Logo
Logo
×

স্বপ্নের আবাসন

বেসরকারি খাতের আবাসন এখন হাতের নাগালে

Icon

বিশেষ প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বেসরকারি খাতের আবাসন এখন হাতের নাগালে

বাসযোগ্য আবাসন মৌলিক অধিকারের মধ্যে অন্যতম। গ্রামগঞ্জ কিংবা জেলা ও মহানগর পর্যায়ে এই আবাসন কিছুটা সহজ হলেও রাজধানীতে তার নিশ্চয়তা অনেক কঠিন। আর পরিবেশবান্ধব ও সাশ্রয়ী মূল্যে আবাসন আরও দুষ্কর ব্যাপার। সরকারি পর্যায়ে স্বল্পপরিসরে আবাসনের আয়োজন থাকলেও কোটাভিত্তিক বরাদ্দের কারণে সাধারণ মানুষ তা পান না। তাছাড়া সেসব ফ্ল্যাটের দাম অনেক বেশি। ভিন্নতা রয়েছে বেসরকারি খাতে। গ্রাহকের চাহিদা বিবেচনা করে ছোট, মাঝারি, বড় ও বিলাসবহুল আবাসনের আয়োজন করছেন উদ্যোক্তারা। এ আয়োজনের ফলে রাজধানী ঢাকার কোটি কোটি মানুষ সুন্দর পরিবেশে নিজেদের চাহিদামতো ফ্ল্যাট খুঁজে নিতে পারছেন।

নগরবাসীর অভিমত, ঢাকা শহর এখন শুধু একটি রাজধানী নয়; এটি দেশের কর্মসংস্থান, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও উন্নত জীবনের কেন্দ্রবিন্দু। তবে সীমিত জায়গা, যানজট, দূষণ আর ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার কারণে নগরবাসীর জন্য নিরাপদ ও মানসম্পন্ন বসতি খুঁজে পাওয়া চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যেই আশার আলো হয়ে পথ দেখাচ্ছে বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে ওঠা আধুনিক আবাসন প্রকল্পগুলো। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো গড়ে তুলছে দৃষ্টিনন্দন বহুতল ভবন। এসব ভবন বসবাস উপযোগী পরিবেশ বজায় রেখে সবকিছুর আয়োজন করছে। শহরের প্রাণকেন্দ্র, উপকণ্ঠ এবং আশপাশের এলাকায়ও নানারকম আবাসন প্রকল্প গড়ে উঠছে। নগরবাসী নিজেদের চাহিদামতো সেসব বেছে নিচ্ছেন।

বনশ্রী এলাকার বাসিন্দা আব্দুল লতিফ জানান, তার ও তার স্ত্রীর সঞ্চয় করা টাকায় এক বছর আগে একটি ফ্ল্যাট কিনেছেন। ফ্ল্যাট পছন্দ করার সময় ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ঘোরাঘুরি করেছেন তারা। তাদের পছন্দ ছিল টপ ফ্লোরের ফ্ল্যাট। অনেক খোঁজখুঁজির পর তারা সে ধরনের একটি ফ্ল্যাটও খুঁজে পেয়েছেন। সামর্থ্যরে মধ্যে হওয়ায় তারা সেটা কিনেছেন এবং সেখানে বসবাস করছেন।

মহাখালীর বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মনিরুল আলম জানান, তিনি ও তার স্ত্রী দুজনে চাকরি করেন। দুজন মিলে যে সঞ্চয় করেছেন, তা দিয়ে ২০০০ সালে একটি ফ্ল্যাট কেনার সিদ্ধান্ত নেন। সেসময় তারা ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ঘোরাঘুরি করে দেখেন, সিটির ভেতরে তারা ফ্ল্যাট কিনতে পারছেন না। পরে বসিলার ওয়াশপুরে তারা খুঁজে পেয়েছেন তাদের পছন্দের ফ্ল্যাট। ২০২৩ সাল থেকে তারা সেখানে বসবাস করছেন।

বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, ২০২২ সালে নতুনবাজার এলাকায় মাঝারি আয়তন ও দামের একটি ফ্ল্যাট খুঁজছিলেন। মাস দেড়েকের মধ্যে তিনি পেয়ে যান তার পছন্দের ফ্ল্যাট। ব্যাংক ঋণ দিয়ে তিনি সেই ফ্ল্যাট কিনে বসবাস করছেন। বেসরকারি উদ্যোগে বাস্তবায়িত প্রকল্পের ফ্ল্যাটের ভেতরে সব আয়োজন দৃষ্টিনন্দন। তিনি কয়েক বছর ধরে বসবাস করছেন স্বস্তির সঙ্গে।

আবাসন খাতের উদ্যোক্তাদের অভিমত, ঢাকায় প্রতিদিনই মানুষ বাড়ছে। কর্মসংস্থান ও শিক্ষা সুবিধার জন্য রাজধানীকে বেছে নিচ্ছে গ্রাম-শহরের মানুষ। এতে আবাসনের চাহিদা আকাশচুম্বী। অগোছাল বসতির বদলে মানুষ চাইছে নিরাপদ, সবুজ ও পরিকল্পিত আবাসন। বেসরকারি উদ্যোক্তারা গ্রাহকদের সেসব চাহিদার কথা বিবেচনা করে তেমন আবাসন সাজাচ্ছেন।

তাদের মতে, সরকারি উদ্যোগ সীমিত হলেও বেসরকারি রিয়েল এস্টেট কোম্পানিগুলো এগিয়ে এসেছে বড় পরিসরে। ধানমন্ডি, বসুন্ধরা, উত্তরা, মিরপুর থেকে শুরু করে সাভার ও কেরানীগঞ্জে গড়ে উঠছে বহুতল ভবন ও পূর্ণাঙ্গ আবাসন নগরী। নিরাপত্তা, সবুজ পরিবেশ, খেলার মাঠ, কমিউনিটি সেন্টারসহ সবকিছু একসঙ্গে মেলাচ্ছে নতুন আবাসন প্রকল্পগুলো।

স্বস্তির আবাসনের বাসিন্দাদের কয়েকজন জানান, ঢাকার প্রধান সমস্যা হলো দূষণ। নতুন আবাসনগুলোয় রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং, সোলার প্যানেল, বর্জ্য পুনর্ব্যবহার ও বৃক্ষরোপণের মতো উদ্যোগ নজর কাড়ছে। এসব পরিকল্পনা নগরজীবনে এনে দিচ্ছে স্বস্তি ও টেকসই সমাধান।

তারা বলেন, ব্যস্ত দিন শেষে প্রত্যেকেই চান শান্তির ছোঁয়া। খোলা ছাদ, বাতাস চলাচলের সুযোগ, নিরাপত্তা আর কমিউনিটি স্পেসসহ আবাসন। বেসরকারি উদ্যোগে বাস্তবায়িত প্রকল্পে সব আয়োজন থাকায় মানুষের স্বস্তি বাড়ছে। এসব প্রকল্পে বসবাস করে আধুনিক আবাসনে প্রতিবেশীর সঙ্গে পরিচয়, শিশুদের একসঙ্গে খেলা ও কমিউনিটি অনুষ্ঠান সামাজিক সম্পর্ককে করছে দৃঢ়।

ফলে নগরের ব্যস্ততায় হারিয়ে যাওয়া মিলনমেলার সংস্কৃতি আবার ফিরে আসছে। নিম্ন-আয়ের মানুষও ব্যাংক ঋণের সুবিধা নিয়ে সাধ্যের মধ্যেই ফ্ল্যাট কিনতে পারছেন।

নগর ও আবাসন বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ঢাকার ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে পরিকল্পিত আবাসনের ওপর। সঠিক নীতি, পরিবেশবান্ধব নির্মাণ ও বেসরকারি খাতের ইতিবাচক অংশগ্রহণের মাধ্যমে আগামী দিনে রাজধানী হতে পারে আরও বাসযোগ্য শহর। বর্তমানে নিবন্ধিত রিয়েল এস্টেট কোম্পানির সংখ্যা হাজারেরও বেশি। আবাসন খাতের সম্প্রসারণে দেশের জিডিপিতে অবদান রাখছে প্রায় ৮ শতাংশ।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম