স্ট্রোক হলে কী করবেন
ডা. মো. শহীদুল্লাহ সবুজ
প্রকাশ: ০৬ জুলাই ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
অনেকে মনে করেন স্ট্রোক হৃৎপিণ্ডের রোগ। এটি একেবারেই ভুল ধারণা। স্ট্রোক মূলত মস্তিষ্কের রোগ। মস্তিষ্কের রক্তবাহী নালিতে রক্ত চলাচলের ব্যাঘাতই স্ট্রোক। সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য আমাদের শরীরের প্রতিটি কোষে, এমনকি মস্তিষ্কের কোষেও অক্সিজেন-সমৃদ্ধ রক্ত সঞ্চালন প্রয়োজন। কোনো কারণে মস্তিষ্কের রক্তবাহী ধমনির পথ সংকীর্ণ হয়ে বা বাধাপ্রাপ্ত হয়ে রক্ত চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেলে মস্তিষ্কের কোষ অক্সিজেনের অভাবে নিস্তেজ হয়ে যায়। চিকিৎসকরা এ সমস্যাকে স্ট্রোক বলে চিহ্নিত করেন। বিস্তারিত লিখেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও ল্যাবএইড স্ট্রোক সেন্টারের ইন-চার্জ ডা. মো. শহীদুল্লাহ সবুজ
* স্ট্রোকের প্রকারভেদ
▶ ইসকেমিক স্ট্রোক : ইসকেমিক স্ট্রোকে রক্ত চলাচল থেমে যায়। রক্তের মধ্যে ভেসে বেড়ানো চর্বি হঠাৎ মস্তিষ্কের ধমনিতে আটকে গিয়ে রক্ত চলাচল বন্ধ করে দেয়। ফলে কোষ অক্সিজেনের অভাবে নিস্তেজ হতে হতে অকেজো হয়ে যায়। এ ধরনের স্ট্রোককে ইসকেমিক স্ট্রোক বলে।
* হেমারেজিক স্ট্রোক : হেমারেজিক স্ট্রোকে দুর্বল রক্তনালি ছিঁড়ে যায় বা ফেটে যায়। এতে মস্তিষ্কে রক্তপাত হয়, রক্ত চলাচল ব্যাহত হয়। এ ধরনের স্ট্রোক সাধারণত ইসকেমিক স্ট্রোকের চেয়ে বেশি মারাত্মক হয়।
এছাড়া ট্রান্সিয়েন্ট ইসকেমিক স্ট্রোক বা ওয়ার্নিং স্ট্রোক নামে আরও এক ধরনের স্ট্রোক আছে। এক্ষেত্রে ২৪ ঘণ্টার কম সময়ের জন্য রোগী স্ট্রোকের মতো উপসর্গে ভোগে, যা মাইল্ড স্ট্রোক নামে পরিচিত। যথাযথ চিকিৎসা না নিলে, এদের প্রতি ১০ জনে ১ জন তিন মাসের মধ্যে মেজর স্ট্রোকে আক্রান্ত হন।
* কারণ
বিভিন্ন কারণে স্ট্রোক হতে পারে। তবে এর মধ্যে হাইপারটেনশন বা উচ্চরক্তচাপ অন্যতম। বলা হয়ে থাকে, শুধু রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমেই ৫০ শতাংশ স্ট্রোক কমানো সম্ভব।
* অন্যান্য কারণ
▶ ডায়াবেটিস।
▶ রক্তে চর্বির মাত্রা বেশি হওয়া।
▶ অতিরিক্ত মানসিক চাপ, হতাশা।
▶ অতিরিক্ত পরিশ্রম করা অথবা একদমই কায়িক শ্রম না করা।
▶ অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস। ফাস্টফুড, অতিরিক্ত তেলযুক্ত, ভাজাপোড়া খাবার খাওয়া।
▶ ধূমপান।
▶ মাদকাসক্তি।
▶ রক্তে কোলেস্টেরল বেড়ে যাওয়া।
▶ হার্টের সমস্যা।
* প্রাথমিক লক্ষণ
▶ হঠাৎ হাত-পা বা শরীরের অন্য কোনো অঙ্গ অবশ হয়ে আসে।
▶ দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসে। কখনো কখনো ডাবল ভিশন হয়।
▶ জিহ্বা অসাড় হয়ে যাওয়া বা কথা বলতে অসুবিধা হওয়া।
▶ অল্প সময়ের জন্য চোখে অন্ধকার দেখা। অর্থাৎ ব্ল্যাক আউট হয়ে যাওয়া।
▶ কাজ করতে করতে হাত-পা বা শরীরের কোনো একদিক হঠাৎ পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে যাওয়া।
▶ মুখ থেকে লালা ঝরা।
▶ হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে যাওয়া এবং খিঁচুনি হওয়া।
▶ হতবিহ্বল হয়ে পড়া বা ভারসাম্য হারিয়ে ফেলা।
* স্ট্রোক হলে কী করবেন
কোনো রোগীর ওপরের লক্ষণগুলো দেখা দিলে বুঝতে হবে, তার স্ট্রোক হয়েছে। এ সময় আতঙ্কিত না হয়ে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। স্ট্রোকের চিকিৎসা অনেকাংশেই এর ধরনের ওপর নির্ভর করে, যেমন-ইসকেমিক স্ট্রোকে সাধারণত যে চিকিৎসা দেওয়া হয় হেমোরেজিক স্ট্রোকে তা কার্যকর নয়। হেমোরেজিক স্ট্রোকে অনেক সময় অপারেশনের প্রয়োজন হয়। স্ট্রোক হলে সাধারণত উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা দেওয়া হয়। যেমন-খেতে না পারলে নল দিয়ে খাওয়ানো। প্রস্রাব-পায়খানা নিয়মিতকরণের ব্যবস্থা করা। প্রয়োজনে প্রস্রাবের রাস্তায় ক্যাথেটার দেওয়া। বেডশোর প্রতিরোধ করার জন্য প্রতি ২ ঘণ্টা পরপর রোগীকে পাশ ফেরানো। জীবাণুর সংক্রমণ যেন না হয়-এজন্য চোখ, মুখ ও ত্বকের যত্ন নেওয়া। প্রয়োজনে রোগীকে উপযুক্ত অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া যেতে পারে। শুধু রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমেই ৫০ শতাংশ স্ট্রোক কমানো সম্ভব।
* প্রতিরোধে করণীয়
▶ ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
▶ নিয়মিত শরীরচর্চা বা হাঁটার অভ্যাস করুন। তবে খেয়াল রাখতে হবে, তা যেন অতিরিক্ত না হয়ে যায়।
▶ ধূমপান ও মদ্যপান পরিহার করুন।
▶ পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন।
▶ মানসিক চাপ ও উদ্বেগ নিয়ন্ত্রণ করুন। প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হোন।
▶ উচ্চরক্তচাপ কিংবা ডায়াবেটিস থাকলে তা নিয়ম মেনে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
▶ যদি হঠাৎ হাত, পা বা শরীরের কোনো একটা দিক অবশ, অসাড় লাগে বা চোখে দেখতে বা কথা বলতে অসুবিধা হয় অথবা ঢোক গিলতে কষ্ট হয়, সেক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন। চিকিৎসক তাৎক্ষণিকভাবে যা করণীয় সেটা করবেন।
