Logo
Logo
×

সুস্থ থাকুন

গর্ভকালীন অসুস্থতায় কী খাবেন

Icon

আখতারুন নাহার আলো

প্রকাশ: ০৩ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

গর্ভাবস্থা কোনো রোগ নয়। প্রাকৃতিক নিয়মেই গর্ভ সঞ্চার হয়। এ সময় এমনিতেই নারীদের অসুস্থতা লেগেই থাকে। এর মধ্যে কিছু কিছু অসুস্থতা দেখা যায়, যা তাদের এবং ভ্রূণের স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। এজন্য এ সময় চিকিৎসকের পরামর্শ, পারিবারিক সহযোগিতা এবং নিজেদের জ্ঞান নিয়ে চলতে পারলে স্বাস্থ্য সুরক্ষা সম্ভব হয়।

* রক্তস্বল্পতা

মায়ের রক্তস্বল্পতা থাকলে বাচ্চার ওজন কম হয় ও বৃদ্ধি হ্রাস পায়। এর ফলে নির্দিষ্ট সময়ের আগে সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। আবার কোনো কোনো সময় মায়ের জীবনহানির আশঙ্কা দেখা যায়। শতকরা ৭৫ ভাগ নারী এ সমস্যায় ভুগে থাকেন। খাবারে চাহিদামতো লৌহ, ফলিক অ্যাসিড, ভিটামিন বি১২ ও আমিষের অভাবে রক্তস্বল্পতা দেখা দেয়। কারণ এগুলোর অভাবে হিমোগ্লোবিন উৎপাদনে ব্যাহত হয়। শরীরে হিমোগ্লোবিন কম থাকলে মাথা ঘোরা, হাত পা ঝিম ঝিম করা, দুর্বলতা, অবসাদ বা ক্লান্তি ইত্যাদি দেখা দেয়। খাবারে পর্যাপ্ত পরিমাণে আমিষযুক্ত খাবার যেমন-কলিজা, ডিম, মাছ, মাংস, ডাল, বাদাম, ছোলা এবং খেজুর, বিট, তাল, চালতা, আপেল, নাশপাতি, পেয়ারা টকদই, ভিটামিন সি জাতীয় খাবার থাকতে হবে। চায়ের অভ্যাস থাকলে তা বাদ দিতে হবে।

* অস্টিওম্যালেশিয়া

অপর্যাপ্ত খাবার ও সূর্যের আলোর অভাবে গর্ভবতীর এ রোগ হতে দেখা যায়। এতে হাড়ের ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস ক্ষয় হয়ে হাড় ক্রমশ নরম ও দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলে হাঁটাচলা করতে অসুবিধা হয়। কখনো কখনো কোমরে ও পায়ে বাতের মতো ব্যথা হয়। পায়ের হাড় ও মেরুদণ্ড বেঁকে যেতে দেখা যায়। যারা হাত-পা কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখে সেই নারীদের এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এর কারণ সূর্যের আলো তাদের গায়ে লাগে না। প্রতিদিন ভিটামিন ‘ডি’ গ্রহণ করলে এটা প্রতিরোধ করা যায়। এজন্য খেতে হবে ডিমের কুসুম, মাখন, দুধ, ঘি, ছানা, সামুদ্রিক মাছ ও সমুদ্রের শৈবাল। সঙ্গে কডলিভার অয়েল ২/৩ চা চামচ খেতে পারলে ভালো হয়।

* মর্নিং সিকনেস

গর্ভাবস্থার প্রথম তিন-চার মাস পর্যন্ত সকালের দিকে বমি বা বমিভাব হয়ে থাকে। দিনের অন্য সময়ের চেয়ে সকালে ঘুম থেকে উঠার পর এ সমস্যা বেশি দেখা যায়। এ জন্যই একে মর্নিং সিকনেস বলা হয়। হরমোনাল কারণ ছাড়াও গর্ভকালীন দুশ্চিন্তা ও ভয় থেকে এটা হতে পারে। শুকনা খাবার যেমন টোস্ট বিস্কুট, মুড়ি, ভুট্টার খই, ধানের খই, শুকনা কর্নফ্লেক্স, তেল ছাড়া চিড়া ভাজা ইত্যাদি এসব সমস্যা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। এ সময় একবারে বেশি না খেয়ে বারবার কম করে খেলে উপকার পাওয়া যায়। খাবারের ফাঁকে ফাঁকে তরল খাবার যেমন-শরবত, পানি, ফলের রস, স্যুপ খেলে ভালো হয়। এছাড়া আদা, পুদিনাপাতা, আমলকী বমিভাব দূর করতে সাহায্য করে। এ সময় অনেক চর্বিযুক্ত খাবার, ডুবো তেলে ভাজা খাবার, বেশি মাত্রায় কফি, তীব্র গন্ধযুক্ত খাবার না খাওয়াই ভালো।

