মানসিক কারণে শরীরে ব্যথা
ডা. তাহমীদ কামাল
প্রকাশ: ৩০ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
মানসিক কারণে শরীরে ব্যথা হলে ব্যথানাশক ওষুধে সাধারণত কোনো কাজ হয় না এবং ফিজিওথেরাপি দিলে ব্যথা আরও বাড়তে পারে। ফাইব্রোমায়ালজিয়া যে কোনো বয়সে হতে পারে, তবে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এ রোগ হওয়ার আশঙ্কা বাড়তে থাকে।
নারীরা এ রোগে পুরুষের তুলনায় ১০ গুণ বেশি ভোগেন। পারিবারিক অশান্তি, যেমন-দাম্পত্য কলহ, পরিবারে মদ্যপায়ী থাকলে, মানসিক বা শারীরিক নির্যাতন, শারীরিক চাহিদা পুরণ না হওয়া, কম পারিবারিক আয়, ছোটবেলায় নির্যাতনের কোনো ইতিহাস থাকলে এ রোগের আশঙ্কা বাড়ে।
ঘুমের সমস্যা বিশেষত ডেল্টা স্লিপের পরিমাণ কমে গেলে এ রোগ হয়। এছাড়া শরীরের ব্যথা নিয়ন্ত্রণকারী কেন্দ্রে কোনো সমস্যা হলে, যেমন-শরীরের নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় ব্যথা অনুভবের মাত্রা ও সহ্যক্ষমতা কমে গেলে, মস্তিষ্কে কিছু কিছু নিউরোট্রান্সমিটারের পরিমাণ কমে গেলে, থ্যালামাসে রক্তের পরিবহণ কমে গেলে, কর্টিসল নামক হরমোনের মাত্রায় তারতম্য হলে অথবা হাইপোথ্যালামো-পিটুইটারি-অ্যাড্রেনাল এক্সিসে কোনো সমস্যা হলেও রোগটি দেখা যায়।
এ রোগের লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে শরীরের বিভিন্ন স্থানে ব্যথা, অবসাদগ্রস্ততা, শারীরিক অসামর্থ্যতা, খিটখিটে স্বভাব, ভুলে যাওয়ার প্রবণতা, মনোযোগহীনতা, হাত ও হাতের আঙুল ফুলে যাওয়া এবং ঝিনঝিন করা, মাথাব্যথা, পেটে কামড়ানো ব্যথা, ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া, কোনো কানে বেশি শোনা এবং ঘন ঘন ওষুধে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হওয়া অন্যতম। রোগের বিস্তারিত ইতিহাস জেনে এবং শারীরিক পরীক্ষার মধ্যে ফাইব্রোমায়ালজিয়া টেন্ডার পয়েন্টস নামে শরীরের ১৮টি ব্যথাপ্রবণ জায়গায় মাত্রা দেখে রোগ নির্ণয় সম্ভব।
এ রোগের চিকিৎসার তিনটি মূল লক্ষ্য-রোগী ও রোগীর আত্মীয়স্বজনকে রোগ সম্পর্কে জানানো, রোগের প্রকৃতি ও চিকিৎসাব্যবস্থা সম্পর্কে ধারণা দেওয়া। রোগীকে মানসিকভাবে চাঙ্গা রাখতে মনোবিদের সাহায্য নেওয়া যেতে পারে। ব্যথা নিয়ন্ত্রণের জন্য সাধারণত ট্রিপটিন, প্রিগাবালিন ও গাবাপেনটিন জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে। এ ছাড়া কিছু অ্যারোবিক ব্যায়াম, যেমন-সাঁতার কাটা, দৌড়ানো, হাঁটা ও নিয়মিত যোগব্যায়াম অন্যতম। এছাড়া ভালো ঘুমের জন্য স্লিপ হাইজিন মেনে চলা উত্তম। শুধু ঘুম পেলেই ঘুমাতে যাওয়া এবং প্রতিদিন একই সময় ঘুমাতে যাওয়া ও ঘুম থেকে ওঠা এ হাইজিনের অন্তর্ভুক্ত। ঘুমের নিয়মনীতি তৈরি করা ও তা মেনে চলা অন্যতম। ফিজিক্যাল মেডিসিন বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে থেকে এ রোগের চিকিৎসা নিলে রোগ পুরোপুরি ভালো হয়ে যায়।
লেখক : ফিজিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন বিশেষজ্ঞ।
