Logo
Logo
×

সুস্থ থাকুন

গর্ভবতী মায়েদের খাদ্য তালিকা

Icon

ডা. তৃষিতা সাহা বিশ্বাস

প্রকাশ: ০৮ জুলাই ২০২২, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

একজন সুস্থ মা, একটি সুস্থ শিশুর জন্ম দিতে পারেন। একটি স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করলে মায়েদের সুস্থ গর্ভধারণ ও সুস্থ শিশুর জন্মদানের সম্ভাবনা অনেকাংশে বেড়ে যায়। তাই, গর্ভাবস্থায় পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ মা ও সন্তান উভয়ের স্বাস্থ্যের জন্যই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

সমাজে গর্ভবতী মায়েদের খাদ্য সম্পর্কে কিছু ভ্রান্ত ধারণা প্রচলিত রয়েছে। এমন একটি ধারণা হলো, মা বেশি খেলে পেটের বাচ্চা বড় হয়ে যাবে, ফলে স্বাভাবিক প্রসব হবে না এবং সিজার করার প্রয়োজন হবে। ফলে মা অপুষ্টিতে ভোগেন এবং প্রসবের সময় নানা জটিলতা দেখা যায়। আবার এমনও রয়েছে যে, মা যদি যমজ সন্তান গর্ভে ধারণ করে সে ক্ষেত্রে দ্বিগুণ খাবার খেতে হবে। এগুলো সম্পূর্ণরূপে ভ্রান্ত ও অযৌক্তিক।

গর্ভবতী মায়েদের দিনে তিনবার মূল খাবারের পাশাপাশি দুবার নাশতা গ্রহণ করা উচিত। স্বাভাবিকের তুলনায় এ সময় দিনে ৩৫০ থেকে ৪৫০ ক্যালরি বেশি খেলেই যথেষ্ট। তবে খাদ্য তালিকা হতে হবে সুষম। অর্থাৎ শর্করা, আমিষ, চর্বি, ভিটামিন, মিনারেলস, আঁশ ও পানি-এ ৭টি পুষ্টি উপাদান পরিমাণমতো আমাদের খাদ্য তালিকায় থাকতে হবে।

আমাদের শরীরে শক্তির সবচেয়ে বড় উৎস হলো শর্করা জাতীয় খাদ্য। যেমন-ভাত, রুটি, আলু, নুডলস, কর্নফ্লেক্স ইত্যাদি। তবে প্রক্রিয়াজাত শর্করা জাতীয় খাদ্যের পরিবর্তে বাদামি আটা, চাল অথবা যে কোনো গোটা শস্যে তুলনামূলক পুষ্টিগুণ বেশি থাকে।

প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় আমিষ জাতীয় খাদ্য অবশ্যই রাখুন। শিশুর সুস্থ ও স্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠার জন্য আমিষ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মাছ, কম চর্বিযুক্ত মাংস, ডিম, ডাল, বাদাম ও বীজ জাতীয় যে কোনো খাদ্যে প্রচুর পরিমাণে আমিষ থাকে। আবার, ডিম ও মাংসে প্রচুর পরিমাণে আয়রনও থাকে, ফলে তা গর্ভাবস্থায় রক্তশূন্যতা প্রতিরোধ করে। তবে এ সময় রান্নার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত তেল ব্যবহার থেকে বিরত থাকা ভালো। এ ছাড়া মাছ-মাংস কিংবা ডিম ভালোমতো সিদ্ধ হয়েছে কিনা সেদিকেও খেয়াল রাখা উচিত। উল্লেখ্য, এক্ষেত্রে সমাজে কিছু ভ্রান্ত ধারণা

রয়েছে, যেমন-মৃগেল মাছ খেলে সন্তানের মৃগী রোগ হয় বা শিং মাছ খেলে দেহ সাপের মতো হয়-এগুলো সম্পূর্ণরূপে ভুল তথ্য।

আবার, গর্ভাবস্থায় প্রচুর পরিমাণে ফলমূল এবং শাকসবজি গ্রহণ করা উচিত। গর্ভবতী মায়েদের জন্য কিছু উপকারী সবজি হলো-গাজর, পালং শাক, মটরশুটি, টমেটো, শালগম, বাঁধাকপি, মিষ্টি আলু ইত্যাদি। রঙিন ফলমূল যেমন-কমলা, আম, কলা, আপেল, নাশপাতি, লেবু এ সময় শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন (ভিটামিন এ, সি, কে, ফলিক এসিড), মিনারেলস (আয়রন, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম), আঁশসহ আরও নানা পুষ্টি উপাদান। ফলে এরা একাধারে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, হজম ক্ষমতা ভালো রাখে ও কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে। এ ছাড়া শিশুর সুস্থভাবে বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে এসব পুষ্টি উপাদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় যে কোনো দুগ্ধজাত পণ্য যেমন-দুধ, দই থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি ক্যালসিয়ামের একটি ভালো উৎস। ক্যালসিয়াম শিশুর দাঁত ও হাড় গঠনে যেমন সহায়তা করে, তেমনি মায়ের বুকের দুধ তৈরিতেও ভূমিকা রাখে।

আয়োডিনের অভাবে নবজাতকের শারীরিক ও মানসিক বিকলাঙ্গ হতে পারে। তাই গর্ভাবস্থায় আয়োডিনযুক্ত লবণ ও সামুদ্রিক মাছ গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া এসময় মায়েরা যেন প্রচুর পরিমাণে নিরাপদ পানি পান করে সেদিকেও লক্ষ্য রাখা উচিত।

গর্ভাবস্থায় মা অপুষ্টিতে ভুগে থাকলে এর প্রভাব মা এবং সন্তান দুজনের উপরই সমানভাবে পড়ে। তাই গর্ভস্থ সন্তানের শারীরিক ও মানসিক বিকাশসহ নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিতকরণের জন্য গর্ভবতী মায়েদের সঠিক খাদ্যাভ্যাস মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

লেখক : রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট, সেন্টার ফর রিসার্চ, ইনোভেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট একশন, কানাডা

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম