Logo
Logo
×

সুস্থ থাকুন

ডায়াবেটিস নিয়ে ভুল ধারণা

Icon

লিনা আকতার

প্রকাশ: ২৯ নভেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ডায়াবেটিস নিয়ে ভুল ধারণা

* মোটা লোকদের ডায়াবেটিস হয়

শরীর বেশি মোটা হওয়া ডায়াবেটিসের একটি রিস্ক ফ্যাক্টর। তবে মোটা না হলেই যে ডায়াবেটিস হবে না, এমন নিশ্চয়তা নেই। শরীর মোটা না হলেও অন্য কোনো রিস্ক ফ্যাক্টর থাকলে, ডায়াবেটিস হতে পারে।

* কার্বোহাইড্রেট কি ডায়াবেটিক রোগীদের শত্রু

কার্বোহাইড্রেট মোটেই ডায়াবেটিক রোগীদের শত্রু নয়। রোগী কোন ধরনের কার্বোহাইড্রেট খান এবং কী পরিমাণ খান তা বিবেচনা করা গুরুত্বপূর্ণ। যেসব খাবারে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম এবং কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেটযুক্ত সেগুলো পরিমাণ মতো খেতে পারবেন।

* ওষুধ এবং ইনসুলিন নিলেও খাবারের নিয়ম মেনে চলতে হবে

ডায়াবেটিস ওষুধ চলছে মানেই যা খুশি তাই খাওয়া যায় বিষয়টি কিন্তু তা নয়। ওষুধ ও ইনসুলিন রক্তের চিনির মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। কিন্তু যা খুশি তাই খেলে তাতে রক্তের চিনির মাত্রা বাড়তে পারে। তাই ওষুধ ও ইনসুলিন চলাকালীন খাবারের সঠিক গাইডলাইন মেনে চলতে হবে।

* ডায়াবেটিস হলে কোনো ফলমূল খাওয়া যাবে কি

এটি নির্ভর করে ওই খাবারের গ্লাইসেমিক সূচকের ওপর। কোন খাবার কত দ্রুত রক্তে শর্করা বাড়িয়ে দিতে পারে তার পরিমাপই হলো গ্লাইসেমিক সূচক। বেশির ভাগ ফলমূলে প্রচুর আঁশ থাকায় এগুলো ধীরে ধীরে রক্তে শোষিত হয় এবং এদের গ্লাইসেমিক সূচক কম থাকে। তবে মিষ্টি ফলে শর্করা ও প্রাকৃতিক চিনির পরিমাণ বেশি থাকে টক ফলের তুলনায়। এজন্য খাদ্যতালিকায় শর্করার পরিমাণের সঙ্গে মিষ্টি ফলের সমন্বয় করে পরিমাণমতো খেতে হবে। ডায়াবেটিক রোগীদের শুধু অল্প পরিমাণ শর্করাসমৃদ্ধ খাবার খেতে হয়। যেমন-রুটি, ভাত, আলু ইত্যাদি। শুধু শর্করাসমৃদ্ধ খাবার অল্প নয়, প্রতিটি খাবারেই ডায়াবেটিক রোগীদের পরিমাণমতো খাওয়া উচিত। তাই অল্প পরিমাণে নয় অন্য খাবারের সঙ্গে শর্করার অনুপাত ঠিক রেখে খেতে হবে। কেননা, অতিরিক্ত শর্করা খেয়ে অন্য শর্করা না খেলে ওজন বাড়ার আশঙ্কা থাকে।

* বেশি বয়সিদেরই কি ডায়াবেটিস হয়

এটি ভুল ধারণা। টাইপ-টু ডায়াবেটিস কম বয়সি এমনকি শিশুদের মাঝেও দেখা দিতে পারে। এক্ষেত্রে অপুষ্টি, অটোইমিউন রোগ প্রভাবক হিসাবে কাজ করে।

* ডায়াবেটিক রোগীদের কি বিশেষ কোনো ডায়াবেটিক খাবার খেতে হবে

ডায়াবেটিক রোগীদের বিশেষ কোনো ডায়েট নেই। তবে সুষম পুষ্টিকর খাবার খেলেও পরিমাণমতো খেতে হবে, যেটি সাধারণ মানুষের জন্যও প্রযোজ্য। তবে ডায়াবেটিস কত আছে তার ওপর নির্ভর করে খাবার গ্রহণ করতে হবে। আজকাল বাজারে অনেক খাবার ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য বলে থাকেন যা একেবারে ঠিক নয়। কোনো প্যাকেটজাত খাবার সুগার ছাড়া হয় না।

* একবার ইনসুলিন ব্যবহার করলে সারা জীবনই তা দিতে হবে

বিষয়টা আসলে তা নয়। নানা কারণে ইনসুলিনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিতে পারে। আবার পরে তা পরিবর্তন করে ওষুধ খাওয়া যেতে পারে। যেমন-গর্ভবতীর ডেলিভারির পর, অস্ত্রোপচার বা ঘা শুকিয়ে যাওয়ার পর একসময় ইনসুলিন বন্ধ করে আবার ওষুধ খাওয়া যায়। তবে টাইপ-টু ডায়াবেটিস, কিডনি ও লিভারে গুরুতর সমস্যা এবং সর্বোচ্চ মাত্রায় ওষুধ ব্যবহার করেও যদি শর্করা নিয়ন্ত্রিত না হয় এসব ক্ষেত্রে সব সময়ের জন্য ইনসুলিন ব্যবহার করতে হবে।

* ডায়াবেটিক রোগীদের কৃত্রিম চিনি দীর্ঘদিন ধরে খাওয়া কি ক্ষতিকর

গর্ভাবস্থায় এসব খাওয়া নিষেধ। ঘনচিনি নামে যে চিনি পাওয়া যায় তা অন্ত্রের ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। তবে এসব চিনি দীর্ঘদিন না খাওয়াই ভালো।

* পরিবারে কারও ডায়াবেটিস না থাকলে ডায়াবেটিস হবে না

এটাও ঠিক নয়। অন্য কোনো রিস্ক ফ্যাক্টর থাকলে ডায়াবেটিস হতে পারে। যেমন-অতিরিক্ত ওজন বেশি, কোলেস্টেরল বেশি, অটোইমিউন রোগ ইত্যাদি।

* ডায়াবেটিস আক্রান্তরা কি কখনোই রক্তদান করতে পারবে না

শুধু যারা নিয়মিত ইনসুলিন নেন তারা রক্তদান করতে পারবেন না। এ ছাড়া রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকলে তাদের রক্তদানের কোনো সমস্যা নেই।

* করলার রস খেলে কি ডায়াবেটিস কমে

ডায়াবেটিক রোগীদের অনেকেই মাত্রাতিরিক্ত এ করলার রস পান করেন, যা অযৌক্তিক ও নানা শারীরিক জটিলতা তৈরি করতে পারে।

* অল্প পরিমাণে ডায়াবেটিস হলে কী হবে

অতি সামান্য পরিমাণ ডায়াবেটিস বলে কোনো কথা নেই। আপনার ডায়াবেটিস আছে অথবা নেই। এর মাঝামাঝি বলে কিছু নেই। গর্ভবতীর ডায়াবেটিস থাকলে সে মায়ের অনাগত শিশু নানারকম ঝুঁকিতে ভোগে। যেমন-গর্ভপাত, সন্তান সময়ের আগে জন্ম নেওয়া, গর্ভে হঠাৎ সন্তানের মৃত্যু, অতিরিক্ত ওজন নিয়ে জন্ম হওয়া, জন্মগত ত্রুটি ইত্যাদি। জন্মের পরপর হঠাৎ শিশুর রক্তে শর্করা কমে যেতে পারে। তবে সেই শিশু ডায়াবেটিস নিয়ে জন্ম নেবে তা ঠিক নয়। তবে পরবর্তী সময়ে বড় হওয়ার পর অন্যদের তুলনায় তার ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি একটু বেশি।

লেখক : পুষ্টিবিদ, রাইয়ান হেলথ কেয়ার হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার, দিনাজপুর

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম