Logo
Logo
×

সুস্থ থাকুন

জটিল চর্মরোগ সোরিয়াসিস

Icon

ডা. মাহমুদ চৌধুরী

প্রকাশ: ২৪ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

হৃদির বয়স ৩৫। সম্প্রতি তিনি লক্ষ্য করেন, তার হাতের ত্বক অত্যন্ত খসখসে হয়ে গেছে। রান্না ও অন্যান্য কাজে বারবার হাত ধোওয়ার কারণে এমন হয়ে থাকতে পারে ভেবে শুরুতে তেমন গুরুত্ব দেননি। কিন্তু ধীরে ধীরে তার হাত আরও খসখসে হয়ে যেতে থাকে। চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলে জানতে পারেন তিনি সোরিয়াসিস নামক এক ধরনের চর্মরোগে আক্রান্ত হয়েছেন। যেহেতু তার বাবার এ রোগ ছিল তাই বংশগতভাবেই তিনি রোগটি পেয়েছেন। সোরিয়াসিসে পারিবারিক ইতিহাস খুব গুরুত্বপূর্ণ। এটি পুরোপুরি নিরাময় হয় না, তবে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।

* কেন হয়

সোরিয়াসিস এক বিশেষ ধরনের চর্মরোগ। এটি সংক্রামক বা ছোঁয়াচে নয়। সাধারণত শরীরের বিভিন্ন স্থানের ত্বকে, বিশেষ করে হাঁটু, কনুই, পিঠ, হাত ও পায়ের তালু এবং মাথার ত্বকে লালচে ছোপ পড়ে। এরপর ত্বকে রুপালি বা সাদা খসখসে মাছের আঁশের মতো পরিবর্তন দেখা দেয়। এ অবস্থাকে বলা হয় সিলভার স্কেল। মাথার ত্বকে সোরিয়াসিস হলে অনেকসময় তা খুশকি মনে হতে পারে। সোরিয়াসিস এক ধরনের অটোইমিউন রোগ। শরীরের রোগ-প্রতিরোধক্ষমতায় ভারসাম্যহীনতা তৈরি হলে এ রোগ হতে পারে। এছাড়া আরও যেসব কারণে হতে পারে-

▶ বংশে কারও সোরিয়াসিসে আক্রান্ত হওয়ার ইতিহাস থাকলে।

▶ কোনো দুর্ঘটনায় ত্বক ছিলে গেলে, পুড়লে বা ব্যথা পেলে।

▶ অতিরিক্ত রোদে অবস্থান করলে ত্বক পুড়ে সোরিয়াসিস হতে পারে।

▶ উচ্চ রক্তচাপ, ম্যালেরিয়ার ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসাবে এটি বাড়তে পারে।

▶ স্থূলতার কারণে সোরিয়াসিস বাড়তে পারে।

▶ অতিরিক্ত মানসিক চাপ থাকলে বাড়তে পারে।

▶ ধূমপান ও মদ্যপানের অভ্যাস থাকলে বাড়তে পারে।

▶ শরীরে ট্যাটু বা উলকি আঁকার কারণে সোরিয়াসিস বাড়তে পারে। কোনো টিকা বা ভ্যাকসিন গ্রহণ করলে বাড়তে পারে।

* উপসর্গ

▶ ত্বকের আক্রান্ত অংশে পুরু লালচে দাগ পড়ে।

▶ আক্রান্ত অংশে ব্যথা বা চুলকানি হতে পারে।

▶ যকৃতের নানা রোগ ও সমস্যা দেখা দিতে পারে।

▶ ত্বকের আক্রান্ত অংশের রং নষ্ট হয়ে যায়। কনুই, হাঁটু, মাথা, হাত ও পায়ের নখে এটি বেশি হয়।

▶ আর্থ্রাইটিস, হৃদরোগ ও রক্তে কোলেস্টেরলের ভারসাম্যহীনতা দেখা দিতে পারে।

▶ আক্রান্ত স্থান রুপালি-সাদা আঁশ দ্বারা আবৃত থাকে এবং লালচে বর্ণের ক্ষত দেখা যায়।

* চিকিৎসা

সোরিয়াসিস পুরোপুরি নিরাময় করা যায় না। তবে এটি নিয়ন্ত্রণযোগ্য অসুখ। এ রোগ নিরাময়ে আক্রান্ত স্থানের ওপর বিভিন্ন ধরনের মলম ও ক্রিম লাগাতে হয়। আলট্রাভায়োলেট রশ্মি দিয়েও এর চিকিৎসা করা হয়। এ রোগ কখনোই পুরোপুরি সারে না। আবার এতে রোগীর মৃত্যুও হয় না। তবে দীর্ঘমেয়াদে জটিলতা বাড়তে থাকে। জীবনব্যাপী এ রোগ মোকাবিলা করতে হয়। কখনো কখনো সোরিয়াসিসে ত্বকের সমস্যার সঙ্গে যুক্ত হয় অস্থিসন্ধির সমস্যাও।

নিয়মিত চিকিৎসাসেবা নিলে সোরিয়াসিস নিয়ন্ত্রণে থাকে। নিয়ন্ত্রণে রেখেই স্বাভাবিক জীবনযাপন করা যায়। তবে এক্ষেত্রে যেসব বিষয়ে সচেতন থাকা জরুরি-

▶ বারবার গোসল করা এবং গোসলের সময় অতিরিক্ত সাবান ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

▶ গোসল করা বা ত্বক ভেজানোর পর দ্রুত ভালোভাবে ত্বক মুছে ময়েশ্চারাইজার বা লোশন ব্যবহার করতে হবে।

▶ ত্বক শুকনো রাখা যাবে না। কিছুক্ষণ পরপর ত্বকে তৈলাক্ত জিনিস, যেমন-নারিকেল তেল, অলিভ অয়েল বা ভ্যাসলিন ঘন ঘন ব্যবহার করতে হবে।

▶ ত্বকের পরিবর্তন দেখে মানসিকভাবে ভেঙে পড়া যাবে না। প্রয়োজনে কাউন্সেলিং নিতে হবে।

▶ আক্রান্ত স্থানে চুলকানি বা যে কোনো সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

লেখক : কনসালট্যান্ট, চর্ম ও যৌন রোগ বিভাগ, ল্যাবএইড লি. (ডায়াগনস্টিকস), ধানমন্ডি, ঢাকা।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম