আম-কাঁঠালের মৌসুমে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ কেন চ্যালেঞ্জিং
অধ্যাপক ডা. তৌফিকুর রহমান
প্রকাশ: ১২ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
গ্রীষ্মকাল মানেই সুস্বাদু মৌসুমি ফলের সমাহার। এর মধ্যে আম ও কাঁঠাল আমাদের সংস্কৃতি, খাদ্যাভ্যাস এবং আবেগের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তবে এ দুটি ফল ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য একটি বড় স্বাস্থ্য চ্যালেঞ্জ হিসাবে দেখা দেয়। প্রাকৃতিকভাবে মিষ্টি হওয়ায় এসব ফলে রয়েছে উচ্চমাত্রায় চিনি ও কার্বোহাইড্রেট। ডায়াবেটিক রোগীদের রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে, যেখানে প্রতিটি খাবারই হিসাব করে খেতে হয়, সেখানে এ ফল দুটি আকর্ষণীয় হলেও স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
▶ ফলের রসালতা বনাম গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণ : আম ও কাঁঠালে রয়েছে প্রচুর ফ্রুকটোজ-যা রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা দ্রুত বাড়িয়ে দেয়। বিশেষ করে পাকা আম ও পাকা কাঁঠালে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (GI) ও গ্লাইসেমিক লোড (GL) দুটোই বেশি। ফলে ডায়াবেটিক রোগীর রক্তে সুগার হঠাৎ বেড়ে গিয়ে হাইপারগ্লাইসেমিয়া হতে পারে। আবার এ সময় অনেকেই নিজের অজান্তে অতিরিক্ত খেয়ে ফেলেন, যেটি রোগ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।
* মৌসুমি চ্যালেঞ্জগুলো কী কী
▶ স্বাদের প্রলোভন ও পরিমাণে অতিরিক্ততা : আম-কাঁঠাল খাওয়া শুরু করলে পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়ে।
▶ সামাজিক-সাংস্কৃতিক চাপ : আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে আপ্যায়নে না খাওয়া অনেক সময় অস্বস্তিকর হয়।
▶ সঠিক পুষ্টিবিধানের অভাব : ডায়াবেটিক রোগীরা জানেন না কতটুকু খাওয়া নিরাপদ, কিংবা কীভাবে খাওয়া উচিত।
▶ রক্তে সুগার মনিটরিং কম হয় : অনেকেই ফল খাওয়ার পর ব্লাড সুগার চেক করেন না, ফলে রোগ নিয়ন্ত্রণে থাকে না।
* সমাধান
▶ সচেতনতা ও ব্যালান্স, পরিকল্পিত খাওয়া শিখুন : রক্তে সুগার ভালো নিয়ন্ত্রিত থাকলে দিনে ১-২ টুকরা আম অথবা ১-৪ কোষ কাঁঠাল খাওয়া যেতে পারে। খালি পেটে নয়, খাবারের পরে খাওয়া উত্তম। প্রোটিন-ফ্যাটযুক্ত খাবারের সঙ্গে খেলে গ্লুকোজ শোষণ ধীর হয়।
▶ রক্তের সুগার নিয়মিত মাপুন : বিশেষ করে ফল খাওয়ার আগে ও পরে (২ ঘণ্টা পর) ব্লাড সুগার মাপুন।
▶ পরিশ্রম ও ব্যায়াম : ফল খাওয়ার পর হাঁটাহাঁটি করলে শরীরে গ্লুকোজ ব্যবহৃত হয়, রক্তে জমে না।
▶ বিকল্প ফল বেছে নিন : পেয়ারা, জাম, আপেল, কমলা, করমচা, বেল এসব ফল বেশি নিরাপদ।
▶ পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিন : ব্যক্তিভেদে ডায়েট পরিকল্পনা ভিন্ন, তাই রোগী নিজে সিদ্ধান্ত না নিয়ে চিকিৎসক বা পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিন। আম ও কাঁঠাল যেমন স্বাদের প্রতীক, তেমনই সচেতনভাবে খেলে এগুলো ডায়াবেটিক রোগীর জীবন থেকেও পুরোপুরি বাদ দিতে হবে না।
লেখক : মেডিসিন ও হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, ঢাকা।
