Logo
Logo
×

সুস্থ থাকুন

নিঃসন্তান দম্পতির করণীয়

Icon

ডা. নুসরাত জাহান দৃষ্টি

প্রকাশ: ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

নিঃসন্তান দম্পতির করণীয়

ছবি: সংগৃহীত

সন্তান না হওয়া কোনো লজ্জার বিষয় নয়, এটি একটি চিকিৎসাযোগ্য স্বাস্থ্যগত অবস্থা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সংজ্ঞা অনুযায়ী, যদি কোনো দম্পতি এক বছর নিয়মিত ও নিরাপত্তাহীন দাম্পত্য সম্পর্কের পরও সন্তান ধারণে ব্যর্থ হন, তবে তাকে বন্ধ্যত্ব বলা হয়। নারীর বয়স ৩৫ বছরের বেশি হলে এ সময়সীমা ছয় মাস ধরা হয়।

একটি প্রচলিত ভুল ধারণা হলো, সন্তান না হলে নারীরই সমস্যা। গবেষণায় দেখা যায়, প্রায় ৪০ শতাংশ ক্ষেত্রে সমস্যার উৎস পুরুষ, প্রায় ৪০ শতাংশ ক্ষেত্রে নারী, বাকি ২০ শতাংশ ক্ষেত্রে উভয়জন বা অজানা কারণ। অর্থাৎ, এটি দম্পতির যৌথ স্বাস্থ্যগত বিষয়।

দাম্পত্য জীবনে সন্তান ধারণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে। যেমন, সঠিক সময়ে দাম্পত্য সম্পর্ক। নারীর মাসিক চক্রে একটি নির্দিষ্ট সময় থাকে, যাকে ডিম্বস্ফোটন বা Ouvlation period বলা হয়। এ সময়েই গর্ভধারণের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। অনেক দম্পতি এ সময় সম্পর্কে না জানার কারণে অজান্তেই সুযোগ হারান। দীর্ঘমেয়াদি মানসিক চাপ নারী ও পুরুষ উভয়ের প্রজনন ক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে। এ ছাড়া নারীর বয়স ৩০ বছরের পর ধীরে ধীরে ডিম্বাণুর সংখ্যা ও গুণগত মান কমতে থাকে। পুরুষদের ক্ষেত্রেও বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে শুক্রাণুর গুণমান হ্রাস পায়। তাই অযথা দেরি না করে সময়মতো পরিকল্পনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

পাশাপাশি নারীজনিত সাধারণ কারণ রয়েছে। যেমন, পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম, থাইরয়েডের সমস্যা, হরমোনের অসামঞ্জস্য, ফেলোপিয়ান টিউব ব্লক, অ্যান্ডোমেট্রিওসিস, অনিয়মিত বা বন্ধ মাসিক ইত্যাদি।

পুরুষজনিত সাধারণ কারণেও এমনটা হতে পারে। যেমন, শুক্রাণুর সংখ্যা কম, শুক্রাণুর গতি বা আকৃতি অস্বাভাবিক, ভেরিকোসিল, হরমোনের ঘাটতি, ধূমপান ও মাদক সেবন ইত্যাদি।

লাইফস্টাইল বিশেষ ভূমিকা রাখে। বর্তমান জীবনযাত্রার কিছু অভ্যাস সরাসরি সন্তান ধারণের ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে। যেমন, অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা, অনিয়মিত ঘুম, অতিরিক্ত জাঙ্ক ফুড, ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য, দীর্ঘ সময় মোবাইল বা ল্যাপটপ কোলে রাখা (বিশেষ করে পুরুষদের ক্ষেত্রে) ইত্যাদি।

নিঃসন্তান দম্পতির ক্ষেত্রে করণীয় কিছু বিষয় রয়েছে। যেমন, উভয়ের একসঙ্গে চিকিৎসা শুরু করা, শুধু নারী নয় বরং স্বামী ও স্ত্রী দুজনেরই একসঙ্গে পরীক্ষা ও চিকিৎসা প্রয়োজন। প্রয়োজনীয় পরীক্ষার মাঝে নারীর জন্য আল্টাসনোগ্রাম, হরমোন প্রোফাইল, থাইরয়েড পরীক্ষা ও পুরুষের জন্য সিমেন অ্যানালাইসিস গুরুত্বপূর্ণ। এ পরীক্ষাগুলো সহজ, নিরাপদ এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অনেক ক্ষেত্রে শুধু ওষুধ ও জীবনযাত্রার পরিবর্তনেই সফল গর্ভধারণ সম্ভব হয়। প্রয়োজনে আধুনিক চিকিৎসা যেমন IUI বা IVF-এর সাহায্য নেওয়া যায়, যা বর্তমানে বাংলাদেশেও নিরাপদভাবে করা হচ্ছে। এই বিষয় নিয়ে ভুল ধারণা পরিহার জরুরি। যেমন, সন্তান না হওয়াকে ভাগ্যের ওপর ছেড়ে দেওয়া, কুসংস্কারাচ্ছন্ন চিকিৎসার আশ্রয় নেওয়া, শুধু নারীকে দায়ী করা ইত্যাদি। এসব মানসিকতা চিকিৎসা বিলম্বিত করে।

লেখক : চর্ম ও যৌন স্বাস্থ্য পরামর্শক, সেক্স এডু উইথ ডক্টর দৃষ্টি।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম