খাদ্য আঁশ ক্যানসার প্রতিরোধ করে
আখতারুন নাহার আলো
প্রকাশ: ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ছবি: সংগৃহীত
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
খাদ্য আঁশ বা Dietary fibre-এর অনেক গুণ। খাদ্যের আঁশ দেহে ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়িয়ে দেয়, পাকস্থলীতে বেশিক্ষণ ধরে থাকে। কোলেস্টেরল ও ট্রাইগ্লাইসেরাইডের মাত্রা কমায়, ওজন ও রক্তচাপের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। এটি কোলন ক্যানসার প্রতিরোধের ক্ষমতা বাড়ায়। যেসব দেশে খাবারে আঁশ গ্রহণের প্রচলন রয়েছে সেখানে কোলন ক্যানসারের হার খুব কম। যেসব দেশে জান্তব প্রোটিন খাওয়ার চল বেশি, সেখানে কোলন ক্যানসারের হারও বেশি। ১৯৭০ সালে ব্রিটিশ চিকিৎসক ডেনিস বারফিট লক্ষ করে দেখেছেন যে, উচ্চ আঁশযুক্ত খাবার হজম ক্রিয়ার ওপর কাজ করে অসুস্থতার মাত্রা কমিয়ে দেয়।
আমাদের শরীর আঁশ হজম করতে পারে না। এ কারণে দ্রুত এটা অন্ত্রের মাধ্যমে শরীরের বাইরে বের হয়ে যায়। সেই সঙ্গে ক্যানসারের উৎসকেও বের করে দেয়। এ ছাড়া খাবারের আঁশ হজম ক্রিয়ায় পানি শোষণ করে। এদিকে চর্বি হজম হওয়ার জন্য অন্ত্রে পিত্তি রস ক্ষরিত হয়। আবার অন্ত্রে থাকা ব্যাকটেরিয়া এ অ্যাসিডকে ক্ষতিকর রাসায়নিকে পরিণত করতে পারে, যা ক্যানসারকে বাড়িয়ে দেয়। তবে খাবারের আঁশ এসব ক্ষতিকর অ্যাসিডের সঙ্গে মিশে খুব তাড়াতাড়ি অন্ত্র থেকে বের করে দেয়। আঁশযুক্ত খাবার কোলন ছাড়াও অন্যান্য অনেক রকমের ক্যানসার থেকে বাঁচায়। পরীক্ষায় দেখা গেছে উচ্চ আঁশ ইস্ট্রোজেনের মাত্রার ওপর প্রভাব ফেলে। ইস্ট্রোজেন সাধারণত পাকস্থলীতে ক্ষরিত হয়। যদি আঁশযুক্ত খাবার না খাওয়া হয়, তাহলে অন্ত্র ইস্ট্রোজেন শুষে নেয়। ফলে রক্তে অতিমাত্রায় ইস্ট্রোজেন জমা হলে ব্রেস্ট ক্যানসারের আশঙ্কা বেড়ে যায়।
দানা শস্য, শিম, বরবটি, ডাল, মটর, মটরশুঁটি, ফল, ভুসিযুক্ত আটা, লাল চাল, সয়াবিন, টমেটো, তরমুজ, গাজর, সবজিতে প্রচুর আঁশ আছে। সুতরাং স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় এগুলো খেলে সহজেই আঁশ পাওয়া যাবে। গাঢ় সবুজ ও হলুদ সবজিতে থাকে ক্যারোটিনয়েড। এটি ফুসফুস ক্যানসার, মূত্রথলি ও মুখগহ্বর, ল্যারিংস ইসোফেগাস ও ব্রেস্ট ক্যানসার থেকে বাঁচায়। এ ছাড়া বাঁধাকপি, ফুলকপি, ব্রকলি, শালগম, ওলকপিতে শুধু যে চর্বি কম আছে তা নয়, এগুলোতে ক্যানসার প্রতিরোধকারী উপাদান বিদ্যমান।
যারা নিরামিষভোজী তাদের পঞ্চাশ শতাংশ ক্যানসার কম হয়। কারণ কম চর্বি, উচ্চ আঁশযুক্ত খাবার যেমন-ফল, সবজি, দানাশস্য ক্যানসার প্রতিরোধে সহায়তা করে। নিরামিষভোজীদের শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে বিটা ক্যারোটিন, ভিটামিন ‘সি’ ও আঁশ থাকে।
আমিষভোজীদের চেয়ে নিরামিষভোজীদের ন্যাচারাল ফিলার সেল অ্যাক্টিভিটির মাত্রা দ্বিগুণ থাকে। ন্যাচারাল ফিলার সেল হলো এক ধরনের বিশেষ হোয়াইট ব্লাড সেল, যা ক্যানসার সেলের কার্যকারিতা নষ্ট করে দেয়। বেশ কয়েকটি রোগের প্রতিষেধক হিসাবে উচ্চ আঁশ কাজ করে। যেমন-পাইলস, কোষ্ঠকাঠিন্য, কোলন ও রেকটাম ক্যানসার। হার্টের অসুখ, ডায়াবেটিস, দন্তক্ষয়, গলব্লাডার স্টোন, ওজনাধিক্য ইত্যাদি। উচ্চ আঁশযুক্ত খাবার সস্তা ও পুষ্টিকর, দৈনিক ৩০-৪০ গ্রাম আঁশযুক্ত খাবার খাওয়া উচিত।
লেখক : চিফ নিউট্রিশন অফিসার ও বিভাগীয় প্রধান (অব.), বারডেম। সভাপতি, ডায়াবেটিস নিউট্রিশনিস্ট সোসাইটি অব বাংলাদেশ, পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার, শ্যামলী ও অ্যাডভান্স হাসপাতাল, ঢাকা।
