|
ফলো করুন |
|
|---|---|
সকালটা আজ অস্বাভাবিকভাবে গরম। জানালা খুলতেই আবির টের পেল, বাইরের বাতাসে যেন আগুন লেগে আছে। সূর্যটা মাথার ওপর উঠে বসেছে, অথচ এখনো সকাল আটটা। ঘরের ছাদে হাত রাখতেই চুলকানোর মতো জ্বলুনি লাগে। এই শহরে এমন তাপমাত্রা তো আগে কখনো দেখা যায়নি। আবির পরিবেশবিদ্যার ছাত্র, ঢাকার এক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। তার আগ্রহ প্রকৃতির দিকে, গাছপালা আর মেঘের হঠাৎ হঠাৎ খেলা দেখতে তার ভালো লাগে। ছোটবেলায় সে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পাড়ার বটগাছের নিচে বসে থাকত, বন্ধুদের সঙ্গে খেলত, কবিতা লিখত। কিন্তু সেই বটগাছও আর নেই। দুই বছর আগে সেটাকে কেটে ফেলা হয়েছে, রাস্তা চওড়া করার নামে। বাবা কাজে যাবেন বলে বেরোচ্ছিলেন। আবির তাকে বলল, ‘বাবা, একটা ছাতা নিয়ে যান। বাইরে রোদটা খুবই তীব্র।’ বাবা হেসে বললেন, ‘ছাতা দিয়ে কী হবে? চারপাশে শুধু কংক্রিট আর ধোঁয়া।’
সেই কথাটা যেন কোথাও গিয়ে জমে রইল আবিরের মনে। সে কিছুক্ষণ চুপচাপ জানালার বাইরে তাকিয়ে রইল। রাস্তায় কোথাও একটা গাছের ছায়াও নেই। শুধু ইট, পাথর, গ্যাসের গন্ধ, আর মাথা ভাঙা রোদ। বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছে আবির জানতে পারল, আজকের ক্লাসে একজন আন্তর্জাতিক অতিথি আসছেন-ড. লিওন হার্টফোর্ড, যিনি জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈশ্বিক উষ্ণতা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন। ক্লাসরুম ভর্তি শিক্ষার্থী, সবাই উৎসাহ নিয়ে অপেক্ষা করছে। ড. লিওন এলেন। চমকে দেওয়া বিষয় হলো-তিনি ভাঙা ভাঙা বাংলায় বক্তব্য শুরু করলেন। তিনি বললেন, ‘আপনারা জানেন, গত একশ বছরে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা প্রায় ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে। শুনতে ছোট মনে হলেও এর প্রভাব অনেক বড়। বরফ গলছে, সমুদ্রের পানি বাড়ছে, মরুভূমি ছড়িয়ে পড়ছে, পৃথিবীর জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়ছে। একটি সময় আসবে, যখন ছায়া খুঁজেও পাওয়া যাবে না। ছায়া অর্থ গাছ, ছায়া অর্থ শীতলতা, ছায়া অর্থ বেঁচে থাকার নিরাপদ জায়গা।’
একটি বাক্য বিশেষভাবে কানে বাজল আবিরের-ছায়া খুঁজেও পাওয়া যাবে না। ড. লিওন এক ভিন্নধর্মী উদাহরণ দিলেন, ‘ভাবুন তো, এমন একটা দেশ যেখানে কোনো ছায়া নেই, মানুষ চোখ সরু করে হাঁটে, শিশুরা মাটিতে বসতে পারে না, নদী শুকিয়ে গেছে, আর বাতাসে শুধু ধোঁয়া। এটা কোনো কল্পনা নয়, আমরা সেই পথেই হেঁটে চলেছি। আমরা একটি ছায়াবিহীন দেশের দিকে এগোচ্ছি!’ কী ভয়ংকর! আবির আর ভাবতে পারে না। সত্যিই কি সেই সময়টা ধেয়ে আসছে! দুপচাঁচিয়া, বগুড়া
