Logo
Logo
×

দশ দিগন্ত

পৃথিবীর সব দুর্ভোগ একসঙ্গে গাজায়

তীব্র ঝড়বৃষ্টি, হাড় কাঁপানো শীত, প্রচণ্ড ক্ষুধা বেকারত্ব, স্বজন হারানোর শোক, মৃত্যু-আতঙ্ক : চরম আবহাওয়ায় ১৩ জনের মৃত্যু * ৪৫০ জনের বেশি মানুষ মরেছে ক্ষুধায় * দু’বছরে নিহত ৭০ হাজার ছাড়িয়েছে * যুদ্ধবিরতির পর নিহত ৪০০ জন

Icon

যুগান্তর ডেস্ক

প্রকাশ: ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

মৃত্যু আতঙ্ক যেন পিছু ছাড়ছে না গাজায়। হয় ইসরাইলি বোমায়, নয়তো হাড় কাঁপানো শীতে। কখনো আবার ক্ষুধায়! তার ওপর রয়েছে স্বজন হারানোর শোক। প্রতিদিনের হামলা-পায়ে পায়ে মৃত্যু আতঙ্ক! পৃথিবীর সব দুর্ভোগ যেন একসঙ্গে ভর করেছে গাজায়! টানা দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে ইসরাইলি আগ্রাসনে গাজা এখন বিধ্বস্ত জনপদ। মধ্যপ্রাচ্যের বুকে এক ধ্বংসস্তূপের কঙ্কাল! যুদ্ধবিরতি চললেও তা নামেমাত্র। বর্বর সেনাদের হামলা চলছে এখনো। থামার কোনো নাম নেই। পর্যাপ্ত খাবার নেই। আয়-উপার্জনের উৎস নেই। ফলে বেড়েই চলেছে বেকারত্বের সংখ্যা। অবিরত হামলায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে ঘর-বাড়ি, মাথা গোঁজার শক্ত কোনো ঠাঁই নেই। আশ্রয় বলতে আছে কেবল ছেঁড়া-ফাটা তাঁবু। ঝড়ের তাণ্ডবে কখনো আবার তলিয়ে যাচ্ছে সেই আশ্রয়টুকুও। তীব্র শীতে গরম পোশাক ছাড়াই পানিতে তলিয়ে যাওয়া সেই তাঁবুতেই থাকতে বাধ্য হচ্ছেন বাসিন্দারা। শীতের প্রকোপ থেকে বাঁচতে অনেকেই আবার ছুটছেন এক ধ্বংসস্তূপ থেকে আরেক ধ্বংসস্তূপে। এরই মধ্যে ঠান্ডায় জমে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে দুই শিশু। আলজাজিরা।

ফ্যাকাশে মুখে আর চোখে পানি নিয়ে তাঁবুর মধ্যে বসে আছেন ইমান আবু আল-খাইর। ক’দিন আগেই মারা গেছে তার ছোট্ট শিশু মোহাম্মদ খলিল আবু আল-খাইর। মঙ্গলবার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, শিশু মোহাম্মদকে সোমবার প্রচণ্ড ঠান্ডাজনিত জটিলতা নিয়ে হাসপাতালে নেওয়া হয়। শীতের তীব্রতা ও প্রয়োজনীয় আশ্রয়-সামগ্রীর অভাবে তার অবস্থার দ্রুত অবনতি ঘটে। মারাত্মক হাইপোথার্মিয়ায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় মাত্র দুই সপ্তাহ বয়সী শিশু মোহাম্মদ। একইভাবে দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসের ২৯ দিন বয়সী শিশু সাইদ আসাদ আবেদিনের মৃত্যু হয়। শুক্রবার এ খবর জানিয়েছে দাতব্য সংস্থা ডক্টারস উইদাউট বর্ডার্স (এমএসএফ)। সংস্থাটি আরও জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত চরম আবহাওয়ার কারণে মৃতের সংখ্যা ১৩ জনে দাঁড়িয়েছে। নাসের মেডিকেল কমপ্লেক্সের শিশু বিভাগের প্রধান আহমেদ আল-ফাররা বলেছেন, শিশুরা যদি তাপ, মোবাইল হোম বা উপযুক্ত আশ্রয় না পায়, তবে মৃত্যু বাড়তে পারে।

ঝড়-বৃষ্টিতে ৫৫ হাজার ফিলিস্তিনি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত : গাজা শহর থেকে আল জাজিরার প্রতিবেদক তারেক আবু আজ্জুম জানান, গাজায় ইসরাইলের অবিরাম হামলার ফলে সেখানকার ন্যূনতম সুরক্ষা ব্যবস্থাও ভেঙে পড়েছে। বহু পরিবার ভেজা মাটির ওপর তাঁবুতে বাস করছে। যেখানে গরমের ব্যবস্থা নেই। বিদ্যুৎ কিংবা পর্যাপ্ত পোশাকও নেই। দুই বছর ধরে চলা সংঘাতে গাজার ৮০ শতাংশের বেশি অবকাঠামো ধ্বংস হয়েছে। এতে শত শত হাজার পরিবার অস্থায়ী তাঁবুতে গাদাগাদি করে ঠাঁই নিতে বাধ্য হয়েছেন। সম্প্রতি প্রবল ঝড়, বৃষ্টি ও দমকা হাওয়ায় তাঁবুগুলোও প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত ভবন ধসে কমপক্ষে ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। জাতিসংঘ জানিয়েছে, সাম্প্রতিক ভারী বৃষ্টি ও ঝড়ে গাজা উপত্যকায় প্রায় ৫৫ হাজার ফিলিস্তিনি পরিবার মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

খাদ্য সংকটে ১৬ লাখ মানুষ : ভয়াবহ খাদ্য সংকটেও ভুগছে গাজা। উপত্যকাটিতে দুর্ভিক্ষ এড়ানো সম্ভব হলেও সেখানকার মানবিক পরিস্থিতি এখনও অত্যন্ত নাজুক এবং সংঘাতপূর্ণ বলে সতর্ক করেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস। শুক্রবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, গাজার ১৬ লাখ মানুষ বা মোট জনসংখ্যার ৭৫ শতাংশেরও বেশি মানুষ এখনো চরম খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা এবং অপুষ্টির গুরুত্বর ঝুঁকিতে রয়েছে। ইতিমধ্যেই ৪৫০ জনের বেশি মানুষ ক্ষুধায় মারা গেছেন বলে জানিয়েছে আনাদোলু। যার মধ্যে ১৫০ জন শিশু।

বিয়ের আসরে ইসরাইলি হামলা, নিহত ৬ : যুদ্ধবিরতি চললেও হামলা থামেনি গাজায়। যুক্তরাষ্ট্রে যুদ্ধবিরতির পরবর্তী ধাপ নিয়ে মধ্যস্থতাকারী দেশগুলোর আলোচনার মধ্যেই গাজার এক বিয়ের আসরে হামলা চালিয়েছে বর্বর ইসরাইলি সেনারা। শুক্রবার গাজা সিটির তুফাহ এলাকায় একটি স্কুলে আশ্রয় নেওয়া বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের বিয়ের আসরে এই হামলা চালায় তারা। আল জাজিরা জানিয়েছে, এই নৃশংস হামলায় বর-কনে পক্ষের অন্তত ৬ জন ঘটনাস্থলেই নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন আরও বেশ কয়েকজন। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরাইলি হামলায় ৭০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১ লাখ ৭০ হাজারের বেশি মানুষ। ১০ অক্টোবর যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও, চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করে হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরাইলি বাহিনী। যুদ্ধবিরতি কার্যকরের পর থেকে এখন পর্যন্ত হামলায় নতুন করে কমপক্ষে ৪০০ জন নিহত হয়েছেন।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম