Logo
Logo
×

সুরঞ্জনা

মেধাবী মুখ

২৫ বিশ্ববিদ্যালয়ের অফার লেটার

Icon

আব্বাস হোসাইন আফতাব

প্রকাশ: ২৮ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

চারজন। সারা বিশ্বের মধ্যে মাত্র চারজন। আর সেই চারজনের একজন এখন চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার মেয়ে-মুমতাহিনা করিম মীম। এ সংখ্যাটাই বলে দেয়, মীম এক অনন্য নজির ও অনুপ্রেরণার নাম। মীমের বাড়ি রাঙ্গুনিয়া উপজেলার সরফভাটা ইউনিয়নের বড়বাড়ি এলাকায়। বাবা ব্যবসায়ী আব্দুল করিম চৌধুরী, মা ইয়াসমিন আকতার। ২০২১ সালে চট্টগ্রাম নগরের অংকুর সোসাইটি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং কাপাসগোলা মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন।

‘আমি একদিন এখানে পড়ব...’

কয়েক বছর আগের কথা। এক বিদেশ সফরে বাবার হাত ধরে ঘুরছিল ছোট্ট মীম। বিশ্বের বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয় দেখে বিস্ময়ে ভরে উঠেছিল চোখ। আর তখনই, নিজের মনে বলেছিল-‘আমি একদিন এখানে পড়ব।’ সেই স্বপ্ন আজ আর শুধু কল্পনা নয়-তা এখন বাস্তবতা। যুক্তরাষ্ট্রের স্বনামধন্য হেনড্রিক্স কলেজ থেকে পেয়েছে সে সর্বোচ্চ মর্যাদাপূর্ণ স্কলারশিপ। যার জন্য সারা বিশ্ব থেকে নির্বাচিত হয়েছে মাত্র চারজন শিক্ষার্থী। মীম তাদের একজন।

২৫টি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অফার!

মীমের সাফল্য এখানেই শেষ নয়। সে পেয়েছে বিশ্বের ২৫টি আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অফার। সব মিলিয়ে যেসব স্কলারশিপ অর্জন করেছে, তার আর্থিক মূল্য প্রায় ৩৬ কোটি টাকা। সে পড়তে যাচ্ছে কম্পিউটার সায়েন্স ও ডুয়েল ইঞ্জিনিয়ারিং। এ বয়সেই তার স্বপ্ন আর বাস্তবতার দূরত্ব প্রায় শূন্য।

যেখানে শুরু, সেখানেই অনুপ্রেরণা

মীমের গল্পটা ভাগ্যের নয়, নিরবচ্ছিন্ন পরিশ্রম আর লক্ষ্যভেদের গল্প। সপ্তম শ্রেণিতে থাকতেই নিজের হাতে তৈরি করে একটি ওয়েবসাইট। নবম শ্রেণিতে গড়ে তোলে ৬৫ সদস্যের প্রোগ্রামিং ক্লাব-সেখান থেকেই শুরু তার নেতৃত্বগুণ আর প্রযুক্তির প্রতি ভালোবাসার পরিচয়। পরবর্তী সময়ে জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অর্জন করে প্রথম স্থান। তবে সবচেয়ে ব্যতিক্রমী কাজ ছিল করোনা মহামারির সময়। যখন বিশ্ব থমকে ছিল, তখন নিজের ঘরে গড়ে তোলে একটি মিনি রোবটিক্স ল্যাব। সেখানেই বানিয়ে ফেলে একটি ফুড-সার্ভিং রোবট, নাম-‘কিবো’। এটি ছিল প্রযুক্তির পথে তার প্রথম বাস্তব পদক্ষেপ।

মেয়ে হয়ে এসব সম্ভব?

এ প্রশ্নটা আমাদের সমাজে প্রায়ই ওঠে। কিন্তু মীম প্রমাণ করেছে-মেয়ে হওয়া কোনো সীমাবদ্ধতা নয়। বরং, নিজের প্রতি বিশ্বাস আর চেষ্টাই পারে সব সীমা পেরিয়ে যেতে। রাত জেগে তৈরি হয় যে ভবিষ্যৎ, মীমের এ অর্জনের পেছনে আছে বছরের পর বছর অধ্যবসায়, রাত জেগে পড়া, নিরলস চর্চা এবং অনেক আত্মত্যাগ। তার সবচেয়ে বড় প্রেরণা ছিল পরিবার, বিশেষ করে মা-বাবা যাদের সাহস ও সমর্থন ছাড়া হয়তো আজকের মীম হওয়া সম্ভব হতো না। এ পথচলা সহজ ছিল না, তবুও মীম কখনো থেমে থাকেনি। সে বিশ্বাস রেখেছিল সেই ছোট্ট মেয়েটির ওপর, যে একদিন বলেছিল-‘আমি একদিন এখানে পড়ব।’

মীম মানেই অনুপ্রেরণা

আজ মুমতাহিনা করিম মীম শুধু নিজের নয়, রাঙ্গুনিয়া, চট্টগ্রাম-এমনকি গোটা দেশের মেয়েদের জন্য একটি জ্যোতির্ময় অনুপ্রেরণার নাম। তার কণ্ঠে প্রতিধ্বনিত হয় সাহসিকতার বার্তা-‘স্বপ্ন বড় হোক। চেষ্টা নিখুঁত হোক। আর নিজের ওপর বিশ্বাস অটুট থাকুক।’ একজন মীম মানে হাজারো মেয়ের সাহসের গল্প। সে দেখিয়ে দিয়েছে সফলতা শুধু শহরের জন্য নয়। গ্রামের ঘর, টিনের চাল, ছোট্ট স্কুল থেকেও বিশ্বজয় সম্ভব। শুধু প্রয়োজন স্বপ্ন দেখার সাহস আর সেই স্বপ্নকে ছুঁতে চাওয়ার দৃঢ় সংকল্প।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম