দীর্ঘস্থায়ী শুকনো কাশির পাঁচ কারণ
ডা. মো. আব্দুল হাফিজ (শাফী)
প্রকাশ: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
শুকনো বা দীর্ঘদিনের কাশি এমন এক বিরক্তিকর সমস্যা, যা অনেক সময় সাধারণ সর্দিজ্বরের পরও সপ্তাহের পর সপ্তাহ, কখনো মাসের পর মাস স্থায়ী হতে পারে। ফলে দৈনন্দিন কাজে অস্বস্তি, ঘুমের ব্যাঘাত, মানসিক চাপ ও কর্মক্ষমতা হ্রাস সবই দেখা দেয়। দীর্ঘস্থায়ী কাশির পেছনে সাধারণত কিছু নির্দিষ্ট ও চিকিৎসাযোগ্য কারণ থাকে। নিচে গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি কারণ তুলে ধরা হলো-
* কফ ভেরিয়েন্ট অ্যাজমা
অ্যাজমার একটি বিশেষ ধরন হলো কফ ভেরিয়েন্ট অ্যাজমা। এতে শ্বাসকষ্ট বা বুকে চাপ অনুভূত না হলেও শুকনো কাশি বারবার হতে দেখা দেয়। সাধারণত রাতে কাশি বেশি হয় এবং ধুলাবালু, ঠান্ডা বাতাস বা অ্যালার্জিজনিত কারণে উপসর্গ তীব্র হতে পারে। সঠিকভাবে নির্ণয়ের জন্য শ্বাসক্রিয়া পরীক্ষা ও প্রয়োজনে ইনহেলার ব্যবহারের প্রয়োজন হতে পারে। তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
* পোস্টনাসাল ড্রিপ
নাকের ভেতরে তৈরি হওয়া তরল ধীরে ধীরে গলার দিকে নেমে এলে তা স্বরযন্ত্রে উত্তেজনা সৃষ্টি করে এবং এর ফলে দীর্ঘস্থায়ী কাশি দেখা দেয়। সাইনোসাইটিস, অ্যালার্জি, ভাইরাস সংক্রমণ বা বারবার হাঁচি এসবই পোস্টনাসাল ড্রিপের সাধারণ কারণ। দীর্ঘস্থায়ী শুকনো কাশির অন্যতম প্রচলিত উৎস এটি।
* জিইআরডি (GERD)
পাকস্থলীর অ্যাসিড ওপরের দিকে উঠে এলে টক ঢেঁকুর, বুকজ্বালা, গলায় জ্বালাপোড়া এবং সঙ্গে ধারাবাহিক কাশি দেখা দিতে পারে। মসলাদার খাবার, ভাজাপোড়া, চকলেট, কফি, টক খাবার এসব জিইআরডি বাড়িয়ে তোলে। পাশাপাশি অতিরিক্ত ওজন, ধূমপান বা অতিরিক্ত খাবার খাওয়াও ঝুঁকির মাত্রা বৃদ্ধি করে। জিইআরডি নিয়ন্ত্রণে আনলে অনেক ক্ষেত্রে কাশি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে যায়।
* ভাইরাল সংক্রমণের পর দীর্ঘস্থায়ী কাশি
অনেক সময় সর্দিজ্বরের উপসর্গ সেরে গেলেও শ্বাসনালি কিছুদিন অতিসংবেদনশীল থাকে, ফলে দীর্ঘদিন ধরে কাশি স্থায়ী হতে পারে। ঋতু পরিবর্তনের সময় এ সমস্যা বেশি দেখা যায়। সাধারণত বিশেষ চিকিৎসা ছাড়াই ধীরে ধীরে উপসর্গ কমে আসে।
* কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত ACE inhibitor শ্রেণির ওষুধ অনেক রোগীর ক্ষেত্রে শুকনো কাশির কারণ হতে পারে। নিয়মিত কাশির কারণ খুঁজে না পেলে ওষুধের ইতিহাস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
দীর্ঘস্থায়ী বা অবিরাম কাশি সবসময় গুরুতর রোগের লক্ষণ না হলেও একে উপেক্ষা করা উচিত নয়। উপসর্গ কয়েক সপ্তাহের বেশি স্থায়ী হলে কারণ নির্ণয়ের জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই উত্তম। যথাযথ চিকিৎসা ও জীবনযাত্রায় কিছু পরিবর্তনে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই শুকনো কাশি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।
লেখক : আবাসিক সার্জন (ইএনটি), সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
