বারো থেকে আঠারো বছরের পুষ্টি
আখতারুন নাহার আলো
প্রকাশ: ১৭ মে ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
কিশোরীদের ওজন বাড়ে ১১-১৩ বছর বয়সে এবং কিশোরদের বাড়ে ১৩-১৫ বছর বয়সে। প্রথমে মেয়েরা ছেলেদের চেয়ে লম্বা হলেও পরে ছেলেরা মেয়েদের চেয়ে তাড়াতাড়ি লম্বা হয়। আমাদের জীবনের ১২-১৮ বছর বয়সকে বয়ঃসন্ধিকাল বলা হয়। এ সময় শারীরিক ও মানসিক বিকাশের বিস্তার ঘটে। দেহের চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্ষুধাও বেড়ে যায়। ফলে এ সময় বাইরের খাবার খাওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। বাইরের জাঙ্কফুড বা ফাস্টফুডে থাকে অধিক ক্যালরি ও চর্বি। ক্যালসিয়াম কম পরিমাণে থাকে। এ সব খাবারে ভিটামিনের উপস্থিতি তেমন দেখাই যায় না। আবার এতে সম্পৃক্ত চর্বি ও সোডিয়াম বেশি থাকে বলে স্বাস্থ্যের জন্য বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। এ দিকে বাড়ন্ত বয়সের চাহিদাও ফাস্ট ফুডের মাধ্যমে ঠিকমতো পূরণ হয় না। অথচ এ সময় মেয়েদের লৌহযুক্ত খাবার বেশি প্রয়োজন হয়। এ ছাড়া ছেলেমেয়ে উভয়ের জন্য প্রয়োজন ক্যালসিয়াম। ভিটামিন এ ও ডি কোষের বৃদ্ধির জন্য পুষ্টি উপাদানের প্রায় সবই এ সময় প্রয়োজন হয়। এ জন্য গোটাদানাশস্য, মিল্ক পাউডার, মাছ, মাংস, ডিম প্রতিদিনই খেতে হবে। এ ছাড়া জিঙ্কের জন্য সমুদ্রের মাছ খেতে পারলে ভালো হয়। প্রতিদিন একটি ডিম প্রোটিনের ঘাটতি মেটাবে।
এ বয়সের ছেলেমেয়েদের শারীরিক ও মানসিক চাপ খাদ্যভ্যাসের ওপর বেশ প্রভাব ফেলে। স্বাস্থ্যের ওপরও এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। কারণ, পড়াশোনা ও বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডের জন্য এ সময় ছেলেমেয়েরা সময়মতো ও চাহিদামতো খাবার খেতে পারে না। অনেক সময় শারীরিক পরিশ্রম কম করে বলে ওজন বেড়ে যেতে দেখা যায়। আর তারা ওজন কমানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের ডায়েটও করে থাকে। ফলে বমিভাব, খাবারে অরুচি ইত্যাদি দেখা যায়। আবার কতগুলো সাধারণ সমস্যা যেমন-ক্ষুধামন্দা, চুলপড়া, ত্বকের মসৃণতা হারানো, রক্তস্বল্পতা, হাড়ের ক্ষয়রোগ (পরবর্তী সময়ে) দেখা দিতে পারে। আবার চর্বি ও ক্যালরিবহুল খাবার পরিমাণে বেশি খাওয়ার জন্য ডায়াবেটিস, ফ্যাটি লিভার ও উচ্চরক্তচাপ দেখা দেয়। অধিক ক্যালরি ওজন বাড়ার অন্যতম কারণ। এ জন্য প্রয়োজন খেলাধুলা, হাঁটা, ইয়োগা অথবা নাচের ক্লাসে ভর্তি হওয়া প্রয়োজন। ওজন বাড়ার অন্য কারণের মধ্যে আছে-পারিবারিক খাদ্যাভ্যাস, মানসিক চাপ, হরমোনের অসামঞ্জস্যতা ইত্যাদি। অন্যদিকে কেউ কেউ আবার স্লিম থাকার জন্য উপবাসে দিন কাটায়। ফলে তাদের মধ্যে অপুষ্টিজনিত রক্তস্বল্পতা, উদ্যমহীনতা দেখা দেয়। পড়াশোনায় অমনোযোগ, চর্মরোগ, চুলপড়া, চক্ষুরোগ ইত্যাদি দেখা যায়। এদিকে অত্যধিক ব্যায়াম উচ্চ আঁশ ও খুব কম চর্বি যুক্ত খাবার ইস্ট্রোজেনের সরবরাহকে ধীর গতিসম্পন্ন করে তোলে। ফলে অনিয়মিত রক্তস্রাব ও দেহ বৃদ্ধির গতি বাধাপ্রাপ্ত হয়।
কোনো কোনো পরিবারে মেয়েদের মধ্যে রক্তস্বল্পতা প্রকট আকারে দেখা যায়। এটার কারণ হলো পুষ্টিকর ও লৌহবর্জিত খাবারের অভাব, কৃমির বিস্তার। কন্যাসন্তানকে পুত্রসন্তানদের চেয়ে কম খাবার দেওয়া ইত্যাদি। এদিকে উচ্চবিত্ত শ্রেণির কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে দেখা যায়, সুষম খাবারের প্রতি বিরূপ মনোভাব, ভুল খাদ্যাভ্যাস অথবা অধিক পরিমাণে স্লিম থাকার বাসনাও এর জন্য দায়ী। অথচ এ বয়সে প্রতিনিয়ত শারীরিক পরিবর্তন ঘটে বলে যথোপযুক্ত ক্যালরি ও প্রোটিনের চাহিদা বেড়ে যায়। আবার এ বয়সে ছেলেমেয়েদের মধ্যে দুধরনের সমস্যা দেখা যায়। প্রথমত প্রতিদিনের পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি থেকে অপুষ্টি, দ্বিতীয়ত বেশি বেশি খাবার গ্রহণের ফলে ওজন বেড়ে যায়।
ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, শ্বাসকষ্ট, পড়াশোনায় অমনোযোগিতা, হৃদরোগ, লিভারে চর্বি জমা ইত্যাদি। এ জন্য এদের খাবার দেওয়ার সময় সুষম খাবারের দিকে লক্ষ রাখতে হবে। দৈনিক চাহিদা বৃদ্ধির জন্য মিশ্র প্রোটিন এবং ছোটাছুটি ও পড়াশোনার জন্য প্রয়োজনীয় ক্যালরি আবশ্যক। দেহের ত্বক, চুল, দাঁত ও হাড়ের জন্য খনিজ লবণ ও ভিটামিন প্রয়োজন। খাবারে থাকা উচিত বিভিন্ন ধরনের ফল, দুধ, ডিম, বাদাম, ছোলা ইত্যাদি। কিশোর-কিশোরীদের দৈনিক প্রোটিনের প্রয়োজন, প্রতি কেজি ওজনের জন্য দুই গ্রাম। এ সময় খনিজ পদার্থের ঘাটতি থেকে পরবর্তী বয়সে অস্ট্রিওপোরোসিস হতে পারে।
লেখক : সভাপতি, ডায়াবেটিস নিউট্রিশনিস্ট সোসাইটি অব বাংলাদেশ। পথ্য ও পুষ্টি বিশেষজ্ঞ, পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার, শ্যামলী।