* কোষ্ঠকাঠিন্য

গর্ভকালীন অনেকেরই এ সমস্যা কম-বেশি দেখা যায়। এ জন্য আঁশজাতীয় খাবার রাখতে হবে। যেমন-গমের রুটি, লাল চাল, শস্য, শিম, বরবটি, মটর, বিভিন্ন ধরনের ডাল, শাকসবজি খোসাসহ ফল ইত্যাদি। খাদ্যের আঁশ পানি শোষণ করে বলেই মলের পরিমাণ ও চাপ বাড়াতে এটি সাহায্য করে। কোষ্ঠকাঠিন্য হলে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ হয় না। মাথা ধরে, মুখে দুর্গন্ধ হয়, জিহ্বায় সাদা আস্তরণ পড়ে। খাবারে রুচি থাকে না বলে গর্ভবতী মায়েদের ওজন কমে যেতে দেখা যায়। এ সময় তরল খাবারের পরিমাণ বাড়াতে হবে। যাতে খাবার সহজেই হজম হয়। এ সময় হালকা ব্যায়াম ও পর্যাপ্ত ঘুম জরুরি। রেচক জাতীয় ওষুধ (Laxative) চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া গ্রহণ না করাই ভালো।

* গর্ভকালীন ডায়াবেটিস বা Gestational Diabetes (GDM)

গর্ভকালীন রক্তে শর্করার পরিমাণ বেশি থাকলে অন্যান্য সাধারণ গর্ভবতীর চেয়ে বেশি সতর্ক থাকা প্রয়োজন। কারণ শর্করা বেশি থাকার জন্য বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা যায়। এ সময় ডায়াবেটিস ধরা পড়াকে জিডিএম বা জ্যাসটেশনাল ডায়াবেটিস মেলাইটাস বলা হয়। সমস্যাগুলো হলো-প্রস্রাবে সংক্রমণ, উচ্চরক্তচাপ, দেহে জলীয় পদার্থের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া, সময়ের আগে শিশুর জন্ম হওয়া, প্রসব দীর্ঘায়িত হওয়া বা প্রসবের সময় বিভিন্ন জটিলতা দেখা দেওয়া, জরায়ুর ভেতর নবজাতকের মৃত্যু, খুব ছোট বা খুব বড় শিশুর জন্ম, যে কোনো অঙ্গের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি, শিশুর রক্তে শর্করার পরিমাণ কমে যাওয়া। নবজাতকের শ্বাসকষ্ট এবং পরবর্তী সময়ে বাচ্চার ডায়াবেটিস ও হৃদরোগের আশঙ্কা থাকা ইত্যাদি। এসব কারণে গর্ভকালীন রক্ত শর্করার পরিমাণ খালি পেটে ও খাবারের ২ ঘণ্টা পর ৬.০ মিলিমোলের নিচে এবং HbA1C ৬.৫% মিলিমোলের নিচে থাকা উচিত। খাবার হবে কম চর্বি কম শর্করাযুক্ত ও উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ। নিয়মিতভাবে দৈনিক তিনটি প্রধান খাবার সকাল, দুপুর ও রাতে এবং দুই বা তিনটি হালকা নাশতা করতে হবে। খাবারে দুধ ও মাছ-মাংস আগের তুলনায় বাড়িয়ে দিতে হবে। কেবল চিনি, মিষ্টি, গুড়, মধু এবং মিষ্টি ফল বাদ দিতে হবে। আবার রক্ত শর্করা স্বাভাবিক রাখার জন্য খুব কম খাবার খাওয়া যাবে না। এতে ওজন কমে যাবে এবং হাইপোগ্লাইসেমিয়া হয়ে জটিলতার সৃষ্টি হবে। মোট কথা জিডিএম মায়ের খাবার হবে সুষম, পুষ্টিসম্মত, সহজপাচ্য, মিষ্টি ও মিষ্টি ফল বর্জিত। তাহলেই জটিলতাগুলো এড়ানো যাবে।

লেখক : চিফ নিউট্রিশন অফিসার ও বিভাগীয় প্রধান (অব.), বারডেম। সভাপতি, ডায়াবেটিস নিউট্রিশনিস্ট সোসাইটি অব বাংলাদেশ, পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার, শ্যামলী ও অ্যাডভান্স হাসপাতাল, ঢাকা।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম