Logo
Logo
×

সুরঞ্জনা

মিতুর আঁকা ছবি কথা বলে

Icon

পবিত্র তালুকদার

প্রকাশ: ০১ নভেম্বর ২০২০, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

মিতুর আঁকা ছবি কথা বলে

উঠোনে দাঁড়িয়ে পেন্সিল আর রং-তুলিতে আর্ট পেপারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি আঁকছিলেন মিতু দাস। তার আঁকার ঝুলিতে রয়েছে নানা গুণীজনদের ছবি।

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রাসেলসহ নানা গুণী ব্যক্তির ছবি। শুধু কী তাই, মিতুর বাড়ির সব ঘরেই দেব-দেবীর ছবিতে পরিপূর্ণ। ছবিগুলো দেখে মনে হবে, দোকান থেকে কেনা। অথচ সব ছবি-ই মিতু নিজ হাতে এঁকেছেন।

আর দশটা মেয়ের মতোই চলাফেরা করতে পারেন মিতু। লেখাপড়ায় বেশ ভালো। কিন্তু কথা বলতে পারেন না। কথা বলতে না পারার কষ্ট তাড়িয়ে বেড়ায় তাকে। হরিপুর দুর্গাদাস স্কুল অ্যান্ড কলেজে এইচএসসি প্রথম বর্ষের ছাত্রী মিতু মনের ভাব প্রকাশ করেন ছবি এঁকে। আঁকাআঁকির ওপর কোনো প্রশিক্ষণ নেননি তিনি।

তবে ইশারার মাধ্যমে মনের ভাব প্রকাশ করতে বা বুঝতে পারেন মিতু। ছবি বা কোনো মানুষকে দেখে হুবহু ছবি এঁকে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন তিনি।

পাবনার চাটমোহর উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের ধূলাউড়ি গ্রামের কুটিশ্বর-সুমিত্রা দাস দম্পতির ছোট মেয়ে মিতু দাস। অসচ্ছল পরিবারে বেড়ে উঠলেও সব বাধা উপেক্ষা করে এগিয়ে চলেছেন তিনি।

তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ার সময়ে ছবি আঁকার প্রতি তার আগ্রহ জন্মে। এরপর বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ছবি আঁকাতে তার দক্ষতা বাড়ে। সামনের ব্যক্তিকে দেখে হুবহু ছবি আঁকতে পারেন। মিতুর এ প্রতিভায় বাবা-মা সবসময় উৎসাহ দেন। চার ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট মিতু। বড় বোন রেপা রানী দাসও বাকপ্রতিবন্ধী। অনেক কষ্টে বাবা-মা রেপার বিয়ে দিয়েছেন আর মেজ বোন রিতা এমএ পাস করেছেন। বিয়ে করে সংসার করছেন। বড় ভাই রিপন দাস একজন প্রকৌশলী। সংসারে অভাব-অনটনের মধ্যেও কৃষক বাবা ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা শিখিয়েছেন।

বাবা কুটিশ্বর দাস বলেন, বড় মেয়ের পর ছোট মেয়ে মিতুও বাকপ্রতিবন্ধী হয়ে জন্মায়। খুব ভেঙে পড়েছিলাম। মিতুকে স্কুলে ভর্তি করে দিই। ভেবেছিলাম, প্রাইমারি পাস করলে আর পড়াব না। কিন্তু লেখাপড়ার প্রতি মেয়ের প্রবল আগ্রহ দেখে বাধা দেইনি। আর্ট-পেপার ও রং পেন্সিলসহ নানা সরঞ্জাম কিনতে অনেক টাকা লাগে। কষ্ট হলেও সব জোগাড় করে দিই। মিতুকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা আছে।

মা সুমিত্রা রানী দাস বলেন, লেখাপড়া ও ছবি আঁকার পাশাপাশি ঘরকন্নার কোনো কাজেই পিছিয়ে নেই মিতু। পড়াশোনায়ও বেশ ভালো। ইশারা করে ওর কথা বলতে না পারার কষ্টের কথা যখন বলে, তখন খুব খারাপ লাগে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু’র আঁকা ছবিটি উপহার হিসেবে দিতে চায় ও। কিন্তু আমরা গ্রামের মানুষ। প্রধানমন্ত্রীর নাগাল পাব কীভাবে? জানি, আমার মেয়ের স্বপ্ন বাস্তবে পূরণ হওয়ার নয়। চাই, মেয়ে পড়াশোনা শিখে স্বাবলম্বী হোক।

অঙ্কন শিক্ষক মানিক কুমার দাস বলেন, মিতুর প্রতিভা ঈশ্বরপ্রদত্ত। ও কথা বলতে না পারলেও তার আঁকা ছবি কথা বলে। একজন বাকপ্রতিবন্ধী মেয়ে শত প্রতিকূলতাকে জয় করে যেভাবে ছবি আঁকে, তাতে আশ্চর্য হওয়া ছাড়া উপায় নেই। পৃষ্ঠপোষকতা পেলে মিতু অনেক দূর যেতে পারবে।

মিতু

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম