Logo
Logo
×

তারাঝিলমিল

দেশি নৃত্যশিল্পের হালহকিকত

Icon

সোহেল আহসান

প্রকাশ: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

দেশি নৃত্যশিল্পের হালহকিকত

সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের অন্যতম অংশ নৃত্য। প্রায় অনুষ্ঠানেই এটির ব্যবহার দেখা যায়।

সংস্কৃতিমনা পরিবারের অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের নৃত্যচর্চার দিকে উৎসাহিত করছেন অনেক আগে থেকেই। অতি সম্প্রতি অনৈতিক কাজের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে একজন প্রতিষ্ঠিত নৃত্যশিল্পীর আটক হওয়া এবং একই অপরাধের সঙ্গে আরও অনেক নৃত্যশিল্পীর নাম প্রকাশ হওয়ার পর এ সেক্টরের কাজ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠেছে।

এরই মধ্যে কেমন চলছে দেশের নৃত্যশিল্প? 

বাংলাদেশের জন্মের পর থেকেই সাংস্কৃতিকভাবে সমৃদ্ধ হওয়ার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কাজ শুরু করেছিলেন। সরকারিভাবে সংস্কৃতি অঙ্গনের জন্য তখন থেকেই পৃষ্ঠপোষকতা শুরু হয়। স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রের শিল্পীদের পাশাপাশি সে সময়ের সাংস্কৃতিক সংগঠকরাও এ অঙ্গনকে সমৃদ্ধ করার কাজ শুরু করেন। তখন থেকেই দেশে নৃত্যশিল্পের প্রসার ঘটতে থাকে। লায়লা হাসান, রাহিজা খানম ঝুনু ও শর্মিলা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো তারকা নৃত্যশিল্পীরা দেশ স্বাধীনের পর থেকেই এ অঙ্গনকে সমৃদ্ধ করার কাজ করে যাচ্ছেন। তাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে পরবর্তীকালে অনেকেই নৃত্যচর্চায় আত্মনিয়োগ করেছেন। এভাবে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে পৌঁছে গেছে নৃত্যচর্চা। যার ফলে দিনে দিনে একটি শক্তিশালী সাংস্কৃতিক অনুষঙ্গ হিসেবে নৃত্য পরিগণিত হচ্ছে।

বিশেষ করে একুশ শতকের শুরুতে তথ্যপ্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রসারের কারণে নৃত্যচর্চার সীমানা প্রসারিত হয়।

তরুণ প্রজন্মের অনেকেই তখন নৃত্যচর্চার দিকে ঝোঁকেন। এছাড়া সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার কারণেও এ ক্ষেত্রটি এগিয়েছে অনেক। তবে এ এগিয়ে যাওয়ার মধ্যেও বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে মাঝে মধ্যেই আলোচনায় জায়গা করে নেয় কিছু নৃত্যশিল্পী।

এই যেমন সম্প্রতি নারী পাচারের অভিযোগে আটক হয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত ইভান শাহরিয়ার সোহাগ নামের এক নৃত্যশিল্পী ও কোরিওগ্রাফার। তার গ্রেফতারের কারণে গত কয়েকদিন ধরে নৃত্যাঙ্গন নিয়ে নানা ধরনের কথা ভেসে বেড়াচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ গণমাধ্যমেও।

এ ছাড়া একই ঘটনায় সন্দেহভাজন হিসেবে আরও কয়েকজন প্রতিষ্ঠিত নৃত্যশিল্পীর নামও উঠে এসেছে। এতে করে মূলধারার নৃত্যশিল্পীদের অনেকেই নাখোশ বিতর্কিতদের প্রতি।

এসব বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের প্রতি ধিক্কার জানাচ্ছেন অনেকেই। এছাড়া কীভাবে এ থেকে সুরক্ষিত থাকা যায় এবং নৃত্যচর্চার উন্নতির জন্য মতামত জানিয়েছেন অনেকেই।

এ প্রসঙ্গে নৃত্যশিল্পী সাদিয়া ইসলাম মৌ বিতর্কিত কর্মকাণ্ড নিয়ে কোনো মন্তব্য না করলেও এ সেক্টরের উন্নতির জন্য আরও কর্মসূচি যেন হাতে নেয়া হয়- তার ওপর জোর দেয়ার অনুরোধ করেছেন। তিনি বলেন, ‘নতুন প্রজন্ম যেন নৃত্যচর্চার প্রতি আরও আগ্রহী হয়- সেদিকে নজর দিতে হবে এখন থেকে।’

