ইসরাইলে মাটির নিচে কারাগার
কোনো অভিযোগ ছাড়াই বন্দি ফিলিস্তিনিরা। নিয়মিত মারধর ও কুকুর দিয়ে আক্রমণ * ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামলার পর ইসরাইলের কট্টর ডানপন্থি জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন-গভির নির্দেশে আবার চালু * দীর্ঘদিন অন্ধকারে থাকায় মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন বন্দিরা। ভিটামিন ‘ডি’ উৎপাদন ক্ষমতাও নষ্ট হয়ে যায়।
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ০৯ নভেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ভূগর্ভস্থ রাকেফেত কারাগারের এক অংশ। ছবি: সংগৃহীত
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
মাটির নিচে বিস্তৃত এক অন্ধকার জগৎ রাকেফেত। ইসরাইলের গোপন ভূগর্ভস্থ কারাগার। যেখানে কখনো সূর্যের আলো পৌঁছায় না। বাতাস ঢোকার সরু কোনো পথও নেই। চারদিকে শুধুই অন্ধকার। একেবারে শ্বাসরুদ্ধকর পরিবেশ। আর এখানেই ডজনেরও বেশি ফিলিস্তিনিকে আটকে রেখেছে ইসরাইল। যাদের বেশির ভাগকেই কোনো অভিযোগ ছাড়াই আটক করা হয়েছে। রাকেফেতের বন্দিরা কখনো দিনের আলো দেখেন না, পর্যাপ্ত খাবার পান না-এমনকি তাদের পরিবার বা বাইরের জগতের কোনো খবরও জানতে পারেন না। ইসরাইলি সেনাদের অমানবিক নির্যাতনের শিকার হন তারা। দ্য গার্ডিয়ান।
আটক ব্যক্তিদের মধ্যে অন্তত দুজন বেসামরিক নাগরিক আছেন। একজন ৩৪ বছর বয়সি নার্স। যাকে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে হাসপাতালে কর্মরত অবস্থায় আটক করা হয়। অরেকজন ১৮ বছর বয়সি খাবার বিক্রেতা। ২০২৪ সালের অক্টোবরে ইসরাইলি চেকপয়েন্ট থেকে তাকে আটক করা হয়। অথচ তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই। উভয় বন্দির আইনজীবী হিসাবে কাজ করছে ইসরাইলের নির্যাতনবিরোধী জনসাধারণ কমিটি (পিসিএটিআই)। এ দুই ফিলিস্তিনিকে জানুয়ারি থেকে রাকেফেত কমপ্লেক্সে রাখা হয়েছে। আটকের পর থেকেই নিয়মিত মারধর ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন তারা। রাকেফেতের জানালাবিহীন কক্ষে তিন থেকে চারজনকে গাদাগাদি করে রাখা হয়। যেখানে বাতাস চলাচলের কোনো ব্যবস্থা নেই। তারা নিয়মিত মারধর ও কুকুর দিয়ে আক্রমণের শিকার হন। পর্যাপ্ত চিকিৎসা ও খাদ্য থেকেও বঞ্চিত। সম্প্রতি ইসরাইলের উচ্চ আদালত স্বীকার করেছেন, ফিলিস্তিনি বন্দিদের পর্যাপ্ত খাবার দেওয়া হচ্ছে না। বন্দিদের কখনো কখনো দুই দিন পর মাত্র পাঁচ মিনিটের জন্য বাইরে বের করা হয়। পিসিএটিআই-এর নির্বাহী পরিচালক তাল স্টেইনার এ পরিস্থিতিকে ‘ইচ্ছাকৃতভাবে নিপীড়ন’ বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, কাউকে মাসের পর মাস ভূগর্ভে অন্ধকারে আটকে রাখা নিপীড়নমূলক। দীর্ঘসময় অন্ধকারে থাকায় বন্দিদের মানসিক ভারসাম্য ও ঘুমের স্বাভাবিক ছন্দ নষ্ট হয় এবং শরীর ভিটামিন ‘ডি’ উৎপাদন করতে পারে না। এমনকি স্বাভাবিকভাবে শ্বাস নিতেও কষ্ট হয়। রাকেফেত কারাগারটি আশির দশকের শুরুতে ইসরাইলের সবচেয়ে বিপজ্জনক অপরাধীদের রাখার জন্য নির্মাণ করা হয়েছিল। কিন্তু কয়েক বছর পরই এটি ‘অমানবিক’ বলে বন্ধ করে দেওয়া হয়। তবে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামলার পর ইসরাইলের কট্টর ডানপন্থি জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন-গভির এটি আবার চালুর নির্দেশ দেন। এই কারাগারের সব কক্ষ, ব্যায়ামাগার ও আইনজীবীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ কক্ষ-সবই মাটির নিচে। ফলে বন্দিরা মাসের পর মাস কোনো প্রাকৃতিক আলো বা বাতাস ছাড়াই বেঁচে থাকেন। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ১৯৮৫ সালে বন্ধ হওয়ার সময় রাকেফেতে মাত্র ১৫ জন বন্দি ছিলেন। কিন্তু এখন সেখানে প্রায় ১০০ জনকে গাদাগাদি করে রাখা হয়েছে। ইসরাইলি কর্তৃপক্ষের দাবি, রাকেফেত কারাগারটি হামাস ও হিজবুল্লাহ যোদ্ধাদের রাখার জন্য পুনরায় খোলা হয়েছে। যুদ্ধ শুরুর প্রথমদিকে ইসরাইল গাজা থেকে ১ হাজার ৭০০ জন ফিলিস্তিনিকে আটক করে। তাদের আটকের পরিমাণ এতটাই ব্যাপক যে বর্তমানে যুদ্ধবিরতি চলাকালীন ফিলিস্তিনিদের গণমুক্তি দিলেও এখনো কমপক্ষে ১ হাজার ফিলিস্তিনি ইসরাইলের হাতে আটক রয়েছেন।
