২৩-২৯ নভেম্বর জিইআরডি সপ্তাহ
গলা ও বুক জ্বালাপোড়া কেন হয় এবং প্রতিরোধে করণীয়
ডা. মো. আব্দুল হাফিজ (শাফী)
প্রকাশ: ২৯ নভেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
গলা বা বুক জ্বালাপোড়া, টক বা তিতা ঢেঁকুর, খাবার ওপরে উঠে আসা, গলায় কিছু আটকে থাকার অনুভূতি, খাবার গিলতে কষ্ট, এমনকি স্বরভাঙা-এসব উপসর্গে হরহামেশাই আমরা ভুগে থাকি। এ সমস্যা একজন মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপন ও কাজের সক্ষমতাকে ব্যাহত করে। ইএনটি চিকিৎসায় আমরা অনেক সময় গলা পরীক্ষা করে কোনো ক্ষত, প্রদাহ বা সিরিয়াস প্যাথলজি না পেলে এসব সমস্যার মূল কারণ হিসাবে জিইআরডি (Gastroesophageal Reflxu Disease-GERD) শনাক্ত করা হয়। এ বছরের থিম : ‘চলুন জিইআরডি নিয়ে কথা বলি’-যা রোগীর উপসর্গ, চিকিৎসা ও ঝুঁকি নিয়ে চিকিৎসকের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করার গুরুত্বকে আরও জোরদার করে। বিশ্বব্যাপী প্রতি ১০০ জনের প্রায় ১৫ জন জিইআরডিতে ভুগছেন। ইউরোপ ও আমেরিকায় এর প্রকোপ বেশি হলেও এশিয়ায়, বিশেষত দক্ষিণ এশিয়ায়, রোগীর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। প্রতিরোধ সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণেই অনেক রোগী জটিলতায় পড়েন এবং দীর্ঘদিন ওষুধনির্ভর থাকতে হয়।
* গলা-বুক জ্বালাপোড়া কেন হয়
‘গ্যাস্ট্রো’ বলতে পাকস্থলী আর ‘ইসোফেগাস’ বলতে খাদ্যনালিকে বোঝায়। সাধারণত খাবার খাদ্যনালি দিয়ে নিচের দিকে পাকস্থলীতে নামে। কিন্তু কোনো কারণে এ স্বাভাবিক পথ ব্যাহত হলে পাকস্থলীর অ্যাসিড খাদ্যনালির ওপরের দিকে উঠে আসে। এ অ্যাসিডই গলা ও বুক জ্বালাপোড়া, টক ঢেঁকুরসহ নানা উপসর্গ তৈরি করে।
* যাদের জিইআরডি হওয়ার ঝুঁকি বেশি
▶ অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতায় ভোগেন।
▶ ধূমপান করেন।
▶ একবারে অনেক পরিমাণে খাবার খান।
▶ খাবারের পরপরই শুয়ে পড়েন।
▶ বেশি তেলেভাজা ও মসলাযুক্ত খাবার খান।
▶ কোমল পানীয় ও অনিয়মিত কফি সেবন।
▶ গর্ভবতী নারীদের পেটে চাপ পড়ে বলে ঝুঁকি বেশি।
* বয়স্কদের ক্ষেত্রে সতর্কতা
বুক জ্বালাপোড়া সবসময় জিইআরডি নাও হতে পারে, হৃদরোগের কারণেও একই উপসর্গ হতে পারে। পার্থক্যের জন্য কিছু লক্ষণ জানা জরুরি।
▶ জিইআরডি : বুক ও গলায় জ্বালা, টক ঢেঁকুর।
▶ হৃদরোগ/হার্ট অ্যাটাক : বাম হাত/ঘাড়/চোয়ালে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, ঘাম, বমি বমি ভাব, অস্বাভাবিক ক্লান্তি, অস্থিরতা-এসব উপসর্গ থাকলে দেরি না করে দ্রুত হাসপাতালে যেতে হবে।
* প্রতিরোধে যা করবেন
▶ একবারে বেশি খাবেন না, দিনে অল্প অল্প করে ভাগ করে খাবেন।
▶ খাবার ভালো করে চিবিয়ে খান।
▶ ডিনার, শোবার অন্তত ২ ঘণ্টা আগে খাবেন।
▶ মানসিক চাপ কমান, স্ট্রেস বাড়লে অ্যাসিড নিঃসরণও বাড়ে।
▶ ঢিলেঢালা পোশাক পরুন, বিশেষত রাতে।
▶ ভরা পেটে ব্যায়াম এড়িয়ে চলুন।
▶ অ্যাসপিরিন/ব্যথানাশকসহ কিছু ওষুধ উপসর্গ বাড়াতে পারে, চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সেবন করুন।
▶ খাবার পর শোবার সময় মাথার দিক সামান্য উঁচুতে রাখুন।
▶ প্রতিদিন পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানি পান করুন।
* চিকিৎসা কখন প্রয়োজন
▶ বারবার এ সমস্যা দেখা দেয়।
▶ ২-৩ সপ্তাহের বেশি স্থায়ী হয়।
▶ স্বাভাবিক কাজ ব্যাহত করে।
তখন অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। প্রয়োজনে চিকিৎসক প্রোটন পাম্প ইনহিবিটরসহ (PPI) প্রয়োজনীয় ওষুধ দিয়ে থাকেন। অনেক ক্ষেত্রে কয়েক সপ্তাহ থেকে কয়েক মাস পর্যন্ত চিকিৎসা প্রয়োজন হতে পারে।
* নাক-কান-গলার চিকিৎসায় জিইআরডি কেন গুরুত্বপূর্ণ
জিইআরডি শুধু পেটের রোগ নয়-এটি গলা, স্বর, নাক ও কানেও উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে।
যেমন-
▶ দীর্ঘস্থায়ী স্বরভাঙা।
▶ ক্রনিক কাশি।
▶ গলাব্যথা সঙ্গে জ্বালা।
▶ গলায় কিছু আটকে থাকার অনুভূতি।
অনেক সময় ENT পরীক্ষা স্বাভাবিক হলেও জিইআরডি বা LPR-ই এসব উপসর্গের মূল কারণ হিসাবে ধরা পড়ে। অবহেলা করলে জিইআরডি জটিল অবস্থায় যেতে পারে, তবে সচেতনতা ও সঠিক চিকিৎসায় অধিকাংশই স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারেন।
জিইআরডি কোনো আতঙ্কের বিষয় নয়, আবার অবহেলারও নয়।
উপসর্গকে গুরুত্ব দিন, প্রয়োজনে চিকিৎসককে দেখুন এবং জীবনযাত্রায় ছোট পরিবর্তন আনুন।
লেখক : আবাসিক সার্জন (ইএনটি), সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
