Logo
Logo
×

দশ দিগন্ত

পূরণ হলো না ধরিত্রীর মনের বাসনা

চুক্তি ছাড়াই শেষ কপ৩০ সম্মেলন

Icon

যুগান্তর ডেস্ক

প্রকাশ: ২৪ নভেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

পূরণ হলো না ধরিত্রীর মনের বাসনা

কপ-৩০ এর সভাপতি আন্দ্রে কোরিয়া দো লাগো। ছবি: সংগৃহীত

পৃথিবীর বন-হাওয়া রক্ষার চৌকিদার জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলনে সেই একই পুনরাবৃত্তি! বিগত ২৯টি সম্মেলনের মতো এবারও ব্যর্থতার কুয়াশা! আকাশচুম্বি ফর্দ নিয়ে জাঁকজমক আড়ম্বরে সাজিয়ে তোলা এ বিশ্ব আয়োজনে এবারও অপূর্ণতার গ্লানি। পূরণ হয়নি দ্বীপরাষ্ট্র ও অ্যামাজনের আদিবাসীদের ‘চৌদ্দপুরুষের মনোবাসনা’।

আদিবাসীই শুধু নয়-শিল্প বিপ্লব, পুঁজিবাদ, নগরায়নে অতিষ্ঠ পুরো ধরিত্রীবাসীই হতাশ! শনিবার বড় কোনো চুক্তি ছাড়াই ব্যাপক হইচইয়ের পর চরম হতাশজনকভাবেই শেষ হয়েছে জলবায়ু সম্মেলন-কপ৩০। এএফপি, গার্ডিয়ান।

আশার আলো হাতে ছুটে আসা দেখা ছোট ছোট দ্বীপরাষ্ট্রগুলোও দিনশেষে সম্মেলনটিকে ‘অপূর্ণ’ বলে মন্তব্য করেছে। জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার রোধ এবং বন নিধন ঠেকানো-সম্মেলনের সবচেয়ে বড় দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েই কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। বিশ্বের প্রভাবশালী জীবাশ্ম জ্বালানি রপ্তানিকারী দেশগুলোর প্রবল বাধার মুখে ভেস্তে যায় আলোচনা। শেষমেষ দূষণের প্রভাব কমাতে দরিদ্র দেশগুলোকে অর্থ সহায়তা বিষয়ক একটি নামমাত্র চুক্তির মধ্য দিয়ে যবনিকা টানে এবারের জলবায়ু আসর।

চুক্তিটি হলো-বৈশ্বিক উষ্ণতার প্রভাব ঠেকাতে দরিদ্র রাষ্ট্রগুলোকে অর্থসহায়তা বৃদ্ধি। জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় ২০৩৫ সালের মধ্যে অর্থসহায়তা তিনগুণ বাড়ানোর বিষয়ে একমত হয় ধনী ও প্রভাবশালী রাষ্ট্রগুলো।

ব্রাজিলের অ্যামাজন রেইনফরেস্টের উঠোনে (বেলমে শহর) অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের কপ৩০ জলবায়ু সম্মেলনে প্রায় ২০০ দেশ স্বল্প পরিসরের একটি চুক্তি মেনে নিযেছে (সই করেছে)। অথচ সম্মেলন চলাকালীন আদিবাসী সম্প্রদায়গুলো বন ধ্বংসের বিরুদ্ধে সরব বিক্ষোভ করে। তাদের জমিতে কৃষি, তেল অনুসন্ধান, অবৈধ খনন ও কাঠ কাটার প্রকল্প বন্ধের দাবি জানায়। এ তাদের চাওয়া ছিল-শুধু আর্থিক সহায়তা নয়, ভূমি এবং জীবিকা রক্ষায় কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ। শেষ পর্যন্ত এ বিষয়ে কার্যকরী কোনো সমাধান আসেনি। নামমাত্র আলোচনায়ই শেষ হয়েছে কপ-৩০ আসর।

দুই সপ্তাহজুড়ে সম্মেলনে দীর্ঘ বৈঠকের পরও তেল, কয়লা ও গ্যাসের মতো জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার হ্রাস নিয়ে সরাসরি সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি দেশগুলো। এ বিষয়ে যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নের পাশাপাশি ভুক্তভোগী ৮০টির বেশি দেশ জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমানো ইস্যুতে জোর দাবি জানায়। তবে বেঁকে বসে সৌদি আরব ও রাশিয়ার মতো দেশ। নিজেদের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে জীবাশ্ম জ্বালানি উত্তোলন ও রপ্তানি বন্ধে রাজি নয় তারা। শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোর ভিন্নমতের কারণে ব্যাপক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয় সম্মেলন ঘিরে।

সম্মেলনের প্রেসিডেন্ট আন্দ্রে করিয়া দো লাগো বলেন, ‘এবারের সম্মেলন থেকে আরও বড় বড় লক্ষ্য অর্জনের আকাঙ্ক্ষা ছিল অনেকের। অনেকেই আশা করেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে শক্ত হাতে রুখে দাঁড়ানো সম্ভব হবে। আমি তাদের হতাশ করতে চাই না।’

এদিকে সম্মেলনের এমন সিদ্ধান্তে চটেছে কলম্বিয়া, পানামা, উরুগুয়ের মতো কয়েকটি দেশ। প্রশ্ন উঠেছে সম্মেলনের নেতৃত্ব নিয়েও। জানা যায়, শেষ দিনের চূড়ান্ত সভায় চুক্তিবিষয়ক কোনোরকম আপত্তি জানানোর সুযোগই দেওয়া হয়নি বিপক্ষে অবস্থানকারী কোনো দেশকে। অন্যদিকে প্রথমবারের মতো জলবায়ু সম্মেলনে অংশ নেয়নি যুক্তরাষ্ট্র। পাঠায়নি কোনো প্রতিনিধিও। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি কার্বন নিঃসরণকারী রাষ্ট্রের অনুপস্থিতিও প্রভাব ফেলেছে এবারের সম্মেলনের সিদ্ধান্তে, মনে করছেন অনেকে।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম