অ্যাডিলেড টেস্ট
১১ দিনেই অ্যাশেজ অস্ট্রেলিয়ার
ক্রীড়া ডেস্ক
প্রকাশ: ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
কত আলোচনা, কত উত্তেজনা এই সিরিজ নিয়ে, ইংল্যান্ডের কত স্বপ্ন আর আকাশছোঁয়া প্রত্যাশা। সব কিছুর সমাপ্তি প্রথম তিন টেস্টেই। দুর্দান্ত পেশাদারত্ব ও উজ্জীবিত পারফরম্যান্সে প্রথম তিন টেস্টেই সিরিজ জিতে অ্যাশেজ ধরে রাখা নিশ্চিত করল অস্ট্রেলিয়া।
পার্থে দুদিন, ব্রিজবেনে চারদিনে জয়ের পর অ্যাডিলেডে ম্যাচ গড়ায় পঞ্চমদিনে। রোববার শেষ দিনে কিছুটা লড়াইও করে ইংল্যান্ড। কিন্তু শেষ পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়া ম্যাচ জিতে নেয় ৮২ রানে। ৪৩৫ রানের বিশাল লক্ষ্য তাড়ায় ইংল্যান্ড থামে ৩৫২ রানে। পাঁচ টেস্টের অ্যাশেজের ফয়সালা মাত্র ১১ দিনের ক্রিকেটেই! এটি যৌথভাবে দ্বিতীয় দ্রুততম সময়ে অ্যাশেজ জয়ের কীর্তি। এ নিয়ে টানা পাঁচ সিরিজ ধরে অ্যাশেজ ধরে রাখল অস্ট্রেলিয়া। এর মধ্যে তিনটি তারা জিতেছে, দুটি হয়েছে ড্র। ইংল্যান্ড সবশেষ অ্যাশেজ জিতেছে ঘরের মাঠে ২০১৫ সালে।
অ্যাডিলেড টেস্টের ভাগ্য মোটামুটি গড়া হয়েছিল আগের দিনই। মাত্র চার উইকেট হাতে নিয়ে শেষ দিন শুরু করে ইংল্যান্ড। অস্ট্রেলিয়ার জয় ছিল সময়ের ব্যাপার। কিন্তু প্রথম সেশনে ফিল্ডিংয়ের সময় চোট পেয়ে নাথান লায়নের ছিটকে পড়া, ফলো থ্রুতে পিচের বিপজ্জনক অংশে পা পড়ায় দুবার ‘ওয়ার্নিং’ পাওয়া মিচেল স্টার্ক শুধু রাউন্ড দ্য উইকেটে বোলিং করতে বাধ্য হওয়া, চোট কাটিয়ে ফেরা প্যাট কামিন্সের বোলিং সীমাবদ্ধতা ও ইংলিশদের প্রতিরোধ-সব মিলিয়ে লড়াই জমে ওঠে বেশ। অভাবনীয় কিছু অবশ্য হয়নি। স্টার্কের দারুণ বোলিংয়ের সঙ্গে মার্নাস লাবুশেনের অবিশ্বাস্য এক ক্যাচে ম্যাচ শেষ দ্বিতীয় সেশনে।
ছয় উইকেটে ২০৭ রান নিয়ে শেষ দিন শুরু করে ইংল্যান্ড। জেমি স্মিথ ও উইল জ্যাকস লড়াই চালিয়ে যান। অস্ট্রেলিয়া দ্বিতীয় নতুন বল নেওয়ার পর এই জুটি থামে ৯১ রানে। অ্যাশেজে নিজের ফিফটির পর স্টার্ককে টানা দুটি বাউন্ডারি মেরে নিজেকে সামলাতে পারেননি স্মিথ। পরের বলেই চেষ্টা করেন উড়িয়ে মারতে। মিড অনে ক্যাচ নেন কামিন্স। ইংল্যান্ডের লড়াই থামেনি এরপরও। জ্যাকসের সঙ্গে এবার প্রতিরোধ গড়ে তোলেন ব্রাইডন কার্স। চোটের কারণে লায়ন ছিটকে পড়ায় ট্রাভিস হেড, লাবুশেনের মতো অনিয়মিত বোলারদের আক্রমণে আনতে হয় অস্ট্রেলিয়াকে। হেড বোলিং করেন ১৫ ওভার।
এই জুটিও পেরিয়ে যায় ফিফটি। জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় রান নেমে আসে একশর নিচে। অভাবনীয় কিছু ইংল্যান্ড করে ফেলবে কি না, সেই আলোচনা শুরু হয়ে যায় ধারাভাষ্যকক্ষে। তখনই জাদুকরী একটি মুহূর্ত।
স্টার্কের বলে জ্যাকসের ব্যাটের কানায় ছোবল দিয়ে বল যায় পেছনে। স্লিপ থেকে বাঁ দিকে ডাইভ দিয়ে অবিশ্বাস্যভাবে বাঁ হাতে বল জমিয়ে ফেলেন লাবুশেন। জ্যাকস যেন বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না। ১৭৭ মিনিট লড়াই করে তার ইনিংস থামে ৪৭ রানে।
এরপর শুধু শেষের অপেক্ষা। স্টার্ককে উড়িয়ে ডিপ পয়েন্টে ধরা পড়েন জফরা আর্চার। জশ টাংকে ফিরিয়ে ম্যাচ শেষ করে স্কট বোল্যান্ড।
প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরি ও দ্বিতীয় ইনিংসে ৭২ রানের পাশাপাশি ম্যাচে সাতটি ডিসমিসাল করে ঘরের মাঠে ম্যান অব দ্য ম্যাচ অ্যালেক্স ক্যারি। ৩-০ হয়ে যাওয়ার পর এবার অস্ট্রেলিয়ার অভিযান ৫-০ করার। ঐতিহ্যবাহী বক্সিং ডে টেস্ট মেলবোর্নে শুরু আগামী শুক্রবার। সিরিজের বাকি দুই ম্যাচে লায়নের খেলা অনিশ্চিত।
চতুর্থ টেস্টে বিশ্রাম নিতে পারেন অধিনায়ক কামিন্সও। এদিকে ১১ দিনে সিরিজ হেরে ভীষণ হতাশ ইংল্যান্ড অধিনায়ক বেন স্টোকস, ‘যে স্বপ্ন নিয়ে আমরা এখানে এসেছিলাম, তা এখন শেষ। অবশ্যই এটা চরম হতাশার। সবাই কষ্ট পাচ্ছে। তবে আমরা এখানেই থামছি না। আরও দুটি ম্যাচ বাকি আছে।’
সংক্ষিপ্ত স্কোর
অস্ট্রেলিয়া প্রথম ইংনিস ৩৭১। ইংল্যান্ড প্রথম ইনিংস ২৮৬। অস্ট্রেলিয়া দ্বিতীয় ইনিংস ৩৪৯। ইংল্যান্ড দ্বিতীয় ইনিংস ৩৫২। (জ্যাক ক্রলি ৮৫, জেমি স্মিথ ৬০, উইল জ্যাকস ৪৭। মিচেল স্টার্ক ৩/৬২, প্যাট কামিন্স ৩/৪৮, নাথান লায়ন ৩/৭৭)। ফল : অস্ট্রেলিয়া ৮২ রানে জয়ী। ম্যান অব দ্য ম্যাচ : অ্যালেক্স ক্যারি।
