অপারেশনের পর আবার ফিস্টুলা হওয়াই কি নিয়ম
অধ্যাপক ডা. একেএম ফজলুল হক
প্রকাশ: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
ফিস্টুলা (ভগন্দর বা নালী ঘা) মলদ্বারের একটি বিশেষ রোগ। এ রোগ পায়ুপথের ভেতরে গ্রন্থির সংক্রমণের কারণে হয়ে থাকে। প্রথমত সংক্রমণের কারণে মলদ্বারের পাশে ফোড়া হয়। বেশ কয়েকদিন ব্যথা থাকে এবং ফুলে যায়। এরপর এটি ফেটে গিয়ে মলদ্বারের পাশের কোনো একটি জায়গা দিয়ে পুঁজ বেরিয়ে যায়। তারপর ব্যথা এবং ফুলা কমে যায়। রোগী বেশ কিছুদিন আরামবোধ করেন। কিছুদিন ভালো থাকার পর হঠাৎ আবার মলদ্বার ফুলে যায় এবং ব্যথা হয়। দু-চার দিন পর পুরনো সেই মুখ দিয়ে আবার কিছু পুঁজ বের হয় এবং রোগী আরামবোধ করেন। চিকিৎসা না করা হলে এ প্রক্রিয়া বছরের পর বছর চলতে থাকে। পুঁজ পড়ার বিষয়টির তারতম্য ঘটে। সামান্য পুঁজ হলে রোগীরা এটিকে পুঁজ হিসেবে গণ্য করেন না। তখন তারা বলেন, একটু আঠালো রস বের হয় বা মলদ্বারে একটু ভিজে যায় ইত্যাদি। পুঁজের সঙ্গে সাধারণত রক্ত যায় না। কিন্তু কখনও কখনও অল্প রক্ত যেতে পারে। মলদ্বারের চতুর্দিকে এক বা একাধিক মুখ দেখা দিতে পারে। তিন থেকে ছয়টি মুখ পর্যন্ত দেখেছি।
ফিস্টুলা বা ভগন্দর রোগের চিকিৎসা হচ্ছে অপারেশন। অনেক রোগী আছেন ১০-২০ বছর এ রোগে অবর্ণনীয় দুঃখ-দুর্দশা ভোগ করছেন কিন্তু অপারেশন করছেন না, কারণ হিসেবে বলেছেন, অপারেশন করলে নাকি আবার হয় তাই অপারেশন করে আর লাভ কী? আবার অনেকে অপারেশনকে ভয় পান। ভয় পেয়ে কেউ কেউ তথাকথিত বিনা অপারেশনে চিকিৎসার জন্য হাতুড়ে চিকিৎসকের কাছে যান। কোনো কোনো হাতুড়ে ডাক্তার ইনজেকশনের সাহায্যে ভালো করার নামে বিষাক্ত কেমিক্যাল ইনজেকশন দেন। এ ইনজেকশনে রোগী ভীষণ ব্যথা অনুভব করেন এবং মলদ্বারের মাংসের পচন ধরে গায়ে জ্বর আসে। এরপর ওই হাতুড়ে ডাক্তারকে যদি বলা হয়, এত কষ্ট এবং এ পচন ধরবে এ কথা তো আগে বলেননি। তখন তিনি উত্তর দেন, এগুলো বললে আপনি ইনজেকশন নিতেন না। এ প্রক্রিয়ার ফলে মলদ্বারে অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে থাকে। যেমন- মল আটকে রাখতে না পারা, মলদ্বার নিচে ঝুলে পড়া, মলদ্বার অতি সরু হয়ে যাওয়া ইত্যাদি।
পাইলসের চিকিৎসায় যে ইনজেকশন দেয়া হয় তাতে কারও টের পাওয়ার কথা নয়। ব্যথা পাওয়ার প্রশ্নই আসে না। আর সপ্তাহে একটি করে মোট সাতটি ইনজেকশন দেয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। পাইলস ছাড়া অন্যান্য রোগে ইনজেকশন দেয়ার বিধান নেই। তাই আপনার আগে জেনে নেয়া উচিত, আপনার রোগটি আসলেই পাইলস কিনা। ফিস্টুলার প্রকারভেদ রয়েছে এবং বিভিন্ন সার্জন ভিন্ন ভিন্ন অপারেশন কৌশল অবলম্বন করেন তাই এর সাফল্য তুলনা করা দুস্কর। এ ছাড়া কী কারণে ফিস্টুলা হয়েছিল তার ওপরও ফলাফল নির্ভর করে। অপারেশনের পর আবার হওয়ার কারণগুলো পর্যালোচনা করা দরকার।
* ফিস্টুলার প্রকারভেদ রয়েছে। যেমন সাধারণ ফিস্টুলা ও জটিল ফিস্টুলা। সাধারণ ফিস্টুলা অপারেশন সহজসাধ্য। কিন্তু জটিল ফিস্টুলা যেহেতু মলদ্বারের গভীরে মাংসপেশির ভেতর প্রবেশ করে তাই এর চিকিৎসাও জটিল। এ ধরনের ফিস্টুলা অপারেশন করতে বিশেষ ধরনের যন্ত্রপাতি থাকলে ভালো হয়। যেহেতু মলদ্বারের গভীরে প্রবেশ করে এবং এক ধাপে এ অপারেশন করলে রোগীর পায়খানা আটকে রাখার ক্ষমতা ব্যাহত হতে পারে তাই কয়েক ধাপে সিটন প্রয়োগের মাধ্যমে করলে অধিকতর সফলতা পাওয়া যায়।
* ফিস্টুলার নালীটি বিভিন্ন দিকে শাখা-প্রশাখা বিস্তৃত করতে পারে। সেগুলো ধৈর্যসহকারে খুঁজে দেখতে হবে।
* ফিস্টুলার ভেতরের মুখটি কোথায় তা শনাক্ত করতে হবে। অনেক সময় ভেতরের মুখ খুঁজে পাওয়া যায় না।
* জটিল ফিস্টুলা অপারেশনে যথেষ্ট সময় হাতে নিয়ে ধৈর্যসহকারে সার্জনের কর্মসম্পাদন করা উচিত। যিনি প্রথম অপারেশন করেন তার হাতেই ভালো হওয়ার সর্বোত্তম সুযোগটি থাকে। বারবার অপারেশনে সাফল্যের সুযোগ কমতে থাকে।
* এ অপারেশনের পর মাংস পরীক্ষা করা উচিত কারণ যদি এটি যক্ষ্মার কারণে হয়ে থাকে তাহলে যক্ষ্মার ওষুধ না খাওয়ানো পর্যন্ত এটি বারবার হতে থাকবে। আবার যদি ক্যান্সার ধরা পড়ে তাহলে বড় ধরনের অপারেশন করতে হবে।
* পরিপাকতন্ত্রের প্রদাহজনিত রোগ যেমন ক্রন’স ডিজিজ যদি সন্দেহ করা হয় তাহলে মলদ্বারের ভেতর কোলনস্কপি পরীক্ষা করে নেয়া উচিত। এতে যদি এই রোগ ধরা পড়ে তাহলে বিশেষ সতর্কতার সঙ্গে ফিস্টুলা অপারেশন করতে হবে।
* পায়ুপথে ক্যান্সারের কারণে ফিস্টুলা হলে ক্যান্সারের অপারেশন করতে হবে।
* সাফল্য ও ব্যর্থতার মাপকাঠি হচ্ছে তিনটি
ক. পুনরায় ফিস্টুলা হওয়া, খ. ক্ষত শুকাতে অতিরিক্ত দেরি হওয়া, গ. মল ও বায়ু ধরে রাখার অক্ষমতা।
লেখক : বৃহদান্ত্র ও পায়ুপথ সার্জারি বিশেষজ্ঞ, ইডেন মাল্টিকেয়ার হাসপাতাল, ঢাকা
