কীভাবে বুঝবেন শিশুর প্রস্রাবে ইনফেকশন
ডা. শাহজাদা সেলিম
প্রকাশ: ১৯ জুন ২০২০, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
আমাদের শরীরে কিডনি রক্ত থেকে বর্জ্য পদার্থ ও পানি শুষে নিয়ে ইউরিন তৈরি করে। প্রতিদিন এ ইউরিন আমাদের শরীর থেকে বেরিয়ে গিয়ে শরীর সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। কিডনি থেকে বেরিয়ে ইউরিন এক সরু টিউবের মধ্য দিয়ে গিয়ে ইউরিনারি ব্লাডারে জমা হয়। বাচ্চার বয়সের ওপর নির্ভর করে কতটা ইউরিন ব্লাডারে জমা থাকবে। এরপর ব্লাডার থেকে জমা ইউরিন মূত্রনালির মধ্য দিয়ে গিয়ে শরীর থেকে বেরিয়ে যায়।
কেন ইনফেকশন হয়
ইউরিনারি ট্র্যাক্টে এমনিতে কোনো ব্যাক্টেরিয়া থাকে না। কোনো কারণে ব্যাক্টেরিয়া মূত্রথলিতে ঢুকে গেলে ইউরিনারি ট্র্যাক্টে ইনফেকশন হতে পারে। ব্লাডার ফুলে যায়, পেটের নিুাংশে যন্ত্রণা হতে পারে। যদি ব্যাক্টেরিয়া কোনোভাবে কিডনি পর্যন্ত পৌঁছে যায়, তা হলে কিডনিতেও ইনফেকশন হতে পারে। সাধারণত অ্যানাস বা ভ্যাজাইনার আশপাশে এ ধরনের ব্যাক্টেরিয়া পাওয়া যায়। কোনো কারণবশত যদি ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ঠিকমতো কাজ না করতে পারে তা হলে ব্যাক্টেরিয়া ইউরিনারি ট্র্যাক্টে ঢুকে যায়। ফলে ইনফেকশন হতে পারে।
* কিছু বাচ্চার মধ্যে জন্ম থেকেই ভেসিকোইউরেটেরাল রিফ্লাক্স বলে একধরনের সমস্যা দেখা যায়। এ সমস্যায় ইউরিন ব্লাডার থেকে বেরিয়ে ইউরেটার হয়ে আবার কিডনিতে পৌঁছে যায়। ফলে ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকটেড হয়ে পড়ে।
* মায়েলোমেনিঙ্গোসিল, হাইড্রোসেফালসের মতো ব্রেন বা নার্ভাস সিস্টেমের অসুখ থাকলে ব্লাডার পুরোপুরি খালি হতে পারে না। স্পাইনাল কর্ডে চোট লাগলেও এ ধরনের সমস্যা হতে পারে। এর থেকে ইউরিনারি ট্র্যাক্টে ইনফেকশন হয়।
* জন্ম থেকেই যদি ইউরিনারি ট্র্যাক্টের গঠনে কোনো ত্রুটি থাকে, তা হলে ব্যাক্টেরিয়া সহজেই ইউরিনারি ট্র্যাক্টকে ইনফেক্টেড করে দিতে পারে।
* বাচ্চার যদি বাথরুম যেতে অনীহা থাকে, বাথরুম যাওয়ার পর যদি কেউ নিজেকে ঠিকমতো পরিষ্কার না করে, তা হলে ইনফেকশন হওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়।
* ঘন ঘন বাবল বাথ নিলে ইনফেকশন হতে পারে। খুব বেশি টাইট জামাকাপড় পরলেও এ ধরনের সমস্যা দেখা যেতে পারে।
উপসর্গ
ইউরিনারি ট্র্যাক্টে ইনফেকশন হলে ব্লাডার ইউরেথ্রা, ইউরেটার ও কিডনিতে অস্বস্তি (ইরিটেশন) হয়। ঠিক যেমন ঠাণ্ডা লাগার পর নাক ও গলায় ইরিটেশন হয়। যেহেতু বাচ্চারা সব সময় বলে বোঝাতে পারে না, তাই বাচ্চার ব্যবহারে যদি হঠাৎ পরিবর্তন দেখেন, তা হলে বুঝবেন যে বাচ্চার শরীরে কোনো অস্বস্তি হয়ে থাকতে পারে। ইউটিআই হলে সাধারণত কিছু বিশেষ উপসর্গ দেখা যায়-
* জ্বর হতে পারে, বাচ্চা অকারণে বিরক্তি প্রকাশ করে, খেতে চায় না, বমি করে, ইউরিনে দুর্গন্ধ হতে পারে, বারবার বাথরুম যেতে হয়, বাথরুম করার সময় ব্যথা হতে পারে বা জ্বালা করতে পারে, তলপেটে বা পিঠের নিুাংশে ব্যথা হয়, অনেক সময় ইউরিনে রক্ত বেরুতে পারে, টয়লেট ট্রেনিং থাকলেও বাচ্চা ইউরিন কন্ট্রোল করতে পারে না, অনেক সময়ই বিছানা ভিজিয়ে ফেলে।
যদি কোনোভাবে কিডনিতে ইনফেকশন ছড়িয়ে যায় তা হলে-
* বাচ্চার কাঁপুনি হতে পারে।
* খুব বেশি জ্বর আসে।
* ত্বক লাল হয়ে যায়।
* মাথা ঘোরে, বমি হয়।
* পাঁজরে ব্যথা হতে পারে।
প্রতিরোধ
বাচ্চাকে বেশি বাবল বাথ করতে দেবেন না। ঢিলেঢালা অন্তর্বাস ও জামাকাপড় পরা ভালো।
বাচ্চা যাতে প্রচুর পরিমাণ পানি খায়, সে দিকে নজর দেবেন।
বাচ্চাকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকার গুরুত্ব বোঝান। বাথরুম করার পর জেনিটাল পরিষ্কার করা জরুরি।
বাচ্চাকে দিনে একাধিকবার বাথরুম যাওয়া শেখান।
রোগ নির্ণয়
* ইউরিনের স্যাম্পল টেস্ট করা হয়।
* কেন ইনফেকশন হয়েছে বা কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কিনা দেখার জন্য কিডনির আল্ট্রাসাউন্ড করা হয়। এছাড়া ইউরিনেশনের সময় বিশেষ পদ্ধতি দ্বারা এক্স-রে করা হয়।
* বাচ্চার মেডিকেল হিস্ট্রি নেয়া হয়। ডাক্তাররা জানতে চান বাচ্চার বয়স কত, আগে কখনও ইনফেকশন হয়েছে কিনা, ইনফেকশন কতটা জটিল, বাচ্চার আর কোনো অসুখ আছে কিনা, স্পাইনাল কর্ড বা ইউরিনারি ট্র্যাক্টে কোনো সমস্যা আছে কিনা। এর ওপর নির্ভর করে ডাক্তাররা সিদ্ধান্ত নেন যে চিকিৎসার ধরন ঠিক কীরকম হবে।
চিকিৎসা
প্রথমেই বাচ্চাকে অ্যান্টিবায়োটিক দেয়া হয় যাতে ইনফেকশন কিডনি পর্যন্ত পৌঁছতে না পারে। একদম ছোট বাচ্চাদের হসপিটালে ভর্তি করে ইনজেকশনের মাধ্যমে অ্যান্টিবায়োটিক দেয়া হয়। বড় বাচ্চাদের অবশ্য ওষুধ খেতে দেয়া হয়। ইনফেকশন কতটা জটিল তার ওপর নির্ভর করে অ্যান্টিবায়োটিক কতদিন খেতে হবে।
লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
