গর্ভাবস্থায় পানি কমে গেলে করণীয়
ডা. হাসনা হোসেন আখি
প্রকাশ: ১৯ আগস্ট ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
মানব শিশু মাতৃগর্ভে একটি তরলের মধ্যে থাকে। এ তরলটিকে বলা হয় অ্যামিনিওটিক ফ্লুইড। গর্ভের এ তরল বা ফ্লুইড ভ্রূণের প্রতিরক্ষা এবং লাইফ সাপোর্ট সিস্টেমের একটি অংশ। গর্ভধারণের সাধারণত ১২ দিনের মধ্যেই অ্যামিনিওটিক ফ্লুইড উৎপন্ন হওয়া শুরু হয়।
স্বাভাবিক অবস্থায় তৃতীয় ট্রাইমাস্টারের আগ পর্যন্ত গর্ভে এমনিতে ফ্লুইডের পরিমাণ বাড়তে থাকে। ৩৪-৩৬ সপ্তাহের মধ্যে এর পরিমাণ হতে পারে প্রায় এক লিটার। এ সময়ের পর থেকে প্রসবের আগ পর্যন্ত ধীরে ধীরে এ ফ্লুইডের পরিমাণ কমতে থাকে। যখন ফ্লুইডের পরিমাণ কমে যায় তখন তাকে বলে ওলিগোহাইড্রোমোনিওস এবং এর পরিমাণ অস্বাভাবিক বেশি হলে তাকে বলে পলিহাইড্রোমোনিওস। অ্যামিনিওটিক ফ্লুইড কমে যাওয়ার কারণ সব সময় নির্দিষ্ট করে বলা যায় না। সাধারণত তৃতীয় ট্রাইমেস্টারের দিকে এ সমস্যাটি বেশি দেখা দিতে পারে, বিশেষ করে যখন প্রসবের সময় পার হয়ে যায়। আরও কিছু কারণ আছে যেমন-
* অ্যামিনিওটিক থলিতে কোন ছিদ্র হলে : গর্ভধারণের শেষের তিনমাসে এ সমস্যাটি বেশি দেখা দিলেও পুরো গর্ভাবস্থায় এটি হতে পারে। এমনি ঠিক থলি ছিঁড়ে গেলে ইনফেকশনের আশঙ্কা বেড়ে যায়, কারণ ছিদ্র পথে এমনি ঠিক থলিতে ব্যাকটেরিয়া প্রবেশের সুযোগ পায়। তাই যোনি পথে ফ্লুইড বের হলে অবশ্যই আপনাকে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
* প্লাসেন্টাতে কোন সমস্যা হলে : এর জন্য পর্যাপ্ত রক্ত পুষ্টি সরবরাহ করতে পারে না। ফলে শিশুর প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যায় এবং অ্যামিনিওটিক ফ্লুইড কম উৎপন্ন হয়।
* মায়ের কোন অসুখ থাকলে: মায়ের উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিস ইত্যাদি উপসর্গ থাকলে এ সমস্যা হতে পারে।
* গর্ভে একের অধিক বাচ্চা থাকলে : এসব ক্ষেত্রে দেখা যায় সাধারণত একটি ভ্রূণে ফ্লুইড অনেক কম এবং আরেকটিতে অনেক বেশি থাকে।
* ভ্রূণের কোন ত্রুটি থাকলে: যদি প্রথমত তৃতীয় ট্রাইমেস্টার গর্ভের শিশুর কোন জন্মগত ত্রুটি থাকে তবে তাতে অ্যামিনিওটিক ফ্লুইড কমে যেতে পারে। এমনি ঠিক পর্যাপ্ত ফ্লুইড গর্ভে বেড়ে ওঠার জন্য অপরিহার্য। এটি কমে গেলে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমন-ভ্রূণের অঙ্গ-প্রতঙ্গ ঠিকভাবে গঠিত হয় না, জন্মগত ত্রুটি দেখা যায়। গর্ভপাত ও ভ্রূণের মৃত্যুর আশঙ্কা বেড়ে যায়। বাচ্চার ওজন কমে যায়, অপরিনত বাচ্চা প্রসব হয় এবং প্রসবকালীন বিভিন্ন জটিলতা দেখা দেয়। অ্যামিনিওটিক ফ্লুইড কমে গেলে অবশ্যই চিকিৎসকের অবজারভেশনে থাকতে হবে এবং এটা কতটা কমে গেছে এবং কোন ট্রাইমেস্টারে আছে তার ওপর ভিত্তি করে চিকিৎসা পদ্ধতি নিরূপণ করা হয়। যদি গর্ভধারণের শেষ পর্যায়ে থাকে, তাহলে সাধারণত ডেলিভারি করে দেওয়া হয়। আর যদি মায়ের প্রি একলামশিয়া এবং বাচ্চার গ্রোথ কম থাকে সেক্ষেত্রে আগে আগে অনেক সময় ডেলিভারি করতে হয়। পরীক্ষার মাধ্যমে এ সমস্যা নিরূপণ করা সম্ভব।
লেখক : ফার্টিলিটি কনসালটেন্ট ও গাইনোকোলজিস্ট, বি আই এইচ এস জেনারেল হসপিটাল মিরপুর ১, ঢাকা।
