Logo
Logo
×

দ্বিতীয় সংস্করণ

রয়টার্সের প্রতিবেদন

ন্যাটোতে যোগ না দেওয়াসহ ইউক্রেনকে তিন শর্ত ট্রাম্পের

Icon

যুগান্তর ডেস্ক

প্রকাশ: ২৩ আগস্ট ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ন্যাটোতে যোগ না দেওয়াসহ ইউক্রেনকে তিন শর্ত ট্রাম্পের

ইউক্রেনে রাশিয়ার অভিযান বন্ধে তিনটি শর্ত দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। শর্তগুলোর মধ্যে প্রথমেই রয়েছে, ইউক্রেনকে পুরো দনবাস অঞ্চল রাশিয়ার হাতে তুলে দিতে হবে। এ ছাড়া পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোতে যোগ দিতে পারবে না ইউক্রেন। পাশাপাশি যুদ্ধপরবর্তী ইউক্রেনে পশ্চিমা সেনাদের মোতায়েন করা যাবে না। ক্রেমলিনের শীর্ষ পর্যায়ের সিদ্ধান্তের বিষয়ে জানাশোনা আছে, এমন তিনটি সূত্র উল্লেখ করে শুক্রবার রয়টার্স এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।

নাম পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে সূত্র জানিয়েছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে সমঝোতা কেমন হতে পারে, তা নিয়ে আলাস্কা বৈঠকে আলাপ করেছিলেন দুই নেতা। ওই বৈঠকে পুতিন কী প্রস্তাব দিয়েছিলেন, সে সম্পর্কে রাশিয়ান সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, ২০২৪ সালের জুনে ইউক্রেনের ভূখণ্ড নিয়ে পুতিন যে দাবি করেছিলেন, তাতে এখন কিছুটা ছাড় দিয়েছেন। তখন প্রেসিডেন্টের দাবি ছিল, ইউক্রেনের চার প্রদেশের পুরোটাই রাশিয়ার হাতে তুলে দিতে হবে। এর মধ্যে পূর্ব ইউক্রেনের দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক প্রদেশ ছিল। এই দুই প্রদেশ নিয়ে দনবাস গঠিত। বাকি দুটি প্রদেশ হলো দক্ষিণ ইউক্রেনের খেরসন ও জাপোরিঝঝিয়া। তখন এ দাবি প্রত্যাখ্যান করেছিল কিয়েভ।

তবে এখন পুতিন চান, শান্তিচুক্তির অংশ হিসেবে দনবাসে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে থাকা এলাকাগুলো রাশিয়ার হাতে তুলে দিতে হবে ইউক্রেনকে। এর বিনিময়ে খেরসন ও জাপোরিঝঝিয়ায় সম্মুখসারি বরাবর যুদ্ধ বন্ধ করবে রুশ বাহিনী। এ ছাড়া ইউক্রেনের খারকিভ, সুমি ও নিপ্রোপেত্রোভস্ক অঞ্চলে নিজেদের দখলে থাকা ছোট ছোট এলাকাগুলো ছেড়ে দেবে মস্কো।

সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, ভূখণ্ড হাতবদলে শর্তের পাশাপাশি পুতিন চান, শান্তিচুক্তির অংশ হিসেবে ইউক্রেনকে ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার আশা ত্যাগ করতে হবে। এ ছাড়া ন্যাটো যেন তাদের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী পূর্বদিকে আর সম্প্রসারণ না করে। এ দুই দাবিই যুদ্ধ শুরুর বহু আগে থেকে করে আসছিলেন পুতিন। রুশ প্রেসিডেন্ট আরও চান, ইউক্রেন বাহিনীর ওপর যেন সীমাবদ্ধতা আরোপ করা হয় এবং যুদ্ধ শেষে দেশে শান্তিরক্ষী বাহিনীর অংশ হিসেবে যেন কোনো পশ্চিমা সেনা মোতায়েন না করা হয়।

পুতিনের এসব শর্তের বিষয়ে তাৎক্ষিণভাবে কোনো মন্তব্য করেনি ইউক্রেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তবে প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বরাবরই বলে এসেছেন, আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ইউক্রেনের কোনো ভূখণ্ড থেকে সেনা প্রত্যাহার করা হবে না। গত বৃহস্পতিবার কিয়েভে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘পূর্বাঞ্চল থেকে যদি সাধারণভাবে সৈন্য সরিয়ে নেওয়ার কথা বলা হয়, তাহলে তা আমরা করব না। এটি আমাদের দেশের টিকে থাকার বিষয়। এর সঙ্গে সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিরক্ষার বিষয় জড়িত।’

অপর দিকে ন্যাটোতে যোগদানকে নিজেদের জন্য সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য নিরাপত্তা নিশ্চয়তা হিসেবে দেখে কিয়েভ। ন্যাটো নিয়ে পুতিনের শর্তের বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি হোয়াইট হাউজ। ন্যাটো থেকেও কোনো প্রতিক্রিয়া আসেনি। তবে সম্প্রতি হোয়াইট হাউজ সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছিল, ইউক্রেন ন্যাটোতে যোগ দিতে পারবে না। কিন্তু দেশটির নিরাপত্তার জন্য ন্যাটোর বিধানের ৫ নম্বর অনুচ্ছেদের মতো ভাষা ব্যবহার করা যাবে, এমন শর্তে রাজি হয়েছেন পুতিন। অনুচ্ছেদ-৫-এ বলা হয়েছে, ন্যাটোর কোনো সদস্য আক্রান্ত হলে অন্য সদস্যরা এগিয়ে আসতে পারবে।

ইউক্রেনকে দেওয়া ভূমি ছাড়ের প্রস্তাবকে পুতিনের পাতা ফাঁদ হিসাবেই দেখছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) শীর্ষ কূটনীতিক কায়া কাল্লাস। বিবিসি টুডে প্রোগ্রামে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কাল্লাস বলেছেন, রাশিয়াকে ইউক্রেনের ভূখণ্ড ধরে রাখতে দেওয়া হলো ‘একটি ফাঁদ’। পুতিন আমাদেরকে এই ফাঁদে ফেলতে চান।

হোয়াইট হাউজে ইউক্রেন এবং ইইউ নেতাদের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বৈঠকের পর প্রথম বিবিসি টুডে প্রোগ্রামে তিনি এই সাক্ষাৎকার দেন। তিনি বলেন, রাশিয়ার নেতা তার সেনাবাহিনীর আগ্রাসন বন্ধের জন্য ইউক্রেনের কাছ থেকে ছাড় চাইছেন। তার দাবি মেনে নেওয়া হলে তা হবে এমন একটি দেশকে পুরস্কৃত করা, যারা লড়াই শুরু করেছে।

সাম্প্রতিক আলোচনার কথা উল্লেখ করে কাল্লাস বলেন, গোটা আলোচনাটাই হয়েছে ইউক্রেনের কী ছাড় দেওয়া উচিত এবং তারা কী ছাড় দিতে ইচ্ছুক তা নিয়ে। যেখানে আমরা ভুলেই গেছি রাশিয়া এখন পর্যন্ত একটুও ছাড় দেয়নি। অথচ এখানে আগ্রাসন চালানো দেশ তারাই। তারা আরেক দেশে নৃসংশ হামলা চালাচ্ছে এবং মানুষ মারছে।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম