Logo
Logo
×

সুস্থ থাকুন

উচ্চ ইউরিক এসিড রোগীর খাদ্যাভ্যাস

Icon

সামসুন নাহার স্মৃতি

প্রকাশ: ২০ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ঘুম থেকে উঠে পায়ের পাতা ফেলতে খুব কষ্ট হচ্ছে কিংবা ব্যথা করছে, কিংবা অনেকদিন ধরে ভালোভাবে পা ফেলতে পারছেন না বা পা দিয়ে হাঁটতে গেলে তীব্র ব্যথা করছে। এমন সমস্যা হয়ে থাকে ব্লাড টেস্ট করে ইউরিক এসিডে মাত্রাটা দেখে নেবেন। প্রয়োজনের তুলনায় ইউরিক এসিডের মাত্রা বেড়ে গেলে এ সমস্যা দেখা দিতে পারে। বিস্তারিত লিখেছেন উত্তরা ক্রিসেন্ট হসপিটালের পুষ্টিবিদ সামসুন নাহার স্মৃতি

বিশেষজ্ঞদের মতে, মহিলাদের মধ্যে ইউরিক এসিডের মাত্রা ২-৬ মিলিগ্রাম/ডিএল এবং পুরুষদের মধ্যে ৩-৭.৬ মি গ্রা/ডি এল ইউরিক এসিডের স্বাভাবিক মাত্রা। শরীরে ইউরিক এসিডের পরিমাণ বেড়ে গেলে গিরায় ব্যথা হতে পারে, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনি অচল হওয়ার মতো জটিল সমস্যা দেখা দিতে পারে। কিছু খাবার আছে যেগুলো খেলে শরীরে ইউরিক এসিডের পরিমাণ বেড়ে যায়। কিছু পুষ্টিকর খাবার আছে, যেগুলো ইউরিক এসিড নিয়ন্ত্রণে ওষুধের মতো কাজ করবে। যেহেতু ইউরিক এসিড প্রোটিনের ভগ্নাংশ, তাই খাদ্য তালিকা থেকে লাল মাংস বিশেষ করে ফার্স্টক্লাস প্রোটিন ও অর্গান প্রোটিন খাদ্য তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে।

* ইউরিক এসিড বাড়লে সাময়িকের জন্য যেসব খাবার বাদ দিতে হবে

গরুর মাংস, বিশেষ করে গরুর কলিজা ফুসফুস-কিডনি ইত্যাদি অর্থাৎ অর্গান মিট বাদ দিতে হবে খাদ্য তালিকা থেকে। অধিক চর্বিযুক্ত গরুর মাংস, খাসির মাংস, ভেড়ার মাংস খাওয়া যাবে না। মাংস যদি খেতে চান, তাহলে একেবারে চর্বি ছাড়া মাংস অল্প পরিমাণে কোনো সবজির সঙ্গে রান্না করে খেতে পারেন। যদি ইউরিক এসি বেড়ে যায় বা বেড়ে যাওয়ার প্রবণতা রয়েছে, তাদের খাদ্য তালিকা থেকে সামুদ্রিক মাছ যেমন- ইলিশ, রূপচাঁদা, কোরাল, ভেটকি, চিংড়ি, লইট্যা এ জাতীয় সামুদ্রিক মাছ এবং অতিরিক্ত সোডিয়াম যুক্ত খাবার যেমন শুঁটকি মাছও খাদ্য তালিকা থেকে বাদ দেওয়া উচিত। সব ধরনের ডাল বিশেষ করে মসুর ডাল, মটরশুঁটি, সিমের বিচি, কাঁঠাল বিচি ইত্যাদি বিচিযুক্ত সবজি সাময়িকভাবে না খাওয়াই উচিত। অতিরিক্ত অক্সালের যুক্ত পুঁইশাক, পালংশাক, ব্রুকলি, ফুলকপি, বাঁধাকপি এড়িয়ে চলতে হবে। এ ছাড়া মাসরুম ও খাওয়া উচিত নয়। প্রসেস ফুড বা অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার খাদ্য তালিকা থেকে সম্পূর্ণরূপে পরিহার করতে হবে। এ ছাড়া চিপস, চানাচুর, পাপড়, চিনিযুক্ত শরবত, কোমল পানীয়, কেন ফুড, প্যাকেট ফুড, ফ্রোজেন ফুড, ফুড অ্যাডেটিভ ফুড কালারসহ খাদ্যগুলো তালিকা থেকে বাদ দেওয়াই ভালো। এছাড়া বাইরের ফাস্টফুড, জাঙ্ক ফুড, সল্ট যুক্ত খাবার থেকে সম্পূর্ণরূপে সাময়িকভাবে হলেও বাদ দিতে হবে।

* যেসব খাবার বেশি পরিমাণে খাওয়া উচিত

▶ পানি : ইউরিক এসিড নিয়ন্ত্রণের মূল মন্ত্র হচ্ছে বিশুদ্ধ পানি পান করা। স্বাভাবিক মানুষের যতটুকু পানির চাহিদা রয়েছে, যাদের ইউরিক এসিড বেশি বা বেড়ে গেছে, তাদের ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের চেয়েও অধিক পরিমাণে পানি গ্রহণ করা উচিত। কারণ, পানি গ্রহণের মাধ্যমে ইউরিনের সঙ্গে ইউরিক এসিড শরীর থেকে বের হয়ে যাবে। এ সময় প্রতিদিন তিন থেকে সাড়ে তিন লিটার বিশুদ্ধ পানি পান করা উচিত।

▶ ভিটামিন সি যুক্ত খাবার : যাদের ইউরিক এসি বেড়ে যায়, তাদের বেশি করে ভিটামিন সি যুক্ত খাবার খাওয়া উচিত। ভিটামিন সি আমাদের শরীর থেকে ইউরিক এসিড বের করতে সাহায্য করে। এ সময় বেশি করে টপ ফল বা ভিটামিন সি জাতীয় তাজা শাকসবজি রাখতে হবে দৈনিক খাদ্য তালিকায়। দৈনিক খাদ্য তালিকায় লেবু, মালটা আমলকি, জলপাই এবং টক জাতীয় ফল অন্ততপক্ষে একটি বা দুটি রাখতে হবে। তাছাড়া ইউরিক এসিড কমাতে নিয়মিত এক কাপ বা দু কাপ গ্রিন টি রাখতে পারেন দৈনিক খাদ্য তালিকায়।

▶ অধিক আঁশযুক্ত খাবার : শরীর থেকে ইউরিক এসিড কমাতে হলে বেশি আঁশযুক্ত খাবার খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে। রিফাইন কার্বোহাইড্রেটের পরিবর্তে জটিল কার্বোহাইড্রেট এক্স কার্বোহাইড্রেট; যেমন লাল চালের ভাত, লাল আটা অধিক আশ যুক্ত ও মাল্টিগ্রেইন আটা, যিড়ষব সিরিয়াল যুক্ত খাবার খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন। এছাড়া তাজা সবুজ শাকসবজি ও ফলমূলে প্রচুর খাদ্য আঁশ রয়েছে। মুরগির চামড়া এবং পাখনা খাওয়া যাবে না; কারণ এতে প্রচুর পরিমাণে চর্বি থাকে। পরিমাণমতো নদীর মাছ এবং কুসুম ছাড়া ডিম খেতে পারেন। ফ্যাট ছাড়া দুধ বা টক দই খাওয়া যেতে পারে। প্রচুর পরিমাণে গাঢ় সবুজ রঙের এবং হালকা সবুজ রঙের শাকসবজি রাখতে হবে দৈনিক খাদ্য তালিকায়।

গাঁটে গাঁটে ব্যথা কিংবা ঘুম থেকে উঠে পা ফেলতে কষ্ট হলে অবহেলা না করে রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে ইউরিক এসিডের মাত্রা জেনে নেওয়া উচিত। পুষ্টিবিদের পরামর্শ অনুযায়ী সঠিক খাদ্য তালিকা মেনে চললে এ ধরনের শারীরিক জটিলতা থেকে সহজে মুক্তি পাওয়া যাবে। ইউরিক এসিড বেড়ে গেছে বলে অযথা ভয় না পেয়ে আমরা যদি সঠিক সময়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করি, তবেই আমরা সুস্থ, স্বাভাবিক ও কর্মক্ষম জীবনযাপন করতে পারব।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম