জীবনযুদ্ধ
পাহাড়ের কোলে পরিশ্রমী সাকাম নারী
মোখতারুল ইসলাম মিলন
প্রকাশ: ১৯ মে ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলে বসবাসরত স্বল্প-পরিচিত একটি আদিবাসী জনগোষ্ঠী হলো সাকাম। সংখ্যায় কম হলেও তাদের সংস্কৃতি, জীবনধারা ও সংগ্রামী মানসিকতা বিশেষভাবে লক্ষণীয়। সাকাম সমাজে নারীরা শুধু পারিবারিক দায়িত্বই পালন করেন না, বরং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
সাকাম নারীদের দিন শুরু হয় খুব ভোরে। তারা প্রথমেই পরিবারের রান্নাবান্না ও সন্তানদের যত্ন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এরপর তারা জুম চাষে অংশ নেন। পাহাড় কেটে চাষ করা হয় ধান, কুমড়া, মরিচ, আদা, হলুদ ও অন্যান্য ফসল। এসব কাজে নারীদের শ্রম অপরিহার্য। পাহাড়ি পথ পাড়ি দিয়ে তারা বাজারে যান, ফলমূল ও শাকসবজি বিক্রি করেন। অনেক নারী নিজের উৎপাদিত পণ্য নিজেই বিক্রি করেন, এতে তারা স্বনির্ভর হচ্ছেন।
সাকাম নারীদের আয়ের প্রধান উৎস হলো জুম চাষ। এর মধ্যে ধান, আদা, কাঁচা হলুদ, বাঁশের কোঁড়ল ইত্যাদি চাষ করে বাজারে বিক্রি করেন তারা। কুটিরশিল্পেও তাদের অবদান রয়েছে। তাঁত বোনা, হাতে তৈরি ব্যাগ, ঝুড়ি, কাপড় ও অলংকার তৈরি করেন সাকাম নারীরা। বাঁশ ও বেতের মাধ্যমে ঘরের কাজে ব্যবহৃত জিনিস যেমন ঝুড়ি, চালনি, ছোট ছোট আসবাবপত্র তৈরি করেও বিক্রি করেন। আচার ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্য তৈরিতেও তাদের সমানভাবে দেখা যায়। বিভিন্ন পাহাড়ি ফল ও সবজি দিয়ে আচার তৈরি করেন এ নারীরা। যা বিক্রি হয় স্থানীয় বাজারে।
কৃষিকাজ ছাড়াও কখনো কখনো চা বাগানে বা অন্যান্য মৌসুমি শ্রমিকের কাজও করেন। সাকাম নারীদের মধ্যে এখনো শিক্ষার হার তুলনামূলকভাবে কম। তবে কিছু পরিবারের মেয়েরা প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষায় যুক্ত হচ্ছে। স্বাস্থ্যসেবা সুবিধা সীমিত হলেও সচেতনতা বাড়ছে ধীরে ধীরে, বিশেষ করে মাতৃস্বাস্থ্য ও শিশুদের টিকাদান কর্মসূচির মাধ্যমে।
সাকাম নারীদের জীবনসংগ্রাম সহজ নয়। পাহাড়ে যোগাযোগ সমস্যা, শিক্ষার সুযোগের অভাব ও বাজার ব্যবস্থার দুর্বলতার কারণে তারা অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যে বসবাস করেন। তবু তারা কঠোর পরিশ্রম করে পরিবার, সমাজ এবং অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছেন।
সাকাম আদিবাসী নারীরা পাহাড়ের কোলেই গড়ে তুলেছেন এক আত্মনির্ভর জীবন। তাদের জীবন কষ্টের, কিন্তু তার মধ্যেই রয়েছে আত্মমর্যাদা, পরিশ্রম ও সংস্কৃতির অনন্য সৌন্দর্য। এ নারীরা প্রমাণ করেছেন, সুযোগ পেলে তারাও হতে পারেন সমাজ পরিবর্তনের চালিকাশক্তি।
