Logo
Logo
×

সুস্থ থাকুন

বাড়ছে মশা, বাড়ছে ম্যালেরিয়ার ঝুঁকি

Icon

অধ্যাপক ডা. মো. মনজুর রহমান (গালিব)

প্রকাশ: ৩০ মার্চ ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বসন্তকাল প্রায় শেষ হতে চলেছে। শিগগির শুরু হবে গ্রীষ্মকাল। গরমের প্রকোপ এখনও তেমন শুরু না হলেও সেটা দরজায় কড়া নাড়ছে। সঙ্গে রয়েছে ক্ষণে ক্ষণে বৃষ্টির ঝাপটা। ফলে স্বাভাবিকের তুলনায় বাড়ছে মশার প্রজনন। সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে ম্যালেরিয়ার ঝুঁকিও। রাজধানীসহ দেশের প্রায় প্রতিটি অঞ্চলেই এ রোগের প্রকোপ দেখা যায়। বিশেষ করে সীমান্তবর্তী, পাহাড় ও বনাঞ্চলবেষ্টিত পার্বত্য এলাকায় ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা অনেক বেশি থাকে। বাংলাদেশের তিন পার্বত্য জেলা বান্দরবান, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়িতে এর প্রকোপ বেশি। তবে রাজধানীতে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা থাকে বেশি। এর কারণ, যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনা ফেলা, বৃষ্টির পানি জমে থাকা এবং সেখানে মশার জন্ম নেওয়া। এসব মশার মধ্যে অ্যানোফিলিস জাতীয় মশা ম্যালেরিয়া রোগের জন্য অন্যতম দায়ী।

* ম্যালেরিয়া কী ও কেন হয়

পৃথিবীর প্রাচীন মশাবাহিত রোগগুলোর মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত রোগ ম্যালেরিয়া। সাধারণত অ্যানোফিলিস মশার মাধ্যমে এটি ছড়ায়। এটি প্লাজমোডিয়াম পরজীবী দ্বারা সৃষ্ট একধরনের সংক্রামক রোগ। প্লাজমোডিয়াম জীবাণুর পাঁচটি ধরন রয়েছে। এর মধ্যে প্লাজমোডিয়াম ফ্যালসিপ্যারাম জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত রোগীর জটিলতা বেশি। সেক্ষেত্রে প্লীহা ও যকৃৎ বড় হয়ে যেতে পারে। এছাড়া লোহিত রক্তকণিকা ধ্বংস হওয়ার কারণে রক্তশূন্যতাও দেখা দিতে পারে। সঠিক সময়ে রোগনির্ণয় এবং চিকিৎসা না করলে এটি গুরুতর হয়ে উঠতে পারে। এখন পর্যন্ত ৬০টির বেশি প্রজাতির ম্যালেরিয়া পরজীবী আবিষ্কৃত হলেও ম্যালেরিয়ার জন্য দায়ী মূলত ৪টি প্রজাতি। প্লাজমোডিয়াম ভাইভাক্স, ফ্যালসিপ্যারাম, ম্যালেরি ও ওভাল। এর যেকোনো একটি জীবাণু বহনকারী মশার কামড়ে ম্যালেরিয়া হতে পারে।

* উপসর্গ

ম্যালেরিয়ার প্রধান উপসর্গ নির্দিষ্ট সময় পরপর কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসা। জ্বরের তাপমাত্রা ১০৫ থেকে ১০৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত হতে পারে। এছাড়া যেসব উপসর্গ দেখা দিতে পারে- সারাক্ষণ জ্বর অনুভূত হওয়া. অতিরিক্ত ঘাম হওয়া, মাথা ও শরীরে তীব্র ব্যথা, তলপেটে ব্যথা, অনিদ্রা, ক্ষুধামন্দা, কোষ্ঠকাঠিন্য, বমিভাব/বমি, ক্লান্তি ও অবসাদ, খিঁচুনি, হৃৎস্পন্দনের গতি বৃদ্ধি, কাশি, প্লীহা ও যকৃৎ বড় হয়ে যাওয়া।

* রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা

রোগী ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে কি না তা রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া যায়। সেক্ষেত্রে ব্লাড ফিল্মস করে এ পরীক্ষা করা হয়। প্রথমবার পরীক্ষায় যদি ম্যালেরিয়া শনাক্ত না হয় তাহলে পর পর তিনদিন পরীক্ষাটি করা উচিত। বেশিভাগ ক্ষেত্রেই রোগী চিকিৎসা শুরুর এক সপ্তাহের মধ্যে সুস্থ হয়ে যায়। তবে ম্যালেরিয়ার সবচেয়ে জটিল ধরন ম্যালিগন্যান্ট ও ফ্যালসিপ্যারাম ম্যালেরিয়া। এ দুই ধরনের কোনোটিতে আক্রান্ত হলে রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক হতে পারে। সেক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের জটিলতা যেমন রক্তশূন্যতা, কিডনি জটিলতা, শ্বাসকষ্ট, জন্ডিস, খিঁচুনি প্রভৃতি দেখা দিতে পারে। তাই ম্যালেরিয়া সন্দেহ হলে দ্রুত রক্ত পরীক্ষা করে রোগীর চিকিৎসা শুরু করতে হবে।

* ম্যালেরিয়ার ঝুঁকি কার বেশি

▶ ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত রোগীর শরীর থেকে রক্ত গ্রহণকারী ব্যক্তি।

▶ ম্যালেরিয়াপ্রবণ এলাকায় যারা বসবাস করেন বা বেড়াতে যান।

▶ শিশু ও বয়স্কদের ক্ষেত্রে ম্যালেরিয়া মারাত্মক হতে পারে।

▶ গর্ভবর্তীর ম্যালেরিয়া হলে গর্ভস্থ শিশুরও ম্যালেরিয়া হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

* প্রতিরোধে যা করবেন

ম্যালেরিয়ার টিকা আবিষ্কৃত হলেও তা এখনো সহজলভ্য নয়। তাই ম্যালেরিয়ার প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধে গুরুত্ব দেওয়া জরুরি। ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হলে প্রচুর তরল খাবার খাওয়া এবং প্রচুর পানি পান করা দরকার। এ সময় দেহে শক্তি ধরে রাখতে আঁশযুক্ত খাবার বেশি খেতে হবে। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের মসলা যেমন- আদা, দারুচিনির গুঁড়া কিংবা মেথি ভেজানো পানি খেতে পারেন।

* ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে করণীয়

▶ ঘরের দরজা-জানালায় মশাপ্রতিরোধক জাল ও ঘরে স্প্রে ব্যবহার করুন।

▶ বাড়ির আশপাশে জমে থাকা পানি সরিয়ে ফেলুন। পানি জমে যেন মশা বংশবিস্তার না করতে পারে সেদিকে খেয়াল রাখুন।

▶ দিনে বা রাতে ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি ব্যবহার করুন।

▶ ত্বকে মশাপ্রতিরোধক ক্রিম ব্যবহার করতে পারেন।

▶ জলাবদ্ধ এলাকা নিয়মিত পরিষ্কার রাখুন।

▶ মশাবহুল স্থানে কীটনাশক ছিটিয়ে দিন।

▶ ম্যালেরিয়াপ্রবণ এলাকায় বেড়াতে গেলে সাবধান থাকুন।

▶ ম্যালেরিয়াসহ মশাবাহিত বিভিন্ন রোগ থেকে নিরাপদ থাকতে সচেতন থাকা জরুরি।

লেখক : সিনিয়র কনসালট্যান্ট, মেডিসিন বিভাগ, চেম্বার : ল্যাবএইড স্পেশালাইজড হাসপাতাল, ঢাকা।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম