Logo
Logo
×

দশ দিগন্ত

মামদানির একঘরের সংসারে আলিশান প্রাসাদের হাতছানি

Icon

যুগান্তর ডেস্ক

প্রকাশ: ১০ নভেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

মামদানির একঘরের সংসারে আলিশান প্রাসাদের হাতছানি

জোহরান মামদানির সম্ভাব্য নতুন বাসস্থান ‘গ্রেসি ম্যানশন’। ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সিটির নবনির্বাচিত মেয়র জোহরান মামদানি। এখনো অ্যাস্টোরিয়ার কুইনসে এক বেডরুমের ভাড়া করা অ্যাপার্টমেন্টেই থাকছেন তিনি। ছোট্ট রান্না ঘর, লিক হওয়া সিঙ্ক নিয়ে সদ্য-বিবাহিত জীবন কাটাচ্ছেন সেখানেই। তবে তার জন্য সামনেই অপেক্ষা করছে গ্রেসি ম্যানশনের আড়ম্বরপূর্ণ আলোকিত বলরুম, বিশাল লন, ঝাড়বাতির আলো, ফল ও সবজির বাগান এবং শহরের ওপরে ছড়িয়ে থাকা প্রাচীন ঐতিহ্যের দৃশ্য। চাইলেই এক বেডরুমের সংকীর্ণতা থেকে ১১ হাজার বর্গফুটের এই আলিশান প্রাসাদে উঠতে পারেন মামদানি। নিউইয়র্ক সিটির ২২৬ বছরের পুরোনো, ঐতিহ্যবাহী ও বিলাসবহুল মেয়রের সরকারি বাসভবন-গ্রেসি ম্যানশন। তবে সেখানে থাকবেন কি না সেই সিদ্ধান্তও এখনো নেননি মামদানি। নিউইয়র্কের অনেক মেয়রই অবশ্য সেখানে থাকেননি।

৮০০ বর্গফুটের ভাড়া বাড়ি

মামদানি ও তার স্ত্রী রামা দুওয়াজি বর্তমানে অ্যাস্টোরিয়ায় প্রায় ৮০০ বর্গফুট আয়তনের একটি এক বেডরুমের অ্যাপার্টমেন্টে বসবাস করেন। দ্য নিউইয়র্কার রেডিও আওয়ারে মামদানি বলেন, এই অ্যাপার্টমেন্টটি তাদের জন্য সামান্য ছোট। তাদের সাধারণ জীবনের গল্পও তুলে ধরেন মামদানি। তিনি জানান, কীভাবে একদিন সকালে সিঙ্ক ফুটো হয়ে যাওয়ায় মেঝে তোয়ালে দিয়ে মুছে দিতে হয়েছিল। ১৯২৯ সালে নির্মিত এই পুরোনো অ্যাপার্টমেন্ট ভবনে উষ্ণতা এবং গরম পানির ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া পুরোনো হলেও তাদের বাড়িতে লিফটেরও ব্যবস্থা আছে।

১১ হাজার বর্গফুটের প্রসাদ ‘গ্রেসি ম্যানশন’

অন্যদিকে গ্রেসি ম্যানশন হলো এক ভিন্ন জগৎ। বিলাসবহুল এক প্রাসাদ। যার আয়তন ১১ হাজার বর্গফুট। কার্ল শুর্জ পার্কের ওপরে এবং ইস্ট রিভারের ধারে অবস্থিত এ ভবনের নিরাপত্তা তীব্র। এর বারান্দা থেকেই দেখা যায় ইস্ট রিভারের মনোরম দৃশ্য। এ ভবনে নিরাপত্তা তীব্র, প্রবেশদ্বারে আছে মেজুজা। নিরাপত্তার ক্ষেত্রে গ্রেসি ম্যানশন এক দুর্ভেদ্য কেল্লা। উঁচু বেড়া, ক্যামেরা এবং বাইরে পুলিশ কর্মকর্তার পাহারা, নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কোনো কিছুরই কমতি নেই এখানে।

নীল ও সোনালি রঙের কার্পেট বিছানো সিঁড়ি

গ্রেসি ম্যানশনের নিচতলা অত্যন্ত সজ্জিত। সিঁড়িতে নীল-সোনালি কার্পেট বিছানো। ভবনটিতে আছে বিশাল বিনোদন কক্ষ, ডাইনিং হল, ফরাসি বাগানের নকশা করা ওয়ালপেপার। আরও আছে পূর্ণকালীন শেফ এবং ১৯৬৬ সালে নির্মিত একটি নাচঘরও। ম্যানশনের ভেতরে রয়েছে ঝলমলে আয়না, ঝাড়বাতি এবং কৃত্রিম মেহগনি কাঠের দরজা। বাইরের বিশাল লনে আপেল ও ডুমুর গাছের সারি। আছে সবজির বাগান। ম্যানশনের ওপরতলায় রয়েছে পাঁচটি শোবার ঘর।

পার্টি আয়োজনের জায়গা

পার্টির জন্যই তৈরি গ্রেসি ম্যানশন। মেয়র এরিক অ্যাডামস চলতি বছর এ ম্যানশনে আরব, ইকুয়েডোরিয়ান ও গায়ানা-আমেরিকানদের সম্মান জানিয়ে অভ্যর্থনা অনুষ্ঠান আয়োজন করেন। এছাড়া নওরোজ, উইমেন্স হিস্ট্রি মান্থ থেকে শুরু করে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের সম্মাননা, সব ধরনের আয়োজন হয় এ ম্যানশনেই। গ্রেসি ম্যানশনের এলাকা আপার ইস্ট সাইড দীর্ঘদিন ধরে নিউইয়র্কের ধনী ও অভিজাত এলাকার অন্যতম হিসাবে বিবেচিত হয়ে আসছে। এখানে বিশ্বের কিছু প্রসিদ্ধ জাদুঘর আছে। এ এলাকা বেশ শান্ত।

এখনো সিদ্ধান্তহীন মামদানি

তবে মামদানি এখনো নিশ্চিত নন যে তিনি গ্রেসি ম্যানশনে উঠবেন কি না। তিনি বলেছেন, ‘আমি এখনো ঠিক জানি না আমি কোথায় থাকব। তবে আমি বলতে পারি আমি কোথায় কাজ করব, আর সেটা হলো সিটি হল।’ অ্যাস্টোরিয়ায় থাকা তাকে সাধারণ নিউইয়র্কবাসীর সঙ্গে তার সংযোগ বজায় রাখার বার্তা দেয়। অন্যদিকে নিউইয়র্ক টাইমসের মতে, কঠোর নিরাপত্তা এবং বড় সভার আয়োজন করার সুবিধাই অধিকাংশ মেয়রকে শেষ পর্যন্ত গ্রেসি ম্যানশন বেছে নিতে প্ররোচিত করে। মামদানির মতো একজন তরুণ রাজনীতিবিদ, যিনি তার কাজকে বাসস্থান নির্বাচনের চেয়ে বেশি গুরুত্ব¡ দিচ্ছেন, শেষ পর্যন্ত নিরাপত্তার এই বাস্তবিক দিকটির কাছেই আত্মসমর্পণ করেন কি না, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

গ্রেসি ম্যানশনে বসবাস করা মেয়রদের অভিজ্ঞতা

গ্রেসি ম্যানশন নিয়ে আগের মেয়রদের অভিজ্ঞতা মিশ্র। ফিয়োরেলো লা গার্ডিয়া ছিলেন গ্রেসি ম্যানশনে বসবাস করা প্রথম মেয়র। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় মেয়রের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে নিউইয়র্ক পুনর্নির্মাণকারী শহর পরিকল্পক রবার্ট মোসেসের পরামর্শে তিনি অনিচ্ছা সত্ত্বেও তার ইস্ট হারলেমের অ্যাপার্টমেন্ট থেকে গ্রেসিতে স্থানান্তরিত হন। দান্তে ডি ব্লাসিও বলেন, ‘এ বাড়িতে থাকা যেন কিছুটা বিচ্ছিন্ন করে। নিউইয়র্কের বাস্তব জীবন থেকে দূরে নিয়ে যায়।’ আর বর্তমান মেয়র এরিক অ্যাডামস মজা করে বলেছেন, ম্যানশনে নাকি ভূত আছে। তবু নিরাপত্তা বিবেচনায় বেশির ভাগ সাবেক মেয়রই ম্যানশনে উঠেছেন এবং মামদানিকেও একই পরামর্শ দিয়েছেন।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম