যুক্তরাষ্ট্র সফরে যুবরাজ
মহাজন ট্রাম্প কুঠিতে এলাহি কারবার
এক ট্রিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি * এফ-৩৫, পারমাণবিক জ্বালানি চুক্তি সই
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ২০ নভেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: সংগৃহীত
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
বাণিজ্য চুক্তি বা ব্যবসা বিস্তারে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যে পুরোদস্তুর ‘মহাজন’ হয়ে উঠেছেন চলতি বছরের মে মাসেই তা অবাক চোখে দেখেছে পুরো বিশ্ব। ১৩ মে’র ঐতিহাসিক ওই মধ্যপ্রাচ্য সফরে আরবের তিন ধনকুবের দেশকে বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র-বাণিজ্য চুক্তির জালে আটকে ফেলেন। সংযুক্ত আরব আমিরাতে ২০০ বিলিয়ন ডলার, কাতারে ১.২ ট্রিলিয়ন ডলারের চুক্তি ও সৌদি আরবের কাছ থেকে ৬০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের নিশ্চয়তা (চুক্তি) নিয়ে কুঠিতে (হোয়াইট হাউজের) ফেরেন। মাত্র তিন দিনের ঝটিকা সফরে হয়ে ওঠেন বিশ্ব ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ‘সওদাগর’।
মধ্যপ্রাচ্যে তিন বাণিজ্যে যাচ্ছেন-এই ঘোষণা দিয়েই সেবার হোয়াইট হাউজ থেকে বেরিয়েছিলেন ট্রাম্প। প্রাথমিক চুক্তির পুরো ফসল ঘরে তুলতে সেদিনই যুক্তরাষ্ট্র সফরের আমন্ত্রণ দিয়ে এসেছিলেন সৌদি আরবের যুবরাজ ও প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন সালমানকে। সেই টানেই মঙ্গলবার হোয়াইট হাউজে ছুটে আসেন যুবরাজ। সই করেন একাধিক বাণিজ্য চুক্তি। এএফপি, রয়টার্স, সিএনএন।
মার্কিন বাণিজ্যমহলে ইতোমধ্যেই ‘এক ট্রিলিয়ন ম্যান’ উপাধিতে শোরগোল ওঠা যুবরাজ সালমানকে নিয়ে রীতিমতো ‘এলাহি কারবার’ শুরু হয়ে গেছে ট্রাম্প প্রশাসনে। অভ্যর্থনা-আপ্যায়ন এবং চুক্তি স্বাক্ষরের বিরাট কর্মযজ্ঞে এদিন দম ফেলার ফুরসত ছিল না হোয়াইট হাউজে। সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে দেশ ছাড়ার আগেই এক ট্রিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি দেন যুবরাজ। মঙ্গলবার হোয়াইট হাউজের নজিরবিহীন অভ্যর্থনার পর ট্রাম্পের ওভাল অফিসে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বসেন যুবরাজ। তারপরই শুরু হয় নানাবিধ চুক্তিপর্ব। দুদেশের বেসামরিক পারমাণবিক জ্বালানি ও অত্যাধুনিক এফ-৩৫ মার্কিন যুদ্ধবিমান বিক্রির বিষয়ে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। তবে চুক্তির মোট অর্থের পরিমাণ প্রকাশ করা হয়নি এবং এতে অন্তর্ভুক্ত অন্যান্য প্রতিরক্ষা সামগ্রী তালিকাভুক্ত করা হয়নি। মঙ্গলবার রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছিল ৪৮টি এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান কেনা চুক্তি করবে সৌদি।
হোয়াইট হাউজের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দুই দেশ বেসামরিক পারমাণবিক জ্বালানিসংক্রান্ত একটি ‘যৌথ ঘোষণা’ অনুমোদন করেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘গুরত্বপূর্ণ’ প্রতিরক্ষা চুক্তির একটি প্যাকেজও অনুমোদন করেছেন। এছাড়াও ট্রাম্প-সালমান বৈঠকে সামরিক অস্ত্র চুক্তি, পারমাণবিক সহযোগিতা, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও যুক্তরাষ্ট্রে সৌদি আরবের বিনিয়োগ বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এর মধ্য দিয়ে কয়েক দশকের জন্য শতকোটি ডলারের পারমাণবিক জ্বালানি অংশীদারত্ব গড়ে তোলার ক্ষেত্রে আইনি ভিত্তি তৈরি হবে। এর আগে ধারণা করা হয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্রে সৌদি ৬০ হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগ করবে। কিন্তু এ চুক্তি বাড়িয়ে এক লাখ কোটি ডলার করা হচ্ছে। পাশাপাশি সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট সাম্প্রতিক বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা এবং কৌশলগত সহযোগিতা নিয়ে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা দিয়েছেন। উভয় নেতা মতপ্রকাশ করেছেন দুই দেশের সম্পর্ক বর্তমানে অত্যন্ত শক্তিশালী এবং নতুন এক যুগে প্রবেশ করছে। ক্রাউন প্রিন্স বলেন, সৌদি-মার্কিন সম্পর্ক দৃঢ় এবং আমরা দশকের পর দশক ধরে মার্কিন প্রেসিডেন্টদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে এসেছি।
আগে স্বাধীন ফিলিস্তিন, তারপর ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক : ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক গড়তে আব্রাহাম চুক্তিতে যোগ দিতে রাজি আছেন সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। তবে এর আগে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের স্পষ্ট পথ তৈরি করতে হবে বলে ট্রাম্পকে জানান তিনি। এছাড়া ইসরাইলি ও ফিলিস্তিনিরা শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে থাকবে বলেও প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন যুবরাজ। মঙ্গলবার হোয়াইট হাউজে ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে সৌদি যুবরাজ বলেন, ‘আমরা আব্রাহাম চুক্তির অংশ হতে চাই। তবে আমরা সঙ্গে নিশ্চিত হতে চাই, দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের ব্যাপারে আমরা একটি পরিষ্কার পথ নিশ্চিত করব।’
