ভিটামিন ‘এ’-এর অভাবে কী হয়
ডা. সিএম শামীম কবীর
প্রকাশ: ০১ জুন ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
ভিটামিন ‘এ’, যেটি রেটিনল নামেও পরিচিত। এটি একটি ফ্যাট-সল্যুবল বা দ্রবণীয় ভিটামিন। এটি ফোটোরিসেপ্টিভ আই পিগমেন্ট তৈরিতে দরকার, যাকে রোডোপসিন বলা হয়। দৃষ্টিশক্তি, বিশেষ করে রাতের দৃষ্টির জন্য ভিটামিন ‘এ’ প্রয়োজন। এছাড়া ভিটামিন ‘এ’ কোষের পূর্ণতা এবং বৃদ্ধিতে, রোগ-প্রতিরোধ কার্য ও ভ্রূণের গঠনে সাহায্য করে। এর অভাবে আরও অনেক গুরুতর রোগের সৃষ্টি হয়; বিশেষ করে, চোখ ও চোখের দৃষ্টি সম্পর্কিত ব্যাপারে।
* লক্ষণ ও উপসর্গ
ভিটামিন ‘এ’-এর অভাবে সৃষ্ট সমস্যার লক্ষণ ও উপসর্গগুলোর মধ্যে রয়েছে-
▶ রাতে দেখতে না পাওয়া : কম আলোতে এবং রাতের বেলায় দেখতে না পাওয়া।
▶ জেরোফথালমিয়া : চোখ কেরাটিনাইজড হয়ে যায়; এতে কনজাঙ্কটিভা (চোখের কর্নিয়ার পাতলা স্বচ্ছ আচ্ছাদন) ও কর্নিয়া শুষ্ক এবং ঘন হয়ে যায়। এমনকি দিনেরবেলায়ও দেখতে অসুবিধা হয়।
▶ বাইটট দাগ : কনজাঙ্কটিভাতে খারাপ এপিথেলিয়াল কোষ জমা হতে থাকে। এর ফলে চোখের সাদা অংশে দাগ পড়ে।
▶ কেরাটোম্যালাসিয়া : কর্নিয়া অস্পষ্ট এবং ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। এটি একটি স্থায়ী ক্ষত। ত্বক-কেরাটিনাইজড হয়ে যায়, ফলস্বরূপ শুষ্ক, আঁশযুক্ত ত্বক দেখা দেয় এবং চুলকানি হয়।
ভিটামিন ‘এ’-এর অভাবের উপসর্গগুলো ছোট বাচ্চাদের বেশি দেখা যায় এবং তাদের বৃদ্ধিও কম হয়। খুব বেশি অভাব হলে সেই বাচ্চার মৃত্যুও হতে পারে।
* কী কারণে ঘাটতি হয়
ভিটামিন ‘এ’-এর অভাব প্রাথমিকভাবে ভিটামিন ‘এ’ কম গ্রহণ করলে ঘটে। ভুল খাদ্যাভ্যাসের কারণে, সঠিক খাবারের অভাবে বা ভিটামিন ‘এ’তে ভরপুর খাবার না খাওয়ার কারণে হয়। এছাড়া প্রোভিটামিন ‘এ’-এর পাওয়া মুশকিল হয়ে গেলে এবং খাবার শোষণ, মজুত হওয়া ও সরবরাহে বাধার কারণেও ভিটামিন ‘এ’-এর গৌণ অভাব ঘটে। প্যানক্রিয়াটিক এনজাইমের অভাবে, সেলিঅ্যাক অসুখে, তীব্র ডায়রিয়া, পিত্তনালির বাধা, লিভার সিরোসিস, সিস্টিক ফাইব্রোসিস ও জিয়ারডিয়াসিসের জন্য ভিটামিন ‘এ’-এর শোষণ বাধাপ্রাপ্ত হয়।
* রোগ নির্ণয়
সাধারণত শারীরিক সমস্যাগুলো দেখেই চিকিৎসকরা ভিটামিন ‘এ’-এর অভাব আছে কী না সেটা বুঝতে পারেন। এছাড়া নিম্নোক্ত ক্লিনিক্যাল পরীক্ষাগুলো করেও ভিটামিন ‘এ’-এর অভাব নির্ণয় করা যায়।
▶ সিরাম রেটিনল মাত্রা : এর মাধ্যমে ভিটামিন ‘এ’-এর অভাব নিশ্চিতভাবে নির্ণয় করা যায়।
▶ চোখের পরীক্ষা : অফথ্যালমোস্কোপের সাহায্যে চোখ দেখা এবং স্লিট ল্যাম্প বায়োমাইক্রোস্কপি ও কনফোকাল মাইক্রোস্কপির মাধ্যমে চোখের অবস্থার পরিবর্তন দেখে ভিটামিন ‘এ’-এর অভাব নিশ্চিত করা যায়।
▶ থেরাপিউটিক ট্রায়াল : ভিটামিন ‘এ’যুক্ত ক্যাপসুল খাইয়ে এর অভাব নির্ণয় করাকে থেরাপিউটিক ট্রায়াল বলে।
* চিকিৎসা
ভিটামিন ‘এ’ অভাবের চিকিৎসা ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধ খাদ্যের গ্রহণ বাড়িয়ে, মৌখিক বা ইন্ট্রাভেনাস সম্পূরক ব্যবহারের দ্বারা করা হতে পারে।
▶ ভিটামিন ‘এ’ যুক্ত খাবার : ডিমের কুসুম, কড লিভার তেল, মাখন, চেড্ডার চিজ, গাজর, পালংশাক বা পাতা কপি, বাঁধাকপি, ড্যান্ডেলিয়ন, লালমরিচ ইত্যাদি।
▶ সম্পূরক : মৌখিক বা ইনজেকশনের মাধ্যমে ভিটামিন ‘এ’ (ভিটামিন ‘এ’ প্যালমিটেট)-এর অভাব মেটাতে সাহায্য করে।
আজ জাতীয় ভিটামিন ’এ’ প্লাস ক্যাম্পেইন। আজ ৬-১১ মাস বয়সী শিশুকে একটি নীল রঙের ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল এবং ১২-৫৯ মাস বয়সী শিশুকে একটি লাল রঙের ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়াতে হবে।
লেখক : মেডিসিন ও ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ, ল্যাবএইড ডায়াগনস্টিক ও কনসালটেশন সেন্টার, উত্তরা, ঢাকা।
