টনসিলের যে লক্ষণে অস্ত্রোপচার লাগে
অধ্যাপক ডা. কাজী আতিকুজ্জামান
প্রকাশ: ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
প্রত্যেকের গলায় টনসিল আছে। গলাব্যথা হলেই আমরা ভেবে নেই টনসিলে সমস্যা হয়েছে। আরও একটু বাড়িয়ে ভাবি, হয়তো অস্ত্রোপচার করাতে হবে। এ গ্রন্থি আমাদের শরীরের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা বা ইমিউন সিস্টেমের অংশ, যা প্রয়োজনে অ্যান্টিবডি তৈরি করে, প্রাথমিক রোগ-প্রতিরোধে সাহায্য করে। আর টনসিলাইটিস মানে হলো টনসিলের প্রদাহ। শিশুদের এটি অন্যতম ও সাধারণ একটি সমস্যা, যা বছরে বারবার হতে পারে। সাধারণত কম বয়সি শিশুরা ভাইরাসজনিত কারণে টনসিলাইটিসে আক্রান্ত হয়। শীতের দিনে মৌসুমি ফ্লু হওয়ায় টনসিলাইটিসের প্রকোপ বাড়ে। এ ছাড়া ‘গ্রুপ এ বিটা-হেমলাইটিক স্ট্রেপটোকক্কাস’ ব্যাকটেরিয়া দ্বারা ৫ থেকে ১৫ বছর বয়সি শিশুর টনসিলাইটিস হতে পারে। টনসিলাইটিস একিউট ও ক্রনিক এ দুই ধরনের হয়ে থাকে। একিউট টনসিলাইটিস হঠাৎ একদিন হতে পারে আবার ৫-৬ দিন পর চলে যায়। ক্রনিক টনসিলাইটিস প্রায়ই হয়ে থাকে এবং ব্যথা হয়।
* লক্ষণ
মাঝারি থেকে তীব্র জ্বর, গলাব্যথা, খাবার গিলতে ও ঢোক গিলতে কষ্ট, শিশু খেতে চায় না, অনেক সময় বমি করে, মাথাব্যথা, কানব্যথা, মুখে দুর্গন্ধ ও মুখ থেকে লালা ঝরা, গলার স্বরে পরিবর্তন। এ ছাড়া টনসিল বেশি বড় হয়ে গেলে শ্বাস নিতে কষ্ট হতে পারে। গলার ভেতর টর্চ দিয়ে পরীক্ষা করলে দেখা যায়, দুদিকের টনসিল লাল হয়ে ফুলে গেছে। অনেক সময় এর ওপর হলুদ বা সাদা আস্তরণও পড়ে। এ ছাড়া গলার দুই পাশের চাকার মতো লিম্ফ নোড (লসিকাগ্রন্থি) বড় হয়ে যায় ও ব্যথা করে।
* আক্রান্ত হলে প্রাথমিক করণীয়
টনসিলে আক্রান্ত হলে ঘাবড়ান যাবে না। বাসায় কিছু কাজ করতে পারেন টনসিল প্রতিরোধের জন্য। কুসুম গরম পানিতে লবণ মিশিয়ে গারগিল করতে পারেন। ঠান্ডা পানি পরিহার করতে হবে। দুই-তিনদিন এ ভাবে যাওয়ার পর যদি ভালো না হয় তবে একজন নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। সেক্ষেত্রে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে যদি দেখা যায় টনসিলে ইনফেকশন আছে তাহলে প্রয়োজনীয় মেডিসিন নিতে হবে।
* চিকিৎসা
ভাইরাসজনিত টনসিলাইটিসের জন্য প্যারাসিটামল ব্যথানাশক হিসাবে কাজ করে। এছাড়া গরম পানি ও লবণ দিয়ে কুলকুচি, আদার রস, মধু, স্যুপ ইত্যাদি গরম তরলজাতীয় খাবার গ্রহণে উপকারে আসে। তবে ব্যাকটেরিয়াজনিত টনসিলাইটিস হলে এসবের পাশাপাশি চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অ্যান্টিবায়োটিক খেতে হবে। মনে রাখতে হবে, অ্যান্টিবায়োটিকের পুরো কোর্স সম্পন্ন না করলে বিভিন্ন জটিলতা দেখা দিতে পারে।
* কখন অপারেশন করতে হয়
টনসিলাইটিসের চিকিৎসা হিসাবে সব ক্ষেত্রে টনসিলেকটমি অপারেশন বা টনসিল ফেলে দেওয়ার প্রয়োজন নেই। যদি বারবার ইনফেকশন হয় (বছরে সাতবার বা পরপর, দুই বছরে পাঁচবারের বেশি), ক্রনিক টনসিলাইটিস, টনসিলের আশপাশে পুঁজ জমে যায়, অতিরিক্ত বড় টনসিলের কারণে শ্বাসকষ্টের সমস্যা অথবা ঘুমের মধ্যে শ্বাস-প্রশ্বাসে ব্যাঘাত বা অবসট্রাকটিভ স্লিপ এপনিয়া হয়, সেসব ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী অস্ত্রোপচার করা যেতে পারে।
চিকিৎসা সময়মতো না করলে বা জটিলতা বাড়লে পরিস্থিতি আরও গুরুতর হতে পারে। যদি টনসিলের সমস্যা বারবার হয়, নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
লেখক : নাক, কান, গলা ও হেড নেক সার্জারি বিশেষজ্ঞ ও সার্জন, বিভাগীয় প্রধান, নাক কান ও গলারোগ বিভাগ, বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা।
