নাই, নির্লজ্জ। পরে তিনি আর শুনানি করেননি। এরপর আদালত তার ১০ দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন। রিমান্ড মঞ্জুরের পর আদালত থেকে নামানোর সময় সেখানেই একজন তাকে লাথি মারেন। আদালত থেকে নিচে নিয়ে আসলে আবারও তার ওপর ডিম নিক্ষেপ করা হয়। পরে তাকে দ্রুততার সঙ্গে হাজতখানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
এর আগে সোমবার দুপুর ১টার দিকে বাশারকে ঢাকার ধানমন্ডি থেকে গ্রেফতার করে সিআইডি পুলিশ।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, আসামি বাশার, তার স্ত্রী খন্দকার সেলিমা রওশন ও ছেলে আরশ ইবনে বাশার চটকদার বিজ্ঞাপনের ফাঁদে ফেলে সাধারণ ছাত্রছাত্রীর কাছ থেকে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন। উচ্চশিক্ষার জন্য ১৪১ শিক্ষার্থীকে বিদেশে পাঠানোর কথা বলে তারা ১৮ কোটি ২৯ লাখ ৫৭ হাজার ৬৮০ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এ ঘটনায় ৪ মে সিআইডির উপপরিদর্শক (এসআই) রুহুল আমিন বাদী হয়ে মামলা করেন।