ছোটবেলা থেকেই অভিনয় ও নৃত্যচর্চা করছেন তারিন। নৃত্যাঙ্গন নিয়ে সাম্প্রতিক আলোচনার বিষয়ে তিনিও উদ্বিগ্ন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘নৃত্য সংস্কৃতির খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ।

এটি মনের সংকীর্ণতা দূর করে। নাচের বিষয়টিকে আমি আত্মস্থ করার চেষ্টা করেছি। এটি নিয়ে ব্যবসা করা কিংবা অন্য ধরনের কোনো সুবিধা আদায় করার চিন্তাও আমরা করতাম না। এক্ষেত্রে পারিবারিক শিক্ষাটি খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। বিতর্ক সব জায়গাতেই থাকে। তবে তা যেন নিয়ন্ত্রণ করা যায় সহজে। সেটিই গুরুত্বপূর্র্ণ বিষয়।’

একই বিষয়ে তারকা নৃত্যশিল্পী শামীম আরা নিপা বলেন, ‘কোনো ব্যক্তির বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য সেই সেক্টর বিতর্কিত হতে পারে না। সব সেক্টরেই বিতর্ক থাকে। আমি সব সময় মনে করি, আমি একজন নৃত্যশিল্পী। আমি জেনে-বুঝে এ সেক্টরের সঙ্গে যুক্ত হয়েছি। যারা না জেনে-বুঝে এ সেক্টরে আসে, তাদের জন্য এ সমস্যা তৈরি হয়। এছাড়া দ্রুত অর্থবিত্ত কিংবা খ্যাতি পাওয়ার জন্যও অনেকে সহজ রাস্তা খোঁজেন। তাদের জন্যও সমস্যা তৈরি হয়।

আমি মনে করি, যারা সুস্থধারার মধ্যে থেকে কাজ করে খ্যাতি অর্জন করেন তারা হয়তো বাহবা পাচ্ছেন অনেক।

কিন্তু আর্থিক দিক থেকে তারা অতটা শক্তিশালী নন। তবে অনেক নৃত্যশিল্পী শোবিজে দ্রুত প্রতিষ্ঠা পাওয়ার রাস্তা খোঁজেন তাদের জন্যও অনেক কথা শুনতে হয় আমাদের।

এসব সমস্যা হয়তো হঠাৎ করেই নিরাময় করা সম্ভব নয়। অন্যদিকে এ সেক্টরটি এগিয়ে নেয়ার জন্য সরকারি ও বেসরকারিভাবে সহযোগিতা প্রয়োজন।’

নৃত্য তারকা শিবলী মোহাম্মদও নৃত্যাঙ্গনের চলমান অলোচনা-সমালোচনা প্রসঙ্গে নিজের অভিমত ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, ‘বিতর্কমুক্ত কোনো কিছুই থাকবে না। অনেক মানুষের সংশ্লিষ্টতা থাকলে বিতর্কও থাকবে। সব কিছুতেই বিতর্ক আছে। কাজ ও সততা একসঙ্গে থাকলে তার দ্বারা কোনো বিতর্ক তৈরির সম্ভাবনা নেই।

প্রত্যেক ব্যক্তি তার নিজের মতো করে চলবে- এটিই স্বাভাবিক। কিন্তু তার কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সমাজে দূষণ না ছড়ালেই হল। অন্যদিকে একজন নৃত্য শিক্ষার্থী কাকে গুরু মানবে- সেটি তার বিষয়। আমি অনেকদিন ধরেই নাচ শেখাই। বিশেষ করে আমি যখন বিদেশে শো করতে যাই তখন সেসব শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরাও নিশ্চিন্তে তাদের সন্তানদের আমার হাতে তুলে দেন।

আমিও তাদের বিশ্বাসের মর্যাদা দেয়ার চেষ্টা করি। ওদের সন্তানের মতোই মনে করি। এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ সততা দিয়ে নৃত্যচর্চার কাজটি করে যাচ্ছি। জীবনের বাকি সময়টিও যেন সেভাবেই পার করতে পারি- এ কামনাই করি।’

এসব তারকা নৃত্যশিল্পী ছাড়াও অনেকেই সাম্প্রতিক নৃত্যাঙ্গনের নেতিবাচক খবরে ক্ষোভ জানিয়েছেন।

নৃত্যশিল্পীর পরিচয়ে যেন কেউই কোনো ধরনের অনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে না পারেন, তার জন্য সংশ্লিষ্টদের সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।

নাদিয়া মৌ

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম