Logo
Logo
×

সুস্থ থাকুন

জ্বর হলে কী খাবেন

Icon

আখতারুন নাহার আলো

প্রকাশ: ০৫ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

জ্বর হলে কী খাবেন

ফাইল ছবি

জ্বর এককভাবে কোনো রোগ নয়। এটি রোগের উপসর্গ মাত্র। গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালে জ্বরের প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। এ সময় টাইফয়েড, ম্যালেরিয়া, নিউমোনিয়া, সর্দি-কাশি, ইনফ্লুয়েঞ্জা ইত্যাদি হয়ে থাকে। এ মৌসুমে ডেঙ্গু একটি মারাত্মক রোগ হিসাবে দেখা যায়। এতে শরীরের তাপমাত্রা প্রচণ্ড বেড়ে যায়।

সাধারণত : জ্বর দু’রকম হয়ে থাকে। স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি জ্বর।

সর্দি-জ্বর, ইনফ্লুয়েঞ্জা, নিউমোনিয়া, টাইফয়েড, আঘাত, সংক্রমণজনিত ক্ষতের জন্য জ্বর এবং ডেঙ্গু-এগুলো স্বল্পমেয়াদি জ্বর। সুচিকিৎসার ফলে এ জ্বর সেরে যায়। যক্ষ্মা, ম্যালেরিয়া ও ক্যানসারের জন্য যে জ্বর হয় এগুলো দীর্ঘমেয়াদি জ্বর। জ্বর হলে শরীরে সঞ্চিত শর্করা (গ্লাইকোজেন) খরচ হতে থাকে। শর্করা নি:শেষ হওয়ার পর, দেহের মেদ বা চর্বি ক্ষয় হতে আরম্ভ করে। এ সময় শরীর থেকে প্রচুর পানি ঘাম ও প্র্রস্রাবের সঙ্গে বের হয়ে যায়। তখন সোডিয়াম ক্লোরাইড ও প্রোটিন উপাদান ক্ষয় হয়ে প্রস্রাবের সঙ্গে নাইট্রোজেন বেরিয়ে যায়। দেহের উত্তাপ যত বৃদ্ধি পায়, প্রস্রাবে নাইট্রোজেনের পরিমাণ ততটাই বাড়তে থাকে। এ কারণে অল্পদিনে রোগী দুর্বল হয়ে পড়ে। যদি এ সময় খাবারে শর্করার পরিমাণ বাড়ানো যায় তাহলে প্রস্রাবে নাইট্রোজেনের পরিমাণও কমে যাবে।

শরীর জ্বরে আক্রান্ত হলে দহনক্রিয়া দ্রুত চলে বলে ক্যালরি খরচও বৃদ্ধি পায়। ফলে ক্যালরির চাহিদা ৩০-৫০ ভাগ বেশি হয়। সুতরাং সুস্থ অবস্থায় যতটুকু ক্যালরি প্রয়োজন, জ্বরের সময় তার চাইতে কোনো অংশে কম হবে না।

জ্বরের মেয়াদ, তীব্রতা এবং অন্য লক্ষণের ওপর নির্ভর করে তবেই পথ্য প্রস্তুত করতে হবে। এ সময় পথ্য হবে উচ্চ ক্যালরি ও প্রোটিনসমৃদ্ধ কিন্তু সহজপাচ্য। প্রথম অবস্থায় তরল ও আধাতরল খাবার দিতে হবে। জ্বর কমে গেলে প্রথমে নরম পথ্য দেওয়া প্রয়োজন। প্রতিদিন দুই-তিন ঘণ্টা পর পর খাবার দেওয়া প্রয়োজন।

তরল খাবার-দুধ, গ্লুকোজ মেশানো দুধ, বাজারে চলতি স্বাস্থ্যকর পানীয়, ফলের রস, ঘোল, বার্লির শরবত, মাছ-মাংস-সবজির ক্লিয়ার স্যুপ, মিছরির পানি ইত্যাদি। কমলালেবুর রস জ্বরের সময় বেশ উপকারী।

আধা তরল খাবার-গরম জাউভাত, ভাত বা চিড়ার মণ্ড মেশানো দুধ, আইসক্রিম, পুডিং, নরম ফল, নরম খিচুড়ি (ভাত+মাছ+মাংস+আলু+আঁশ ছাড়া সবজি) এটি ব্লেন্ড করে দিলে ভালো হয়। এছাড়া যে কোনো ফল দিয়ে মিল্ক শেক করে দেওয়া যায়। নরম পথ্য হিসাবে ওটস ও দুধ-সাবু উপাদেয় ও সহজপাচ্য খাবার।

অবশেষহীন খাবার বা পথ্য-যেসব খাবারে বিশেষ কিছু অবশিষ্ট থকে না, সেগুলো হলো অবশেষহীন পথ্য। এ ধরনের পথ্য অন্ত্রকে উত্তেজিত না করে পুষ্টির চাহিদা মেটায়। যেমন-ডিম, পাউরুটি, নরম মাছ, সবজির ব্লেন্ড করা স্যুপ, মাখন, মিহি চালের ভাত, ফলের রস, আলুসিদ্ধ এগুলো অবশেষহীন পথ্য। হজমশক্তির গোলমাল না থাকলে দুধ দেওয়া যাবে। এতে পাওয়া যাবে ধাতব লবণ ও ভিটামিন এবং প্রোটিন। দুধ, বার্লি বা সাবু একত্রে রান্না করলে বেশি পুষ্টিকর হবে। জ্বরের সময় ভিটামিন এ, বি এবং সির অভাব হয় বলে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। গ্লাইকোজেনের ঘাটতি মেটানোর জন্য মধু, চিনি, গুড়, নরম ভাত, পাউরুটি, বনরুটি, গ্লুকোজ দিতে হবে।

এদিকে জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তিকে খুব বেশি ভাজা খাবার এবং চর্বিযুক্ত খাবার না দেওয়াই ভালো। এতে পরিপাকে সমস্যা হতে পারে। ভিটামিন সির জন্য কমলালেবু, বাতাবি লেবু, কাগজিলেবু এবং আনারসের রস দিলে ভালো হয়। যত বেশি জলীয় খাবার দেওয়া যাবে, ততবেশি জ্বরের প্রকোপ কমবে। ফলের রসে খাবারের রুচি বাড়বে এবং স্যুপ ক্ষুধা বাড়াবে। জ্বরের সময় খাবার হবে জলীয়, সহজপাচ্য ও ক্যালরিবহুল।

লেখক : চিফ নিউট্রিশন অফিসার ও বিভাগীয় প্রধান (অব.), বারডেম। সভাপতি, ডায়াবেটিস নিউট্রিশনিস্ট সোসাইটি অব বাংলাদেশ

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম