নিউইয়র্কের প্রথম মুসলিম মেয়র মামদানিকে ঘিরে আরব বিশ্বে উচ্ছ্বাস
সামাজিক মাধ্যমে ‘সিরিয়ার দুলাভাই’
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ১১ নভেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
জোহরান মামদানি ও তার স্ত্রী রামা দুয়াজি। ছবি: সংগৃহীত
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
নিউইয়র্ক সিটির প্রথম মুসলিম মেয়র হিসাবে জোহরান মামদানির (৩৪) জয় শুধু যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতেই আলোড়ন তোলেনি, ছুঁয়ে গেছে আরব বিশ্বের হৃদয়ও। মামদানির বিজয়কে উৎসবের মতোই উদযাপন করছে ওই অঞ্চলের মুসলিম রাষ্ট্রগুলো। বিশেষ করে সিরিয়া-খানিক ভিন্ন আমেজেই যেন মেতে উঠেছে তারা। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিতে এক প্রকার তারকা বনে গেছেন মামদানি। তার স্ত্রী রামা দুয়াজি (২৮) সিরীয় বংশোদ্ভূত হওয়ায় দেশটির নাগরিকরা এখন রসিকতা করে মামদানিকে ‘দুলাভাই’ বলে সম্বোধন করছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ভাইরাল পোস্টগুলোতে-তিনি এখন পুরো সিরিয়ার দুলাভাই। এছাড়া ৪ নভেম্বর নির্বাচনে জয়ের পর থেকে ইরান, মিসর এবং কাতারেও উচ্ছ্বাসের ঢল নেমেছে। এপি।
ব্যক্তিগত পরিচয় হয়ে ওঠে রাজনৈতিক হাতিয়ার : মামদানির স্ত্রী রামা দুয়াজি। টেক্সাসে সিরিয়ান বাবা-মায়ের ঘরে জন্ম নেন। তার মাধ্যমে মামদানি এখন সিরিয়ানদের কাছে ‘ঘরের মানুষ’ হয়ে উঠেছেন। এছাড়া মুসলিম পরিচয় এবং ফিলিস্তিনপন্থি অবস্থান-এই দুটিও মামদানিকে আরব বিশ্বের কাছে আরও ঘনিষ্ঠ করে তুলেছে। দামেস্ক থেকে তেহরান, নাবলুস থেকে দোহা, সবখানেই মামদানির বিজয় উচ্ছ্বাসের সঙ্গে উদ্যাপিত হচ্ছে। বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ ইহুদি জনসংখ্যার শহরে এক মুসলমানের এই বিজয় পশ্চিমা দেশ থেকে মধ্যপ্রাচ্য পর্যন্ত আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
অর্থপূর্ণ এক জয় : জোহরান মামদানির জয় যেন নিউইয়র্কের বিবর্তনের প্রতিচ্ছবি। উগান্ডায় ভারতীয় বাবা-মায়ের ঘরে জন্ম এবং দক্ষিণ আফ্রিকায় বেড়ে ওঠা, এই বহুমাত্রিক শিকড় তাকে এমন এক বিশ্বনাগরিক পরিচয় দিয়েছে যা যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বের প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে। নির্বাচনি প্রচারে তিনি নিউইয়র্কের আরবি ভাষাভাষী ভোটারদের সঙ্গে সাবলীলভাবে আরবি ভাষায় কথা বলেছেন, ক্যামেরার সামনে পুদিনা চা পান করেছেন, এমনকি মজার ছলে নিজেকে বলেছেন, ‘দামেস্কের দুলাভাই’। এই সবই এখন আরব গণমাধ্যমে ভাইরাল-শুধু রসিকতা নয়, অনেকের কাছে এগুলোই আশার প্রতীক হয়ে উঠেছে। সিরিয়ার পণ্ডিত, প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব ও ধর্মীয় নেতা সবাই তার প্রশংসা করছেন। খ্যাতনামা ইসলামী চিন্তাবিদ আবদুল করিম বাক্কার বলেছেন, ‘মামদানি প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, শ্রমজীবী শ্রেণি ও দরিদ্রদের কণ্ঠস্বর।’ তবে এই প্রশংসার ভেতর দিয়েই নতুন বিতর্কও উঁকি দিচ্ছে, এটি কি সত্যিকারের সাংস্কৃতিক গর্ব, নাকি রাজনৈতিক প্রক্ষেপণ?
ধর্ম, রাজনীতি ও নিউইয়র্কের ভবিষ্যৎ : মামদানির উত্থান ঘটেছে এমন একসময়ে, যখন গভীর মেরুকরণের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতি। তার মুসলিম পরিচয় এবং ফিলিস্তিনের প্রতি প্রকাশ্য সমর্থন একদিকে তাকে মর্যাদা দিয়েছে, অন্যদিকে সমালোচনারও কেন্দ্রবিন্দুতেও এনেছে। নিউইয়র্ক যেখানে ইহুদি প্রভাব ঐতিহাসিকভাবে প্রবল, সেখানে এক মুসলিম মেয়রের জয় নানা প্রশ্ন তুলছে : তিনি কি পারবেন ইহুদি ঐতিহ্য ও মধ্যপ্রাচ্যের সংবেদনশীল ভারসাম্য রক্ষা করতে? আর তার আরব বিশ্বের সঙ্গে এই আবেগিক যোগ, এটি কি রাজনৈতিক শক্তি নাকি দুর্বলতা? রক্ষণশীল মিডিয়ায় এখন থেকেই গুঞ্জন উঠেছে, এটি কি যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতির ধীরে ধীরে ইসলামিকরণের ইঙ্গিত? যদিও এটিকে অনেকেই অতিরঞ্জন বলেছেন।
প্রতীক নাকি কৌশল : বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জোহরান মামদানির জয় প্রকৃত অগ্রগতির প্রতীক, নাকি এক সাংস্কৃতিক পরিবর্তনের ইঙ্গিত-তা নির্ভর করছে আপনি কার চোখে তাকে দেখছেন তার ওপর। যুক্তরাষ্ট্রে তাকে দেখা হচ্ছে সন্দেহের চোখে। অন্যদিকে আরব বিশ্বে তিনি আত্মবিশ্বাসী, গর্ব ও পরিচয়ের প্রতীক।
