গাজায় তীব্র শীত, প্রচণ্ড ঝড়
বন্যা বিপর্যয়ের মুখে রয়েছে মোট জনসংখ্যার ৪০ শতাংশ
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় একদিকে ঝড় বায়রনের তাণ্ডব অন্যদিকে ইসরাইলি বাহিনীর বর্বরতা। দুইয়ের আঘাতে বিপন্ন হয়ে পড়েছে বাস্তুচ্যুত মানুষের জীবন। হাড় কাঁপানো তীব্র শীত এবং ঝড়ের প্রভাবে সৃষ্ট ভারি বৃষ্টিপাতে প্লাবিত হয়েছে উপত্যকার হাজার হাজার তাঁবু। দুই মিলে চরম মানবিক সংকটে পড়েছে অসহায় গাজাবাসী। এরপরও থেমে নেই ইসরাইলি বাহিনীর হামলা। শক্রবার ইয়েলো লাইন অতিক্রমের অভিযোগে উত্তরাঞ্চলীয় শহর জাবালিয়ায় এক নারীকে গুলি করে হত্যা করেছে। আল-জাজিরা।
তীব্র শীত এবং ঝড়ের প্রভাবে সৃষ্ট বৃষ্টিপাতে উপত্যকার অনেক রাস্তাঘাট ও ত্রাণশিবিরের তাঁবু প্লাবিত হয়েছে। রাতভর বৃষ্টি আর ঠান্ডায় জর্জরিত হয়ে দুই শিশুসহ ১২ জন তিনজন ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন। ঝড়ে কয়েকটি ভবনও ধসে পড়েছে। অস্থায়ী তাঁবুগুলো পর্যাপ্ত সুরক্ষা দিতে না পারায় বাসিন্দারা আশ্রয় নিচ্ছেন ক্ষতিগ্রস্ত ভবনগুলোতে। জাতিসংঘ সতর্ক করেছে, গাজায় বন্যা বিপর্যয়ের মুখে রয়েছে মোট জনসংখ্যার ৪০ শতাংশ। ৭৬০টির বেশি শরণার্থী শিবির সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। এছাড়াও বন্যার ঝুঁকিতে রয়েছে সাড়ে আট লাখেরও বেশি ফিলিস্তিনি। অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত এবং পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় পরিস্থিতি দ্রুত খারাপের দিকে যেতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এমন পরিস্থিতিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের গাজা পরিকল্পনার দ্বিতীয় ধাপ নিয়ে হোয়াইট হাউজ নীরবে প্রস্তুতি চালাচ্ছে বলে জানা গেছে, যদিও এর কার্যকরের নির্দিষ্ট কোনো সময়সীমা জানানো হয়নি। অন্যদিকে হামাস যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপ নিয়ে নিজস্ব পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে। সশস্ত্র গোষ্ঠীটি জানায়,
নিরস্ত্রীকরণ ও সামরিক অস্ত্রভাণ্ডার নিয়ে কীভাবে এগোবে সে বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে নিজেদের পরিকল্পনা বোঝানোর চেষ্টা চলছে। তারা ফিলিস্তিনিদের পুনর্গঠন কার্যক্রম শুরু করার সুযোগ দিতে মধ্যস্থতাকারীসহ অন্য দেশগুলোকে ইসরাইলের ওপর চাপ সৃষ্টির আহ্বান জানিয়েছে। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরাইলের হামলায় এখন পর্যন্ত ৭০ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। যাদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু। আহত হয়েছেন ১ লাখ ৭১ হাজারেরও বেশি মানুষ।
মানবাধিকার সনদ ‘মারাত্মকভাবে’ ক্ষতিগ্রস্ত : তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোগান বলেছেন, গাজায় চলমান গণহত্যায় ৭০ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু প্রমাণ করে যে, মানবাধিকার সনদে উল্লেখিত মূল্যবোধগুলো ‘মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত’ হয়েছে। বুধবার মানবাধিকার দিবস উপলক্ষ্যে দেওয়া এক বিবৃতিতে এ কথা বলেন তিনি। আরও বলেন, ‘দুর্ভাগ্যজনকভাবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সব প্রচেষ্টা সত্ত্বেও গাজা ও অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে নির্যাতন এখনো অব্যাহত আছে।’ জাতিসংঘের সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণাপত্র গৃহীত হওয়ার ৭৭তম বার্ষিকীতে তুরস্কের জনগণ এবং মানবাধিকার পরিবারের সব সদস্যকে শুভেচ্ছা জানিয়ে এরদোগান বলেন, ‘মানবজাতির যৌথ মূল্যবোধের প্রতিফলন এই গুরুত্বপূর্ণ দলিল আজও জন্মগত অধিকারের সুরক্ষা নিশ্চিতকারী বৈশ্বিক অঙ্গীকার হিসাবে তার মর্যাদা ধরে রেখেছে।’ তবে তিনি এও উল্লেখ করেন, ‘বিশ্বজুড়ে বহু স্থানে এই ঘোষণাপত্রে উল্লেখিত নীতিমালা লঙ্ঘিত হচ্ছে, আর শান্তি ও ন্যায়ের মতো ধারণাগুলো ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়ছে।’ তুরস্কের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘গাজা আজ এক বিরাট ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। এটিকে যত দ্রুত সম্ভব পুনর্গঠন করা মানবজাতির যৌথ দায়িত্ব।’
