ভূরিভোজ থেকে পেটে ব্যথা : কী করবেন
ডা. মো. নাহিদ সিকদার
প্রকাশ: ৩১ মে ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
কয়েকদিন পরই আসছে মুসলিম সম্প্রদায়ের দুটি প্রধান ধর্মীয় উৎসবের একটি, ঈদুল আজহা। এ দিনে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা আল্লাহর নির্দেশে পশু কুরবানি করেন। কুরবানির গোশত নিজেরা খান এবং গরিব-দুঃখী সবার মাঝে বিলি করেন। এ উৎসবের দিনে গরিব-ধনী নির্বিশেষে প্রায় সবাই অতিরিক্ত তেল-চর্বিজাতীয় ভাজাপোড়া খাবার গ্রহণ করে থাকেন যা প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত পরিমাণ হওয়ার কারণে অনেক ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এর মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণ হচ্ছে পেটে ব্যথা।
* কী কী কারণে পেটে ব্যথা হতে পারে
▶ বদহজম ও বুক জ্বালাপোড়া : চর্বিজাতীয় খাবার হজম হতে সময় বেশি লাগে। ফলে খাবার পাকস্থলীতে দীর্ঘক্ষণ থেকে যায়, যা বদহজম, পেট ফাঁপা এবং বুক জ্বালাপোড়ার কারণ হতে পারে।
▶ পেপটিক আলসার সমস্যা : অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার গ্রহণের ফলে পাকস্থলীর অ্যাসিডিটি বেড়ে যেতে পারে। সেখান থেকে আলসারের সমস্যা আরও বাড়তে পারে। ফলে পেটে ব্যথা, জ্বালাপোড়া, বমি, অস্বস্তি দেখা দিতে পারে।
▶ পাতলা পায়খানা বা কোষ্ঠকাঠিন্য : কিছু কিছু ক্ষেত্রে তৈলাক্ত খাবার হজম না হলে পাতলা পায়খানা হতে পারে। আবার কারও কারও ক্ষেত্রে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে। উভয় ক্ষেত্রেই পেটে অস্বস্তি বা ব্যথা হতে পারে। কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে আবার পাইলস বা এনাল ফিসার হয়েও ব্যথা হতে পারে।
▶ পিত্তথলির সমস্যা : তৈলাক্ত খাবার হজমের জন্য পিত্তরস প্রয়োজন হয় যা পিত্তথলি থেকে নিঃসৃত হয়। অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার খেলে পিত্তথলির ওপর চাপ পড়ে, যা পিত্তথলির প্রদাহের কারণ হতে পারে। পরবর্তী সময়ে পিত্তথলিতে পাথর হতে পারে যার জন্য পেটে ব্যথা হয়।
▶ প্যানক্রিয়াটাইটিস : অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার প্যানক্রিয়াসে (অগ্নাশয়) প্রদাহ তৈরি করতে পারে যাকে প্যানক্রিয়াটাইটিস বলে। এটি একটি গুরুতর অবস্থা যা থেকে পেটে প্রচণ্ড ব্যথা হয়।
▶ অ্যাপেনডিসাইটিস : কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে এপেনডিসাইটিস হয়ে পেটে ব্যথা হতে পারে।
▶ আইবিএস বা ইরিটেবল বাউল সিনড্রম : আইবিএস রোগীরা অতিরিক্ত তেল-চর্বিজাতীয় খাবার, দুধজাতীয় খাবার খেলে পেটে ব্যথা হতে পারে।
পেটে ব্যথা ছাড়াও অতিরিক্ত তেল-চর্বিজাতীয় খাবারের কারণে উচ্চরক্তচাপ, উচ্চ কোলেস্টেরল, হৃদরোগের ঝুঁকি, কিডনি সমস্যা, গাউট বা গেটে বাত হতে পারে।
* প্রতিরোধ বা বাঁচার উপায়
▶ তেল-চর্বিজাতীয় খাবার, ভাজাপোড়া খাবার যতটা সম্ভব কম পরিমাণে গ্রহণ করুন।
▶ পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন। পানি কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করবে। যদি সম্ভব হয় হালকা কুসুম গরম পানিতে লেবুর রস মিশিয়ে পান করতে পারেন যা হজম প্রক্রিয়া উন্নত করবে।
▶ পর্যাপ্ত পরিমাণ সতেজ সবজি, তরকারি ও ফল গ্রহণ করুন। আঁশযুক্ত ফল ও সবজি হজম প্রক্রিয়াকে সচল রাখে ও কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে।
▶ টকদই খেতে পারেন : দইয়ে থাকা প্রোবায়োটিক হজমতন্ত্রের স্বাস্থ্য উন্নত করবে।
▶ পর্যাপ্ত ঘুম : দৈনিক ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমান। পর্যাপ্ত ঘুম অন্ত্রের মুভমেন্ট ঠিক রেখে কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করবে। ঘুমের আগে এক গ্লাস পানির সঙ্গে ২ চামচ ইসবগুলের ভুসি খেয়ে নিতে পারেন।
▶ হাঁটাচলা বা হালকা ব্যায়াম : খাবার খাওয়ার পর হালকা হাঁটাচলা বা হালকা ব্যায়াম করতে পারেন যা খাবার হজমে সাহায্য করবে।
* পেটে ব্যথা হলে করণীয়
কিছু সাধারণ ওষুধ প্রাথমিকভাবে সেবন করতে পারেন, যেমন-
▶ অ্যাসিডিটির জন্য : এন্টাসিড (টেবলেট/সিরাপ), এন্টিআলসারেন্ট (ওমিপ্রাজল/রেবিপ্রাজল)।
▶ পেট মুচড়িয়ে ব্যথা হলে : টাইমোনিয়াম মিথাইল সালফেট (যেমন-এলজিন/ভিসেট)।
▶ বমি হলে : (ডমপেরিডম/ওনডানসেটরন)।
▶ পাতলা পায়খানার জন্য : খাবার স্যালাইন।
এরকম প্রয়োজনীয় কিছু ওষুধ, খাবার স্যালাইন সংগ্রহে রাখতে পারেন কারণ খুব জরুরি মুহূর্তে বিশেষ দিনে হাতের কাছে নাও পেতে পারেন।
* কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন
▶ যদি পেটে তীব্র ব্যথা হয় এবং সাধারণ ওষুধে না কমে ব্যথা তীব্র হয়, দীর্ঘস্থায়ী হয়।
▶ বমি, জ্বর, কালো পায়খানা হলে।
▶ পেট ফুলে গিয়ে শ্বাসকষ্ট হলে।
▶ বুকে ব্যথা/চাপ অনুভূত হলে।
তেল-চর্বিজাতীয় খাবার কম পরিমাণে গ্রহণ করা এবং স্বাস্থ্যসম্মত, সতেজ খাবার পর্যাপ্ত পরিমাণে গ্রহণ করা স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের পূর্ব শর্ত।
লেখক : কনসালটেন্ট ও বিভাগীয় প্রধান (সার্জারি), কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতাল, উত্তরা, ঢাকা। চেম্বার : পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার, উত্তরা জসমীউদ্দীন শাখা।
