Logo
Logo
×

সুস্থ থাকুন

ডায়রিয়া হলে কী খাবেন

Icon

আখতারুন নাহার আলো

প্রকাশ: ০৬ জুলাই ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

এ সময় অনেকেই ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। বিভিন্ন কারণে ডায়রিয়া হতে পারে যেমন-অতিরিক্ত বা অসময়ে খাওয়া, ভুল খাদ্য গ্রহণ, খাবার কম হজম হওয়া, স্নায়ুতন্ত্র উত্তেজিত হওয়া ইত্যাদি। অন্য কারণের মধ্যে আছে-পরজীবীর সংক্রমণ এবং জীবাণু, ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া। দূষিত খাদ্য ও পানি খাবারের মাধ্যমে দেহে প্রবেশ করলে কোনো কোনো সময় খাবারে অরুচি ও অ্যালার্জি থাকলেও ডায়রিয়া হতে পারে।

ক্রমাগত ডায়রিয়া থাকলে ইলেকট্রোলাইটের অসমতা অর্থাৎ দেহে সোডিয়াম-পটাশিয়াম-ক্লোরাইডের অসমতা এবং অন্য পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি দেখা যায়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে চরম পানিশূন্যতার কারণে, খিঁচুনিসহ প্রাণহানির আশঙ্কা দেখা দেয়। এ সময় দিতে হবে উচ্চমানের সহজপাচ্য আমিষযুক্ত খাবার, ডাবের পানি, ফলের রস, লাল চা। হজমের সুবিধার জন্য মাছ-মাংসের কিমা, সিদ্ধ ডিম দেওয়া যেতে পারে। ডিমের সাদা অংশ, ঘোল ও কাঁচা-পাকা কলা ডায়রিয়ায় বেশ কার্যকর। খাবারে ডাল না রাখাই ভালো। শিং-মাগুর ও কচি মুরগির মাংসের পাতলা ঝোল দিলে ভালো হয় সঙ্গে আলু, পেঁপে, কাঁচা কলা, লাউ, জালি অথবা অন্য কোনো আঁশ ছাড়া সবজি দিলে ভালো হয়। ডায়রিয়াতে সহজপাচ শর্করা দিতে হবে। পরিজ, সাগু, টোস্ট বিস্কুট, এরারুট, বার্লি, চিড়া, ভিজানো মুড়ি দিলে ভালো হয়। এছাড়া পাউরুটি-জেলি-জাউভাত দিলে কোনো ক্ষতি নেই। ফলের মধ্যে কলা, কমলা, পাকা পেঁপে, ডাব, সিদ্ধ আপেল, ডালিম বেশ কার্যকর।

চর্বিযুক্ত খাবারের মধ্যে ঘি, ডাল, মাংসের চর্বি, সহজে হজম হয় না বলে যত কম দেওয়া যায় ততই ভালো। তবে মাখন ও তেল সহজপাচ্য দিতে পারেন। ঘনঘন পাতলা পায়খানা হওয়ার ফলে শরীর থেকে বেশ পানি বেরিয়ে যায়। এ সময় পানিশূন্যতা বা ডিহাইড্রেশন একটি ভয়ংকর সমস্যা। বিশেষ করে ডায়রিয়া ও বমি যদি একসঙ্গে থাকে। এতে দেহত্বক শুকনো, বিবর্ণ ও গরম হয়। মুখের ভেতরটা শুকিয়ে যায় ও হাত-পায়ে খিঁচুনি হয়। তখন লবণ-গুড়ের শরবত বা রাইস স্যালাইন খাওয়ালে আস্তে আস্তে সুস্থতা ফিরে আসে। এ সময় জিঙ্ক ট্যাবলেট খুবই উপকারী। রোগীকে একেবারে উপবাস না রেখে তরল খাবার দিতে হবে। আধাঘণ্টা বা একঘণ্টা পরপর দিতে হবে লবণ-পানি, কাপড়ে ছাঁকা ফলের রস, ঘোল, বার্লির শরবত, ডাবের পানি, পাতলা সুজি, চিড়ার মণ্ড, ক্লিয়ার স্যুপ, চালের গুড়ার স্যালাইন। এছাড়া চিনি-গুড়-মধু মেশানো লেবুর শরবত দিলে খনিজ লবণ গ্রহণেও নিশ্চিত হওয়া যাবে। এরপর ২-৩ ঘণ্টা পরপর নরম পথ্য যেমন-লবণ মেশানো জাউভাত, সিদ্ধ মাছ, সিদ্ধ সবজি ও অর্ধসিদ্ধ ডিম দিতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী রোগীকে ওষুধ, খাবার ও বিশ্রামের ব্যবস্থা করতে হবে।

বাদ দিতে হবে ডুবো তেলে ভাজা খাবার, মসলা ও ঝালযুক্ত খাবার, পরোটা, বিরিয়ানি, খিচুড়ি, মিষ্টি চাটনি, কাঁচা সবজি, আঁশযুক্ত খাবার, দুধ ও দুধের তৈরি খাবার, ভুসিযুক্ত রুটি, মাংস ইদ্যাতি। ডায়রিয়ায় কতগুলো খাবার বেশ উপকারী, যেমন-গাজরের স্যুপ, কাঁচা ও পাকা কলা, হলুদের গুঁড়া, ঘোল, রসুন, ডাবের পানি। গাজরে রয়েছে সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ফসফরাস, ক্যালসিয়াম, সালফার, ম্যাগনেশিয়াম। এটা অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে ও বমি রোধ করে। কাঁচা কলায় আছে রেজিস্ট্যান্ট বা প্রতিরোধী শ্বেতসার ও প্রোবায়োটিক, যা ডায়রিয়ায় ফলপ্রসূ। আবার পাকা কলায় আছে পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও পেকটিন। এটা উপকারী ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি ঘটায়। ছোট শিশু থেকে বৃদ্ধ সবাই কলা হজম করতে পারে। হলুদের গুঁড়া মসলা হিসাবে ব্যবহার হয়। এটাও অন্ত্রের জীবাণু ধ্বংস করে। রসুন জীবাণুনাশক ও হজমকারক। এটি ডায়রিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করে ও প্যারাসাইট ধ্বংস করে।

ডায়রিয়া হলে স্যালাইন একটি কার্যকর ওষুধ। যে ধরনের স্যালাইন খাওয়া হোক না কেন ২৪ ঘণ্টার বেশি তৈরি করা স্যালাইন রাখা যাবে না এবং প্যাকেটের গায়ের নির্দেশ অনুযায়ী বানাতে হবে আর জীবাণুমুক্ত নিরাপদ পানি ব্যবহার করতে হবে।

লেখক : চিফ নিউট্রিশন অফিসার ও বিভাগীয় প্রধান (অব.), বারডেম। সভাপতি, ডায়াবেটিস নিউট্রিশনিস্ট সোসাইটি অব বাংলাদেশ, পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার, শ্যামলী ও অ্যাডভান্স হাসপাতাল, ঢাকা।

 

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম