কপ৩০’র পাশেই বিকল্প জলবায়ু সম্মেলন
বেলেমে পিপলস সামিট * ৬২ দেশের ৩০ হাজার মানুষ
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ১৪ নভেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
সংগৃহীত ছবি
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
প্রায় ২০০ দেশের প্রেসিডেন্ট -প্রধানমন্ত্রী- প্রতিনিধির উপস্থিতিতে জাঁকজমক আয়োজনে শুরু হয়েছে এবারের জলবায়ু সম্মেলন-কপ৩০। সোমবার থেকে (১০ নভেম্বর) শুরু হওয়া ব্রাজিলের বেলেম শহরের সম্মেলন কেন্দ্রে ধরিত্রী রক্ষার এ বৈশ্বিক অনুষ্ঠান চলবে ২১ নভেম্বর পর্যন্ত।
দ্বীপরাষ্ট্র ও উপকূলবর্তীদের কাছে নামমাত্র বা লোকদেখানো এ সম্মেলন বরাবরের চেয়ে এবার খানিক বেশিই বিতর্কিত। প্রথমত, বিশ্ব মোড়ল যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পই অনুপস্থিত। সুতরাং, ১১ দিনের সম্মেলনের শেষে জলবায়ু বাঁচাও তহবিলের কী হাল হবে তা শুরুতেই পরিষ্কার! তার ওপর আবার, পৃথিবীর ফুসফুস খ্যাত অ্যামাজনের এক লাখ গাছ কেটে জলবায়ু সম্মেলনে আসা নেতাদের চলাচলের রাজকীয় সড়ক তৈরি করেছে আয়োজক দেশ ব্রাজিল। ফলে যেটুক আস্থা ছিল-সেটিও শেষ। যার চাক্ষুস প্রমাণ হলো বেলোমে কপ৩০’র পাশেই ভূমিহীন কৃষক-আদিবাসীদের বিকল্প জলবায়ু সম্মেলন-পিপলস সামিট। ৬২ দেশের প্রায় ৩০ হাজার ভুক্তভোগী অংশ নিয়েছেন এই সম্মেলনে। জাতিসংঘের কপ৩০ ও বিশ্বনেতাদের মনভুলোনো আশার বাণীতে একেবারেই বিশ্বাস নেই তাদের। এপি।
বুধবার অ্যামাজনের গুয়াজারা উপসাগরের বুকে সকাল থেকেই নেমে পড়ে শত শত নৌকা। ছোট-বড় নানা আকারের এই নৌবহরে ছিল পরিবেশকর্মী, সামাজিক আন্দোলনের সংগঠক, আদিবাসী প্রতিনিধি, নারী ও তরুণদের কণ্ঠ। তারা কেউ গান গেয়ে, কেউ নেচে, কেউবা প্রার্থনায় নিমগ্ন হয়ে অংশ নেন এক অনন্য যাত্রায়। অনেকেই আবার যাত্রাপথেই ভাবতে থাকেন পৃথিবীর ভবিষ্যৎ। এই নৌবহর কেবল উৎসবই নয়, ছিল প্রতীকী প্রতিবাদও। যা কপ৩০-এর আনুষ্ঠানিক কক্ষের বাইরে গড়ে তুলেছে জলবায়ু ও মানবিক সংহতির বিকল্প মঞ্চ। এদিনেই বিকাল ৫টায় (স্থানীয় সময়) ব্রাজিলের বেলেমের গুয়ামা নদীর তীরে অবস্থিত ফেডারেল ইউনিভার্সিটি অব পারার (ইউএফপিএ) প্রাঙ্গণে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয় পিপলস সামিটের। ১,১০০’রও বেশি নাগরিক সমাজ ও সংগঠনের যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এটি। ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত চলবে এ সম্মেলন।
গুয়ারাজা উপসাগরে এদিন প্রায় ২০০টি নৌকা নিয়ে এই প্রতিবাদযাত্রায় অংশ নেন ৫,০০০-এরও বেশি মানুষ। যারা বিভিন্ন সামাজিক আন্দোলন ও তৃণমূল সংগঠনের প্রতিনিধিত্ব করছেন। পাঁচ দিনব্যাপী এ আয়োজনের উদ্বোধনী দিনে অ্যামাজন অঞ্চলসহ ব্রাজিলের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ১,৩০০ জন ভূমিহীন কৃষক বেলেমে মিছিল করে যোগ দেন নৌযাত্রায়। আন্দোলনের সংগঠন ‘ল্যান্ডলেস রুরাল ওয়ার্কার্স মুভমেন্টের সমন্বয়কারী বারবারা লৌরেইরো বলেন, ‘আমরা অ্যামাজনের নদীপথে আমাদের পতাকা স্থাপন করতে এসেছি। বিশেষ করে জনগণের ভূমি সংস্কারের পতাকা। কারণ ভূমি সংস্কার ছাড়া জলবায়ু ন্যায়বিচার সম্ভব নয়।’ এই আয়োজনের উদ্দেশ্য বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন সামাজিক আন্দোলন, সংগঠন ও তৃণমূল উদ্যোগের মানুষদের একত্রিত করে একটি বিকল্প সামাজিক ও পরিবেশগত দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরা। যা চলমান জাতিসংঘের ৩০তম জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলন (কপ৩০)-এর আলোচনার বাইরে হলেও, তার সঙ্গে গভীরভাবে সম্পর্কিত।
পিপলস সামিটে আলোচনার মূল বিষয়-জলবায়ু রক্ষা, খাদ্য সার্বভৌমত্ব, জ্বালানি রূপান্তর, জীবাশ্ম জ্বালানির বিরোধীতা, অংশগ্রহণমূলক শাসনব্যবস্থা, পরিবেশগত বর্ণবাদ, নগর অধিকার এবং লিঙ্গ, শ্রেণি ও জাতিগত বৈষম্যের প্রেক্ষাপটে জলবায়ু অভিযোজন ও প্রশমন। আয়োজকরা জানান, এই সামিটের লক্ষ্য হলো, ‘জনগণের শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করা এবং সমাজ-পরিবেশ, নারী-পুরুষ সমতা, পুঁজিবাদ ও উপনিবেশবাদবিরোধী আন্দোলনগুলোকে একত্রিত করে ভবিষ্যতের কল্যাণমুখী পথ তৈরি করা।’ এই সম্মেলনে হাজার হাজার কর্মী, নারী, যুবক-যুবতী, নদীপারের মানুষ, জেলে, আদিবাসী, কৃষক ও নানা জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা অংশ নিয়েছেন। উদ্বোধনী দিনেই নদীতে অনুষ্ঠিত নৌপ্যারেড ছিল আন্দোলনের প্রথম রাজনৈতিক কর্মসূচি। যেখানে শত শত নৌকা ভেসে চলেছিল জলবায়ু রক্ষার দাবিতে। ইকুয়েডরের পরিবেশকর্মী এবং ওয়ার্ল্ড ফোরাম অব ফিশার পিপলস-এর প্রতিনিধি লিডার গঙ্গোরা বলেন, ‘অ্যামাজনের এই জলধারা বয়ে আনছে সেসব কণ্ঠ, যাদের কথা বিশ্বকে শুনতে হবে, যারা জীবন, ভূমি ও জলবায়ুর পক্ষে লড়ছে।’ ইউএফপিএ প্রাঙ্গণে ১৬ তারিখ পর্যন্ত প্রতিদিন উন্মুক্ত আলোচনা ও গণসভা অনুষ্ঠিত হবে। যাতে সাধারণ মানুষও অংশ নিতে পারে। শিশু ও কিশোরদের জন্য আলাদা শিক্ষামূলক স্থান, কমিউনিটি ফেয়ার ও সাংস্কৃতিক প্রদর্শনীর ব্যবস্থা রয়েছে। প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত সংগীত, আলোচনা ও সংহতির কণ্ঠে মুখর থাকবে ইউএফপিএ-এর প্রাঙ্গণ।
