Logo
Logo
×

সুরঞ্জনা

সাইবার বুলিং : একটি সামাজিক ব্যাধি

সাধারণ কন্যাশিশু বা নারীরা যেমনভাবে সাইবার বুলিংয়ের শিকার হন, তেমনিভাবে শিকার হন সেলিব্রেটিরাও। আমরা দেখেছি জাতীয় দলের একজন তারকা ক্রিকেটারের কন্যাশিশুকে নিয়ে এর আগে নোংরা ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য তার পোস্টকৃত পরিচ্ছন্ন একটি ছবিতে করতে! শুধু তাই নয়, বিভিন্ন অশ্লীল ছবি বা ভিডিও লিংক পাঠিয়ে, কারণে-অকারণে কল দিয়েও নারীদের সামাজিক মাধ্যমগুলোতে উত্ত্যক্ত করে অনেকে

Icon

রুকাইয়া সাওম লীনা

প্রকাশ: ০৬ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

মানুষের জীবন এখন দুরকম। একটি বাস্তব। আর এ বাস্তব জীবনের সঙ্গে অনেকটা প্যারালাল জুড়ে রয়েছে-সাইবার জগৎ। এ জগৎটা আপাত দৃষ্টিতে নিরাপদ মনে হলেও কারও কারও জন্য তা হয়ে উঠতে পারে ভয়ানক। এমনকি মৃত্যুরও কারণ হতে পারে কারও কারও জন্য!

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, মেসেজিং অ্যাপস, অনলাইন গেমিং ও ভিডিও গেম স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম-এ মাধ্যমগুলোতে সবচেয়ে বেশি হয়রানির ঘটনা ঘটছে আজকাল। এছাড়া অনলাইন গামবল বা জুয়ার ফলেও হয়রানির শিকার হচ্ছে অনেকে। আর এসবে নারী ও কন্যাশিশুরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে আছেন। সাম্প্রতিক আলোচিত উদাহরণ হিসাবে আমরা দেখতে পাই শিশুশিল্পী সিমরিন লুবাবা বা অভিনেত্রী হোমাইরা হিমুকে।

বারও বছরের শিশুশিল্পী সিমরিন লুবাবা ভাইরাল হয়েছে ‘কেন্দে দিছি’ কথাটা বলায়! খুবই সাধারণ বাক্যটি নিয়েও অনলাইনে ট্রল হচ্ছে! তার নামে ফেক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে, হাজার হাজার ভিডিও তৈরি হচ্ছে, আরও কত কী!

২০২১ সালে গ্রামীণফোন-টেলিনর গ্রুপ এবং প্ল্যান ইন্টারন্যাশনালের যৌথভাবে পরিচালিত একটি জরিপে অনলাইন বুলিংকে মারাত্মক সমস্যা হিসাবে চিহ্নিত করেন দেশের ৮৫ শতাংশ তরুণ।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কমেন্ট অপশনে ও মেসেজিং অ্যাপগুলোতে হরহামেশা সাইবার বুলিংয়ের শিকার হন নারী ও কন্যাশিশুরা! সাধারণ কন্যাশিশু বা নারীরা যেমনভাবে সাইবার বুলিংয়ের শিকার হন, তেমনিভাবে শিকার হন সেলিব্রেটিরাও। আমরা দেখেছি জাতীয় দলের একজন তারকা ক্রিকেটারের কন্যাশিশুকে নিয়ে এর আগে নোংরা ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য তার পোস্টকৃত পরিচ্ছন্ন একটি ছবিতে করতে! শুধু তাই নয়, বিভিন্ন অশ্লীল ছবি বা ভিডিও লিংক পাঠিয়ে, কারণে-অকারণে কল দিয়েও নারীদের সামাজিক মাধ্যমগুলোতে উত্ত্যক্ত করে অনেকে। মিথ্যা প্রেমের ফাঁদে ফেলে নারীদের ব্যক্তিগত ছবি, ভিডিও ভাইরাল করে পারিবারিক ও সামাজিকভাবে তাদের হেনস্তা করাও এখন নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে!

মেয়ে শিশু ও নারীদের সামাজিক নিরাপত্তা দেওয়ার পাশাপাশি সাইবার নিরাপত্তা দেওয়াও এখন বিরাট চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠছে। আর এ বিষয়ে আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্রের পাশাপাশি পরিবারের ভূমিকা কী হতে পারে তা নিয়ে আমরা কথা বলেছি বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘তথ্য প্রযুক্তির বিকাশের এ যুগে সাইবার বুলিং ও ক্রাইম নারীর জন্য খুবই এলার্মিং, যা সহিংসতা ছড়াচ্ছে। এ বিষয়ে নারীদর ব্যাপকভাবে সচেতন করতে হবে। শুধু পরিবারকেই সচেতন করলে চলবে না। স্কুল-কলেজের পাঠ্যসূচিতে খুব গুরুত্বের সঙ্গে এ ব্যাপারে সচেতন করতে হবে। সাইবার ক্রাইমের নীতিমালার যথাযথ প্রয়োগ দ্রুততার সঙ্গে করতে হবে। অপরদিকে যারা সামাজিক মাধ্যমগুলোতে নারীদের বিভিন্নভাবে হয়রানি করে, অশালীন মন্তব্য করে তাদের দ্রুত ও যথাযথ শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। আসছে ২৫ নভেম্বর আমরা এবারের নারী পক্ষে এ বিষয়ে জোর দিয়েছি।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. ফাতেমা রেজিনা ইকবাল বলেন, ‘সাইবার বুলিং মহামারির আকার ধারণ করেছে। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, যারা সাইবার বুলিং বা সাইবার ক্রাইম করছে তাদের মূলত সঠিকভাবে সামাজিকীকরণ করা যায়নি। সমাজে বাস করতে হলে সমাজের অন্য সদস্যদের সঙ্গে কীরূপ ব্যবহার করা উচিত, সে বিষয়ে তাদের সঠিক শিক্ষার অভাব রয়েছে। এছাড়া সমাজের বেশকিছু সংখ্যক পুরুষ বা ছেলে সন্তান এটা ভেবে বড় হয় যে, তারা নারীদের থেকে শ্রেষ্ঠ, তাই তারা নারীদের যেভাবে খুশি অপদস্থ করতে পারে! আমি বলব এটা অন্যতম কারণ, নারীদের ওপর এ ধরনের ক্রাইম বেশি হওয়ার জন্য। কারণ তারা নারীকে ব্যক্তি ভাবতে রাজি নয়। এসব বন্ধ বা হ্রাস করার জন্য পরিবারের ভূমিকা রয়েছে, তবে পরিবারের সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকেও সচেতন করতে হবে। আর আমি মনে করি মিডিয়ার ভূমিকা সবচেয়ে ফলদায়ক হবে। বেশি বেশি করে সচেতনতামূলক লেখা, ভিডিও, নাটিকা, গান ইত্যাদি তৈরি করতে হবে। যাতে নারীরা সাবধান ও সচেতন হতে পারে আর অপরাধীরা ভয় পায় ও সঠিকভাব চলার শিক্ষা পায়। সাইবার বুলিং ও ক্রাইমে যারা সম্পৃক্ত হবে, তাদের দ্রুত আইনের আওতায় আনতে হবে।’

সাইবার বুলিং ও ক্রাইমের শিকার যারা হন, তাদের সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ে মানসিক স্বাস্থ্যে। যা থেকে তৈরি হয় ডিপ্রেশন। সেখান থেকে অনেকে আত্মহননের পথ বেছে নেয়। কীভাবে আমরা এর থেকে নিজেদে রক্ষা করতে পারি, চলুন জেনে নিই-

অনলাইন বা সাইবার বুলিং সম্পর্কে সচেতনতা

* পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও রাষ্ট্রকে একযোগে সতর্ক থেকে পদক্ষেপ নিতে হবে।

* সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।

* অনলাইন ব্যবহারে সতর্ক থাকতে হবে।

* অনলাইন আসক্তি রোধ করতে হবে।

* নিজ নিজ আইডির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

* পাশাপাশি অপরাধীকে দ্রুত আইনের আওতায় আনতে হবে। সাইবার ক্রাইম নীতিমালার প্রয়োগ দ্রুততার সঙ্গে করতে হবে।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম