চিকুনগুনিয়া থেকে জয়েন্টে ব্যথা
ডা. তাহমীদ কামাল
প্রকাশ: ২৬ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
চিকুনগুনিয়া ভাইরাসজনিত একটি রোগ, যা এডিস ইজিপ্টি বা এসিড এলকোপিকটাস মশার মাধ্যমে ছড়ায়। এ ভাইরাস সংক্রমণের ফলে অনেক সময় দীর্ঘস্থায়ী আরথ্রাইটিস বা সন্ধি ব্যথা দেখা দিতে পারে, যাকে চিকনগুনিয়া আরথ্রাইটিস বলা হয়।
* কারণ
চিকুনগুনিয়া ভাইরাস সংক্রমণের পর শরীরের ইমিউন সিস্টেম অস্থিসন্ধিগুলোতে প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে। এ প্রদাহ দীর্ঘ সময় ধরে থাকতে পারে, এমনকি ভাইরাস দূর হয়ে যাওয়ার পরও।
* লক্ষণ
▶ তীব্র পর্যায়ের লক্ষণ (Acute Phase-১-২ সপ্তাহ) : উচ্চ জ্বর, প্রচণ্ড সন্ধি ব্যথা (বিশেষ করে কবজি, গোড়ালি, হাঁটু, কাঁধ), পেশি ও মাথাব্যথা, ত্বকে লাল র্যাশ, ক্লান্তি।
▶ দীর্ঘমেয়াদি পর্যায়ের লক্ষণ (Chronic/Post-viral Arthritis-৩ মাস বা তার বেশি) : সন্ধিতে ব্যথা ও শক্ত হয়ে যাওয়া, হালকা ফোলা, সকালে ওঠার পর সন্ধিতে জড়তা, নড়াচড়া করতে কষ্ট হওয়া, মাঝে মাঝে ব্যথার মাত্রা বেড়ে যাওয়া।
* কারা ঝুঁকিপূর্ণ
বয়স্ক ব্যক্তি, যারা আগে থেকেই আরথ্রাইটিসে ভুগছেন, যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম ও গর্ভবতী নারী।
* রোগ নির্ণয়
ক্লিনিকাল ইতিহাস ও লক্ষণ, রক্ত পরীক্ষা চিকুনগুনিয়া আইজিএম ও আইজিজি এন্টিবডি, CBC, ESR, CRP ইত্যাদি পরীক্ষায় প্রদাহের মাত্রা দেখা।
* চিকিৎসা
চিকুনগুনিয়া ভাইরাসের নির্দিষ্ট অ্যান্টিভাইরাল নেই, তবে লক্ষণ দেখে চিকিৎসা করা হয়।
তীব্র পর্যায়ে- প্যারাসিটামল বা NSAIDs গ্রহণ (যেমন- নেপ্রোক্সেন, ডাইক্লোফেনাক), বিশ্রাম, পানিশূন্যতা রোধে প্রচুর পানি পান করতে হবে। দীর্ঘমেয়াদি আরথ্রাইটিসে নিয়মিত প্রদাহনাশক ওষুধ গ্রহণ, ফিজিওথেরাপি, মাঝে মাঝে কটিকোস্টেরয়েড প্রয়োগ (ডাক্তারের পরামর্শে), সঠিক ব্যায়াম ও জয়েন্ট মুভমেন্ট, কিছু ক্ষেত্রে DMARDs (যেমন-মেথোট্রেক্সেট) ব্যবহার করা হয় যদি রিউমাটয়েড আরথ্রাইটিসের মতো হয়ে যায়।
চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধে মশার কামড় থেকে সতর্ক থাকতে হবে।
চিকুনগুনিয়া আরথ্রাইটিস অনেক ক্ষেত্রেই নিজে নিজে ভালো হয়ে যায়, তবে কিছু ক্ষেত্রে এটি দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা তৈরি করতে পারে। সময়মতো চিকিৎসা, ব্যায়াম, ও জীবনধারা পরিবর্তন রোগ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হতে পারে।
লেখক : ফিজিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন বিশেষজ্ঞ।
