Logo
Logo
×

দশ দিগন্ত

শরণার্থী থেকে হামাস প্রধান হানিয়া

২০১৭ সালে হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর প্রধান নির্বাচিত হন

Icon

যুগান্তর ডেস্ক

প্রকাশ: ০১ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে ইসমাইল হানিয়া এক গুরুত্বপূর্ণ নাম। দীর্ঘ সময় ধরে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের প্রধান হিসাবে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। হানিয়া ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতা আন্দোলনে যে অবদান রেখেছেন তা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। তার আকস্মিক মৃত্যুতে শোকের ছায়া পড়েছে বিশ্বজুড়ে। আলজাজিরা, ফার্স্টপোস্ট।

১৯৬২ সালের ২৯ জানুয়ারি ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার আলশাতি শরণার্থী শিবিরে জন্মগ্রহণ করেন হানিয়া। গত কয়েক দশক ধরে ইসরাইল ফিলিস্তিন সংঘর্ষের কেন্দ্রবিন্দু এই গাজায়ই বেড়ে ওঠেন তিনি। তার বেড়ে ওঠার পথ মোটেও কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না। বহু কষ্টের পথ পেরিয়ে তিনি হয়ে উঠেন হামাসের শীর্ষ নেতা। ইউনাইটেড নেশনস রিলিফ অ্যান্ড ওয়ার্কস এজেন্সি ফর প্যালেস্টাইন রিফিউজিস ইন দ্য নিয়ার ইস্ট (ইউএনআরডব্লিউএ) পরিচালিত একটি স্কুলে শিক্ষাজীবন শুরু হয়েছিল হানিয়ার। পরে তিনি গাজার ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আরবি সাহিত্য বিষয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেন। ওই সময়ই তিনি জড়িয়ে পড়েন হামাসের সঙ্গে। একই সময়ে তার সম্পর্ক ছিল মিশরভিত্তিক সংগঠন মুসলিম ব্রাদারহুডের সঙ্গেও। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী থাকার সময় হানিয়া মুসলিম ব্রাদারহুডের প্রতিনিধিত্বকারী ছাত্র পরিষদের প্রধান হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের উত্থানের সময় থেকেই হামাসের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে ছিলেন তিনি। ১৯৮০-এর দশকের শেষের দিকে প্রতিষ্ঠিত হামাসের লক্ষ্য ছিল ইসরাইলি দখলদারিত্ব প্রতিহত করা এবং ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে প্রতিষ্ঠা করা। ৯০-এর দশকের শুরু থেকেই হামাসের নানা কার্যক্রমের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত হয়ে পড়েন হানিয়া। ২০০৬ সালে ফিলিস্তিনের গণতান্ত্রিক নির্বাচনে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছিলেন। পরে হামাস ও তার প্রতিদ্বন্দ্বী সংগঠন ফাতাহের মধ্যে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব শুরু হলে ২০০৭ সালে ফাতাহকে গাজা থেকে বিতাড়িত করা হয়। এর ফলে পশ্চিম তীর ও গাজা বিভক্ত হয়ে পড়ে। একই কারণে হামাস সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে আন্তর্জাতিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিলেন হানিয়া। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হিমশিম খেতে হয়েছে তাকে। এরপর ক্রমেই সাংগঠনিক দক্ষতা ও নেতৃত্বগুণে হামাসের শীর্ষ নেতা হয়ে ওঠেন। ২০১৭ সালে তিনি হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর প্রধান নির্বাচিত হন। আর ২০২১ সাল থেকে হামাস প্রধানের দায়িত্ব সামলেছেন তিনি।

গত কয়েক বছর ধরেই ফাতাহর সঙ্গে মধ্যস্থতা করে হামাস ও ফাতাহকে আবাও একীভূত করার চেষ্টা করছিলেন হানিয়া। তিনি এই দুই সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে মধ্যস্থতা করার চেষ্টা করেছিলেন। শেষ সময়ে এসে তিনি উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন, হামাস ও ফাতাহ একসঙ্গে থাকলে তারা রাজনৈতিকভাবে আরও শক্তিশালী হবেন এবং স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে ফিলিস্তিন প্রতিষ্ঠাতা করা সহজ হবে। এই লক্ষ্যে ২০২১ সালে ফাতাহর সঙ্গে একটি ‘পুনর্মিলন চুক্তি’ স্বাক্ষরও করেছিলেন হানিয়া। ফিলিস্তিনের রাজনীতিতে নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও প্রতিরোধ ও সংকল্পের দৃঢ় প্রতীক হয়ে আছেন হানিয়া। ইসরাইলের মতো অত্যাধুনিক সশস্ত্র বাহিনীর অব্যাহত হামলার মধ্যেও হামাস এখন পর্যন্ত যে সাফল্য দেখিয়েছে তার জন্য কৃতিত্ব দেওয়া হয় ইসমাইল হানিয়াকে। তিনি প্রতিরোধযুদ্ধের পাশাপাশি ইসরাইলের সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টাও চালিয়ে গেছেন। এতে তার রাজনৈতিক প্রজ্ঞাই ফুটে ওঠে।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম