ইনহেলার হাঁপানির শেষ চিকিৎসা নয়
ডা. গোবিন্দ চন্দ্র দাস
প্রকাশ: ১৯ আগস্ট ২০২২, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
সাধারণত বেশিরভাগ হাঁপানি রোগীর শীতকালে শ্বাসকষ্ট বাড়ে। তবে যে কোনো ঋতুতেই রোগীরা কষ্টে ভোগেন। আজকাল হাঁপানির আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থায় ট্যাবলেট, সিরাপের চেয়ে ইনহেলারকেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয় এবং ইনহেলারের ব্যবহার ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। কারণ ইনহেলার সঠিকভাবে নিতে পারলে কয়েক মিনিটের মধ্যেই শ্বাসকষ্ট কমতে শুরু করে, ওষুধ লাগে কম এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই বললেই চলে। ইনহেলার হচ্ছে-শ্বাসের সঙ্গে ওষুধ নেওয়ার একটি পদ্ধতি। একটা ছোট কৌটায় (ক্যানিস্টারে) ওষুধ থাকে। ইনহেলার যন্ত্রের মাধ্যমে শ্বাসের সঙ্গে ওষুধ টেনে নেওয়ার সুবিধা অনেক বেশি। এভাবে ব্যবহারে ওষুধ শ্বাসনালিতে কাজ করে অনেক দ্রুত এবং অল্প পরিমাণ ওষুধ লাগে কাজ করার জন্য।
অন্যদিকে রোগীকে মুখে খেতে হয় ট্যাবলেট বা সিরাপ। ট্যাবলেট খেলে ওষুধ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে যায়, ফলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসাবে হাত পা ফাপ, বুক ধড়পড় করা এবং ঘুম কম হয়। তাই সাধারণ ক্ষেত্রে হাঁপানির চিকিৎসায় ইনহেলার ব্যবহার করা উত্তম। কিন্তু সমস্যা হলো ঠিকমতো ওষুধ শ্বাসের সঙ্গে নিতে না পারলে কোনো উপকার তো হবেই না বরং আস্তে আস্তে শ্বাসকষ্ট বেড়েই যাবে। এ ইনহেলার ব্যবহার সত্ত্বেও যদি শ্বাসকষ্ট বাড়ে, তখন মুখে ট্যাবলেট খেতে হবে বা বেশি প্রয়োজনের ক্ষেত্রে ইনজেকশন ব্যবহার করতে হবে।
এদিকে আমাদের দেশের বেশিরভাগ মানুষের ধারণা ইনহেলার হচ্ছে শ্বাসকষ্টের শেষ চিকিৎসা। অথবা ইনহেলার ব্যবহার করলে ভবিষ্যতে আর কোনো ওষুধ কাজ করবে না বা এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বেশি। অথচ ইনহেলার হলো একেবারে প্রাথমিক চিকিৎসা। কারণ ওষুধ কম লাগে পাশ্বপ্রতিক্রিয়া কম, কাজ করে তাড়াতাড়ি এবং সঠিকভাবে নিতে পারলে কয়েক মিনিটের মধ্যেই শ্বাসকষ্ট কমতে শুরু করে। অথচ ট্যাবলেট খেলে লাগবে ১৫ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা। তবে ইনহেলারে ভালো ফল পেতে হলে এর ব্যবহার সঠিকভাবে শিখতে হবে। শ্বাস নেওয়া এবং ক্যানিস্টারটি চাপ দেওয়া একসঙ্গে হতে হবে। সালবিউটামল ইনহেলার, ট্যাবলেট বা সিরাপ একবার ব্যবহার করলে তার কার্য ক্ষমতা থাকে প্রায় চার ঘণ্টা। তাই সাধারণত চার ঘণ্টায় একবারের বেশি ব্যবহারের প্রয়োজন হয় না। তবে একবার ইনহেলার ব্যবহার করে যদি শ্বাসকষ্ট ৪ ঘণ্টার ভেতর ফিরে আসে তবে বুঝতে হবে এর সঙ্গে অন্য ওষুধ প্রয়োজন। তাই এ ব্যাপারে বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। ইনহেলার দুই ভাবে ব্যবহার করা যায়। সরাসরি ও স্পেসারের মাধ্যমে। সরাসরি ব্যবহার পদ্ধতি আবার দুই ধরনের। সহজ ব্যবহার পদ্ধতি ও সঠিক ব্যবহার পদ্ধতি।
পাঁচ বছরের কম বয়সের শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তি যাদের স্বাভাবিকভাবে শ্বাস নিতে কষ্ট হয় তারা স্পেসারের মাধ্যমে ইনহেলার ব্যবহার করতে পারেন। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ইনহেলার ব্যবহার নিয়ম পরীক্ষা করুন। মনে রাখবেন সুষ্ঠুভাবে এবং সঠিক নিয়মে ইনহেলার ব্যবহার করে আপনি সাধারণ হাঁপানি চিকিৎসা গ্রহণ করতে পারেন। আমাদের দেশে কোনো কোনো রোগী মনে করেন সব ইনহেলারেরই বুঝি একই ধরনের কাজ বা যে কোনো একটি ইনহেলার ব্যবহার করলেই চলবে। এটা ভ্রান্ত ধারণা। হাঁপানি রোগকে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য বক্ষব্যাধি চিকিৎসক অথবা যে কোনো অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কোন ওষুধ আপনার জন্য প্রয়োজন তা আপনার চিকিৎসক ঠিক করে দেবেন। কারণ কোন ধরনের এবং কোন পর্যায়ের হাঁপানিতে কোন ওষুধ প্রয়োগ করবেন সেটা ঠিক করার মধ্যেই রয়েছে হাঁপানি চিকিৎসার সাফল্য।
লেখক : অধ্যাপক, অ্যালার্জি ও অ্যাজমা রোগ বিশেষজ্ঞ
