নোবেলের টানে ‘প্রাণবাজি’ মাচাদোর
জেলে নৌকায় অন্ধকার-উত্তাল সাগর পেরিয়ে দেশত্যাগ
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
‘দেশ ছাড়লেই আর দেশে ফিরতে পারবেন না। নাম উঠবে পলাতক আসামির খাতায়।’ পশ্চিমাবিরোধী রাষ্ট্র ভেনিজুয়েলার ক্ষমতাসীন মাদুরো সরকারের এমন শক্ত পদক্ষেপের কারণেই অক্টোবরের নোবেল পুরস্কার ঘোষণার অনুষ্ঠানে থাকতে পারেননি শান্তিতে নোবেল জয়ী ভেনিজুয়েলার মার্কিনপন্থি নেত্রী মারিয়া কোরিনা মাচাদো (৫৮)। সবাই এক রকম ধরেই নিয়েছিলেন পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানেও (১০ ডিসেম্বর) আসতে পারবেন না মাচাদো। কিন্তু সবার বিশ্বাস ভুল প্রমাণ করে বুধবার ঠিকই পৌঁছে যান নরওয়ের রাজধানী অসলোতে। তবে তার পক্ষ থেকে মেয়া আনা কোরিনা সোসা পুরস্কার নেওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরে! সময়মতো আসতে না পারার আসল কারণটা কিন্তু সত্যিই ভয়ংকর! গা শিউরে ওঠা এক রুদ্ধশ্বাস সমুদ্রযাত্রার কাহিনি! নিজের হাতে নেবেন নোবেল পুরস্কার-সেই টানেই রীতিমতো প্রাণবাজি রেখে উত্তাল সাগর পেরিয়ে ভেনিজুয়েলা থেকে পালিয়েছেন মাচাদো। এএফপি।
তার দেশত্যাগের অভিযান ছিল অন্ধকার, ভয়াবহ ও স্যাঁতসেঁতে এক সমুদ্রযাত্রা। সেখানে কোনো আলো ছিল না, ছিল শুধু উত্তাল ঢেউ। শুক্রবার নিজের এই গোপন যাত্রা নিয়ে ওসলোতে সাংবাদিকদের সামনে মাচাদো বলেন, ‘কিছু কিছু মুর্হূতে মনে হয়েছে আমার জীবন সত্যিই ঝুঁকিতে আছে। এটি একটি অত্যন্ত আধ্যাত্মিক মুহূর্ত। আমি জীবনটাকে সৃষ্টিকর্তার হাতে ছেড়ে দিয়েছিলাম। যা হওয়ার তা হবে।’
এর আগে মাচাদোকে ভেনিজুয়েলা থেকে বের করে আনার অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক ব্রায়ান স্টার্ন নাটকীয় সেই রাতের বর্ণনা দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার স্টার্ন বলেন, ‘এটি ছিল অত্যন্ত বিপজ্জনক ও ভয়ানক। অন্ধকার ও উত্তাল সমুদ্রযাত্রা ঝুঁকিপূর্ণ ছিল।’ এছাড়াও তিনি জানান, পুরো মিশনটি পরিকল্পনা করা হয়েছিল ৪ দিন আগে। অজ্ঞাত স্থান থেকে মাচাদো প্রথমে জেলেপাড়ায় আসেন। এরপর সেখানে জেলেদের মাছধরা ছোট নৌকায় করে তিনি যাত্রা শুরু করেন। ১৩-১৪ ঘণ্টার এক দীর্ঘ যাত্রা করে একটি গোপন স্থানে পৌঁছান। এরপর সেখান থেকে তিনি প্লেনে ওঠেন। স্টার্ন আরও বলেন, সমুদ্রের অবস্থা আমাদের জন্য আদর্শ ছিল, কিন্তু সাধারণভাবে এমন পানি কেউ চাইবে না... ঢেউ যত উঁচু হচ্ছিল রাডার দেখাটা তত কঠিন হচ্ছিল। তিনি বলেন, পুরো মিশনটা ঘটেছে গভীর রাতে। চাঁদের আলো ছিল খুব কম, ছিল মেঘের আচ্ছাদন আর আমাদের নৌকাগুলোতে কোনো আলো না থাকা খালি চোখে দেখা কঠিন ছিল। তবে সেই কঠোর যাত্রা শেষে মাচাদো ছিলেন ‘খুব খুশি, খুব উচ্ছ্বসিত এবং খুব ক্লান্ত’। তিনি জানান, তার দলের প্রায় দুই ডজন লোক সরাসরি এ অভিযানে যুক্ত ছিলেন। আর এই অভিযান পুরোটাই চলেছে দাতাদের অর্থে, সরকারি অর্থে নয়। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের আরেক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লুকিয়ে থাকা কারাকাসের উপশহর থেকে বের হওয়ার সময় মাচাদো মাথায় উইগ পরে ছদ্মবেশ নেন। স্টার্ন বলেন, ‘পুরো অভিযানটি অর্থায়ন করেছে ‘কয়েকজন উদার দাতা’, যাদের কেউই যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি কর্মকর্তা নন। মার্কিন সরকারও এই অভিযানে এক পয়সা দেয়নি, অন্তত আমার জানামতে।’ তবে স্থলভাগের অভিযানের বিস্তারিত জানাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন স্টার্ন। কারণ ভবিষ্যতে তার সংস্থাটির ভেনিজুয়েলায় আরও কাজ থাকতে পারে। উল্লেখ্য-মাচাদোকে নোবেল দেওয়ার ঘোষণা করা হয় চলতি বছর ১০ অক্টোবর। অসলোর সেই অনুষ্ঠানেও যেতে পারেননি তিনি। সে সময় অবশ্য দাবি করেন-মাদুরো সরকার তার নরওয়ে যাত্রা ঠেকাতে যথাসাধ্য চেষ্টা করছে। ২০২৪ সালে ভেনিজুয়েলায় বিতর্কিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে নিকোলা মাদুরোর জয়ের পর দেশটির বিরোধীদলীয় নেতা মাচাদো অনেকটা আত্মগোপনে চলে যান। তার ওপর ২০১৪ সাল থেকে ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি আছে। নির্বাচনের পর মাচাদোকে আর প্রকাশ্যে খুব একটা দেখা যায়নি। তিনি গোপনে চলাফেরা করতেন। সর্বশেষ তাকে প্রকাশ্যে দেখা যায় জানুয়ারিতে।
